আত্মকর্মসংস্থান কী?
আত্মকর্মসংস্থান মানে কারো অধীনে চাকরি না করে নিজের উপার্জনের ব্যবস্থা নিজেই করা। আত্মকর্মসংস্থান নানা রকম হতে পারে। যেমন একজন মুচি, জুতো সেলাই করে – সে কারো অধীনে চাকরি করে না। সে একটা সার্ভিস বিক্রি করছে। একজন ফ্রিল্যান্সার – সেও চাকুরে নয় বরং চুক্তিভিত্তিক কাজ করে। রাস্তার পাশে বসে থাকা একজন সবজি বিক্রেতা নানা রকম সবজি পাইকারি কেনে আর খুচরা বিক্রি করে। এরা সবাই কিন্তু নিজের কাজের ব্যবস্থা নিজেই করে নিয়েছে; মানে এরা সেলফ এমপ্লয়েড।
বেকারত্ব হ্রাসে আত্মকর্মসংস্থান:
২০২১ সালের একটি পরিসংখ্যান এ দেখা যায়, বাংলাদেশে ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সীদের মাত্র ৩৩.৫৯ শতাংশ কাজ করে, বাকিরা বেকার। অন্য এক গবেষণায় দেখা যায় শিক্ষিতদের মধ্যে বেকারত্বের হার ৩৩%
বলা হয়, বেকারত্ব একটি দেশের জন্য অভিশাপ স্বরূপ। বেকারত্বের ফলে দেশের উন্নয়ন থমকে যায়, অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বেকারত্ব হ্রাসে আত্মকর্মসংস্থান এর গুরুত্ব অপরিসীম। স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল রাষ্ট্র গুলোতে আত্মকর্মসংস্থান এর হার বৃদ্ধি পেলে অর্থনৈতিক ভাবে উন্নতি করা সম্ভব।
কথায় আছে, “অভাবে স্বভাব নষ্ট”। এটি বলার কারণ হচ্ছে মানুষ যখন বেকার থাকে তখন অভাবের তাড়নায় নানান অন্যায় কাজেও লিপ্ত হয়ে যায়। তাই আত্মকর্মসংস্থান গড়ে উঠলে এধরণের অপরাধমূলক কর্মকান্ড অনেকাংশেই কমে আসবে। এছাড়া আত্মকর্মসংস্থান এর ফলে অন্যান্য মানুষের কর্মসংস্থান ও বৃদ্ধি পায়। কারণ মানুষ যখন কোনো উদ্যোগ নেয় তখন সেটা একা সফল ভাবে এগিয়ে নিতে পারে না। এজন্য প্রয়োজন মানুষ, যারা নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে দক্ষতার সাথে কাজ করবে। সুতরাং একটি উদ্যোগ সমাজের মানুষের পাশাপাশি দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
ধরুন, আপনার এলাকায় আপনি একটি কোচিং সেন্টার খুললেন, যার মাধ্যমে স্টুডেন্টদের পড়িয়ে আপনি আত্মকর্মসংস্থান এর ব্যবস্থা করেছেন। এরপর আপনি আরো বেশ কিছু কলেজ/ভার্সিটি পড়ুয়া স্টুডেন্টদের নিয়ে কোচিং সেন্টারটি আরো বড় করলেন, এখন আপনার এই কোচিং সেন্টারের মাধ্যমে আরো বেশ কিছু মানুষের কর্মসংস্থান এর ব্যবস্থা হলো।
ব্যবসায়/ ব্যাবসা বলতে কী বোঝায়?
‘ব্যবসায়’ আর ‘ব্যাবসা’ কিন্তু একই জিনিস। সংষ্কৃতি শব্দ ‘ব্যবসায়’ থেকে বাংলা ‘ব্যাবসা’ শব্দের উৎপত্তি। ‘ব্যাবসা’ শব্দের আক্ষরিক অর্থ হচ্ছে ‘ব্যস্ত থাকা’ অর্থাৎ হয় ব্যক্তিগত অথবা সমষ্টিগতভাবে বাণিজ্যিকভাবে, সমর্থনযোগ্য ও লাভজনক কাজে ব্যস্ত থাকা। ব্যাবসা বলতে বোঝায় এমন একটি প্রতিষ্ঠান কিংবা সত্ত্বা যা মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে পণ্য কিংবা সেবা বিক্রি করে থাকে।
ব্যক্তি মালিকানার ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালকবৃন্দের মূল উদ্দেশ্যের মধ্যে একটি হলো, ঝুঁকি গ্রহণ ও কাজের বিপরীতে বিনিয়োগকৃত পুঁজি ফেরত পাওয়া। মুনাফাবিহীন বা রাষ্ট্র মালিকানার অধীনেও ব্যাবসা করা যায়।
“ব্যাবসা” শব্দটির কমপক্ষে তিনটি ব্যবহার রয়েছে –
- পেশা বা জীবিকার উৎস বোঝাতে। যেমন – ‘তিনি কি করেন? ব্যাবসা।”
- একটি নির্দিষ্ট কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানকে বুঝাতে এককভাবে ব্যবহার হয়। যেমন – “তার ব্যাবসা অনেক বড়।”
- একটি নির্দিষ্ট পণ্য বা সেবার বাজার ক্ষেত্র বুঝাতে সাধারণত ব্যবহার হয়; যেমন – ফুলের ব্যাবসা, আইটি ব্যাবসা।
পণ্য কী?
অর্থের বিনিময়ে ক্রয়বিক্রয়যোগ্য যে কোনো সামগ্রীই পণ্য। যেমন- কেউ আপনি টাকা দিয়ে একটি কলম কিনলেন তাহলে এই কলমটি হচ্ছে একটি পণ্য। অথবা, কেউআপনি কিছু টাকার বিনিময়ে গ্রাফিক্স ডিজাইন শিখলেন তাহলে এই স্কিলটিও কিন্তু একটি পণ্য হিসেবেই গণ্য হবে।
পণ্য বলতে সাধারণত দৃশ্যমান বস্তুকে বোঝালেও অদৃশ্যমান বস্তুও পণ্য হিসেবে গণ্য করা যেতে পারে। যেমন: সেবা, ধারণা, অভিজ্ঞতা, স্থান, সংগঠন ইত্যাদি বিষয় ক্রেতার চাহিদা মেটাতে সক্ষম হলে তাদেরকেও পণ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যেমন, হাসপাতালে আপনি টাকার বিনিময়ে চিকিৎসা গ্রহণ করলেন তাহলে সেই চিকিৎসাও কিন্তু আপনার জন্য পণ্য হিসেবেই বিবেচিত হবে।
পণ্যের অস্তিত্ব মানুষের প্রয়োজন, অভাববোধ এবং আকাঙ্ক্ষার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। কোনো বস্তুর মধ্যে যদি দৃশ্যমান বা অদৃশ্যমান উপলব্ধিযোগ্য গুণ থাকে; তা মানুষের অভাব পূরণ বা সন্তুষ্টি লাভের মাধ্যম হয় তাহলে তাকে পণ্য হিসেবে বিবেচনা করা যাবে। এক্ষেত্রে একটি বিষয় অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে যে সেই পণ্যটি ক্রয়-বিক্রয়যোগ্য হতে হবে।
সেবা কী?
সেবা হচ্ছে এমন কোনো কাজ বা সুবিধা যা মানুষের অভাব বা প্রয়োজন পূরণ করে অন্য একজনের মাধ্যমে। সেবা বিক্রয়ের জন্য বাজারে উপস্থাপন করা হলেও এটি অদৃশ্যমান ও অস্পর্শনীয়।
Philip Kotler and Gary Armstrong এর মতে,
“সেবা হচ্ছে কোনো কাজ বা সুবিধা যা একপক্ষ অন্যপক্ষকে প্রদান করতে পারে, যা অবশ্যই অস্পর্শনীয় এবং যাতে মালিকানার কোনো পরিবির্তন ঘটে না।“
সেবার কিছুর উদাহরণ হতে পারে – স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল, সেলুন, ব্যাংক, কুরিয়ার সার্ভিস, বিভিন্ন শিক্ষামূলক প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি। যেসব পণ্য সরাসরি দেখা না গেলেও সুবিধা ভোগ করা যায় তাকে সেবা বলা যায়।
সেলস / বিক্রয় বলতে কী বোঝায়?
ব্যবসায়িক অর্থে বিক্রয় হচ্ছে টাকার বিনিময়ে পণ্য বা সেবার মালিকানা ক্রেতাকে দেওয়া। যেমন, মুদি দোকান থেকে আমরা যখন কিছু পণ্য টাকার বিনিময়ে কিনি তখন দোকানদারের জন্য এটা সেলস বা বিক্রি।
আভিধানিক অর্থে,
“বিক্রয় হলো কতগুলো কাজের সমষ্টি – যে কাজগুলো ভোক্তার প্রয়োজন নির্ধারণ, চাহিদা সৃষ্টি, ক্রেতা অনুসন্ধান, পণ্য সম্পর্কে ক্রেতাকে পরামর্শ ও উপদেশ দান, মালিকানা হস্তান্তর, চাহিদা অনুযায়ী বিক্রয়োত্তর সেবা প্রদান ইত্যাদি।”
উদ্যোগ কাকে বলে?
যে কোনো নতুন কাজের প্রচেষ্টাকে উদ্যোগ বলা যায়। যেমন কেউ পাড়ার ছেলেদের নিয়ে একটা পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালাল। এরপর রাস্তায় আবর্জনা ফেলার জন্য কয়েকটা ফিক্সড ‘বিন’ বসিয়ে দিল। আবার কেউ মসজিদে শিশুদের কুরআন শেখানোর জন্য একজন শিক্ষককে নিযুক্ত করল – এগুলো উদ্যোগ কারণ এগুলো আগে ছিল না।
উদ্যোগে অর্থনৈতিক মুনাফা থাকতেও পারে, নাও পারে। যদি কোনো উদ্যোগে অর্থনৈতিক মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্য থাকে তাহলে সেটাকে ব্যাবসায়িক উদ্যোগ বলে। যেমন কোনো একটা গ্রামে কেউ কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টার খুললো যাতে বেকারদের কম্পিউটার স্কিল শিখিয়ে অর্থ উপার্জন করা যায় – এটা ব্যবসায়িক উদ্যোগ।
উদ্যোক্তা কাকে বলে?
উদ্যোক্তা হলেন এমন একজন ব্যক্তি যিনি নতুন একটি উদ্যোগ নেন। ব্যবসায়িক উদ্যোক্তা হচ্ছেন ঝুঁকি গ্রহণের মাধ্যমে একটি নতুন ব্যবসায়িক উদ্যোগ নেন এবং সেটায় ভ্যালু যোগ করার মাধ্যমে মুনাফা অর্জন করেন। উদাহরণ হিসেবে, আপনি যদি মধু দিয়ে সাবান বানিয়ে বিক্রি করার উদ্যোগ নেন তাহলে আপনাকে একজন উদ্যোক্তা বলা যাবে। কারণ আপনি শুধু মধুই বিক্রি করছেন না, মধুর কার্যকারিতাকে কাজে লাগিয়ে নতুনত্ব সৃষ্টি করেছেন; আপনার এই সৃষ্টিশীল চিন্তা ও নতুন কোনো কাজ করার ঝুঁকি নেওয়াকে উদ্যোগ বলা হয়।
একজন উদ্যোক্তা কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে থাকেন। কারণ একজন উদ্যোক্তার অধীনে আরো অনেক মানুষ কাজ করেন, যার ফলে আত্মকর্মসংস্থান এর পাশাপাশি কর্মসংস্থান ও তৈরী হয়। এতে করে বেকারত্বের হার কমে আসে।
যেকোনো উদ্যোক্তাকেই কোনো নতুন ধারণা বা পণ্যের জনক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। একজন উদ্যোক্তা গতানুগতিক ব্যবসায়ের ধারা থেকে ভিন্ন কিছু করতে নিজের উদ্ভাবনী চিন্তা-শক্তিকে ও দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে মার্কেটে কার্যকরী ও নতুন ধারণা নিয়ে আসেন।
উদ্যোক্তা হওয়ার ক্ষেত্রে এই বিষয়টি অবশ্যই মাথায় রাখা প্রয়োজন যে উদ্যোক্তা মানেই ঝুঁকি গ্রহণের মন-মানসিকতা থাকতে হবে। একটু বুঝিয়ে বললে, আপনি যে মধু দিয়ে সাবান তৈরী করেছেন এখন আপনার সাবানটি বিক্রি হতেও পারে আবার নাও হতে পারে। এই যে হওয়া এবং না হওয়ার মধ্যকার বিষয়টিই হচ্ছে ঝুঁকি যা ছাড়া কোনো উদ্যোগই আগাতে পারে না।
একটা বিষয় মনে রাখা জরুরি,
“সকল উদ্যোক্তাই ব্যবসায়ী তবে সকল ব্যবসায়ী কিন্তু উদ্যোক্তা নয়”
নারী উদ্যোক্তা বলতে কী বোঝায়?
একজন নারী যখন কোনো কিছু করার উদ্যোগ নেয় তখন তাকে নারী উদ্যোক্তা বলা হয়। যেমন, আজকাল অনেক নারী ঘরে বসে নিজেদের দক্ষতাকে ও সৃষ্টিশীল চিন্তা শক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন উদ্যোগ নিচ্ছেন। কেউ হয়তোবা ভালো সেলাই কাজ পারে, তিনি বাচ্চাদের ড্রেস কাস্টমাইজ করে বানিয়ে সেল করছেন। কেউ হয়তো ভালো রান্না করতে পারেন তিনি কেটারিং এর সার্ভিস চালু করেছেন ইত্যাদি। কেউ হয়তো কেক বানিয়ে বিক্রি করতেন, তিনি কেক বানানো ট্রেনিং দিচ্ছেন। এরা সবাই বর্তমানে চালু ব্যাবসার পাশাপাশি নতুন আইডিয়া নিয়ে কাজ করছেন বলে এদের আমরা উদ্যোক্তা বলতে পারি।
উদ্যোক্তা হওয়ার সুবিধা ও অসুবিধাসমূহ:
প্রতিটা বিষয়ের বেশ কিছু সুবিধা ও অসুবিধা থাকে। উদ্যোক্তা হওয়ার ক্ষেত্রেও সুবিধা যেমন আছে তেমনই আছে বেশ কিছু অসুবিধাও! দুটো বিষয়ের প্রতিই আলোকপাত করা জরুরি।
উদ্যোক্তা হওয়ার সুবিধা সমূহ:
১. স্বাধীনতা (Freedom): উদ্যোক্তা হওয়ার প্রথম ও প্রধান সুবিধাটাই হলো স্বাধীনতা। ৯-৫ টার চাকরির ক্ষেত্রে নিজস্ব কোনো স্বাধীনতা থাকে না। তার প্রতিটা কাজের ক্ষেত্রে কারো কাছে জবাবদিহিতা যেমন করা লাগে না তেমনই যে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রেও একজন উদ্যোক্তা স্বাধীন।
২. নমনীয়তা (Flexibility): উদ্যোক্তাদের ক্ষেত্রে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা হচ্ছে কাজের ক্ষেত্রে নমনীয়তা বা ফ্লেক্সিবিলিটি থাকা। কোনো কাজ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে করার কোনো চাপ বা তাড়া থাকে না। যার ফলে একটি কাজে উদ্যোক্তা আরো বেশী মনোযোগ ও সময় দিতে পারেন।
৩. দক্ষতা উন্নয়ন (Develop Skills): একজন উদ্যোক্তা খুব সহজেই নিজের উদ্যোগকে এগিয়ে নিয়ে যেতে যে যে দক্ষতা প্রয়োজন সেগুলো অর্জন করেন।
৪. অর্থনৈতিক উন্নয়ন (Economic Development): একজন চাকুরে যত স্কিলড হোক না কেন মাস শেষে সে একটি নির্দিষ্ট অংকের বেতন পায়। একজন উদ্যোক্তার ব্যবসা কতটা সফল হবে তার ওপর নির্ভর করে সে কত আয় করবে – Sky is the limit.
৫. নতুন অভিজ্ঞতা (New Experience): উদ্যোক্তারা বিভিন্ন সময় নতুন নতুন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয় যার মাধ্যমে তাদের সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা ও দূরদর্শিতা বৃদ্ধি পায় ।
৬. নিজস্ব টিম গঠন (Building Your Own Team): চাকরিজীবিদের টিমে কাজ করতে হয়। আর উদ্যোক্তারা টিম তৈরি করে নেন। সে দলে সে কাকে নেবে এটা সে-ই ঠিক করে। নিজের পছন্দ মতো টিম গঠনের সুযোগ সাধারণ চাকরিজীবিরা পায় না। ।
উদ্যোক্তা হওয়ার অসুবিধা সমূহ:
১. অনিশ্চিত আয় (Uncertain Income): উদ্যোক্তা হওয়ার ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম ও সর্বপ্রধান যে ঝুঁকি থাকে সেটি হলো অনিশ্চিত আয়। যেহেতু নতুন উদ্যোগ শুরু করার পরই সেখান থেকে প্রফিট আসে না তাই এখানে আয়ের ক্ষেত্রে কোনো নিশ্চয়তা নেই। এছাড়া লাভ-লসের উপরও আয় অনেকাংশে নির্ভরশীল। অনেকেই একারণে উদ্যোগের ক্ষেত্রে এই ঝুঁকি নিতে চান না।
২. ব্যর্থতার ঝুঁকি (Risk of Failure): যেকোনো নতুন উদ্যোগের ক্ষেত্রে ব্যর্থতার ঝুঁকি থাকে অনেক। Bureau of Labour Statistics (BLS) এর গবেষণা অনুযায়ী, ১৮.৪% উদ্যোগ শুরু প্রথম ২ বছরে ব্যর্থ হয়, ৪৯.৭% উদ্যোগ প্রথম ৫ বছরে, ৬৫.৫% উদ্যোগ ১০ বছরে এবং ২৫% উদ্যোগ ১৫ বা তার একটু বেশী সময়ের মধ্যে ব্যর্থ হয়। এই গবেষণাটি ১৯৯০ সাল এর পর থেকে তেমন একটা পরিবর্তন হয়নি।
তাই উদ্যোক্তাদের এই ঝুঁকি মেনেই উদ্যোগ নিতে হয়।
৩. নতুন কাস্টমার তৈরী (Create New Customer): প্রায়সময়ই ক্রেতারা নতুন কোম্পানির তুলনায় পুরাতন কোম্পানির সার্ভিস বা প্রোডাক্ট নিতে বেশী স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। এর একটি মূল কারণ বিশ্বাসযোগ্যতা, যা নতুন উদ্যোক্তাদের তৈরী করতে একটু সময় লাগে।
৪. আর্থিক অস্থিতিশীলতা (Financial Instability): যেকোনো নতুন উদ্যোগের ক্ষেত্রে একটি প্রধান সমস্যা হচ্ছে আর্থিক অস্থিতিশীলতা। যেহেতু উদ্যোক্তা নিজস্ব বা অন্য কারো মূলধন উদ্যোগে ইনভেস্ট করে তাই সেটার রিটার্ণ আসাটা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। ইতিমধ্যে বিনিয়োগকারী যদি তার মূলধন ফেরত চান তবে উদ্যোগ হুমকির মুখে পড়ে যায়।
৫. বিশাল প্রতিযোগিতা (Greater Competition): নতুন উদ্যোগের ক্ষেত্রে একটি পুরাতন ও সফল উদ্যোগের সাথে প্রতিযোগিতা বেশ কঠিন হয়ে যায় আর্থিক অবস্থা, জ্ঞান, অভিজ্ঞতা ও ক্রেতাদের সাপোর্ট ছাড়া। যা অনেক ক্ষেত্রেই নতুন উদ্যোগের ব্যর্থতার একটি কারণ।
৬. বিনিয়োগকারীর অভাব (Lack of Investors): অনেক উদ্যোগের ক্ষেত্রে দেখা যায় অনেক বিনিয়োগের প্রয়োজন হয় যা একার পক্ষে বহন করা সম্ভব হয় না। কিন্তু নতুন উদ্যোগের ক্ষেত্রে কেউই বিনিয়োগ করতে রাজি না হওয়ায় অনেক সময় উদ্যোক্তার ঋণ নিয়ে ব্যাবসা দাঁড় করাতে হয় যার ফলে মানসিক চাপ থাকে বেশী।
পরিশেষে বলা যায়, উদ্যোগ হচ্ছে একজন মানুষের নিজস্ব সৃজনশীলতার ফলাফল। উদ্যোগের ক্ষেত্রে কোনো নতুনত্ব না থাকলে, কোনো সমস্যা সমাধান না হলে সেটাকে উদ্যোগ বলা যেতে পারে না।
উদ্যোক্তাদের হাজারো ঝুঁকি ও সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে নিজেদের উদ্যোগকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা থাকতে হয়। একজন উদ্যোক্তার বিভিন্ন দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার ফলে একটি উদ্যোগ সাফল্যের মুখ দেখে।