তানিয়া’র ব্রান্ড আই
“এক সময় আমি ব্যাংকে চাকরি করতাম। পারিবারিক অনিচ্ছার কারণে আমার এই চাকরিটি ছেড়ে দিতে হয়েছে” বলেছিলেন তারমিহিম তানিয়া। এক কন্যা সন্তানের জননী ৩৪ বছর বয়সী তানিয়া তার একমাত্র মেয়েকে নিয়েই থাকেন, স্বামীর সাথে বিচ্ছেদ হয়েছে। থেমে থাকেননি, বাধা পেরিয়ে নিজেই স্বাবলম্বী হয়েছেন।
তিনি বলেন “যেহেতু এখন আমার চাকরি নাই, আমি বুঝতে পারি আমার কিছু করা উচিত। একদিন আমি আর আমার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুর সাথে বাজারে যাই, থান কাপড় কিনে মেয়েদের জন্য পোশাক তৈরি করব বলে। সেই সময়ই আমাদের মনে হল এরকম পোশাক তৈরি করে তো আমরা অনলাইনে বিক্রি করতে পারি। সেই থেকেই ব্যবসা করার পরিকল্পনা শুরু। আমাদের তৈরি পোশাকের ছবি তুলে ফেইসবুকে দেয়া শুরু করলাম। অনেকের কাছ থেকে ফোন পেতে লাগলাম- অল্প অল্প করে বিক্রি হতে লাগল।” এভাবেই শুরু তানিয়ার অনলাইন শপ “ব্র্যান্ড আই”। মেয়ে হবার কারণে তাকে অনেক সমস্যায় পড়তে হয়েছে। তিনি বলেন, “আমার এক আত্মীয় আমাকে ব্যবসা না করে চাকরি করার পরামর্শ দেয়, কিন্তু আমি জানি অনলাইন বিজনেসের কি সুবিধা।” এখন তানিয়া তার মেয়েকে সময় দিতে পারে, তার মেয়ে মাত্র এই বছরেই স্কুলে যাওয়া শুরু করেছে। যদিও অনলাইন বিজনেসে দক্ষতা অর্জন করাটা তানিয়ার জন্য বেশ চ্যালেঞ্জিং ছিল। তাকে এই বিষয় সর্ম্পকে অনেক কিছু জানতে হয়।
তানিয়া বলেন, “আমি কাটিং বা সেলাই সর্ম্পকে কিছুই জানতাম না কিন্তু ব্যবসার কারনে তা শিখতে শুরু করি, এখন আমি এই বিষয়ে বেশ দক্ষতা অর্জন করেছি। একজন অনলাইন ব্যবসায়ীকে ঝঊঙ সর্ম্পকে জানতে হবে। ক্রেতাদের সাথে কিভাবে কথা বলতে হবে তা জানতে হবে।” সে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ এবং পড়াশুনা করে এসব জানার চেষ্টা করেছে। এখন তানিয়ার প্রতিষ্ঠানে পাঁচ জন কর্মচারী কাজ করছে। তারা সবাই তাদের বাড়ি থেকে কাজ করে। তিনি পাঠাও, এসএ পরিবহন ইত্যাদি কিছু কুরিয়ার সংস্থার মাধ্যমে ক্রেতাদের কাছে তিনি পণ্য পৌঁছে দেন। বিভিন্ন মেলায় অংশ গ্রহণ করে তিনি বেশ কিছু অর্ডার পান এবং অনেক নতুন নতুন লোক তার “ব্র্যান্ড আই”কে চিনতে পারে। তিনি বলেন, “একবার মেলায় আমি ২০টি পোশাকের অর্ডার পেয়েছিলাম যা আমাকে খুব অনুপ্রাণিত করে।” তিনি বলেন, “ একটি ব্যবসার জন্য সুনাম খুবই গুরুত্বপূর্ণ, তাই প্রথম থেকেই বিশ্বাস এবং সুনাম অর্জনের চেষ্টা করছি আমি। যদিও মাঝে মাঝে আমি হতাশ হয়ে পড়ি। তখন আমার বাংলাদেশ ইয়ুথ এন্টার প্রাইজ এন্ড হেল্প সেন্টার (বি’ইয়া)’র কথা মনে পড়ে যায়, যারা আমাকে সাহস দিয়েছে, উৎসাহ দিয়েছে, একজন মেন্টরকে ব্যবসা পরামর্শক হিসেবে পেয়েছি। বি’ইয়া যদি আমার পাশে থাকত না, আমি ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারতাম না। আমি বি’ইয়া’র কাছে কৃতজ্ঞ।”