বিক্রির আটটি ধাপ | পণ্য বা সেবা, দুই ক্ষেত্রেই
একজন উদ্যোক্তা তার অভিনব ধারণা দিয়ে একটি পণ্য বা সেবা উদ্ভাবন করেন। এই পণ্য ও সেবাকে ক্রেতা, বিনিয়োগকারী ও সাধারণ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে তাকে কাজ করতে হয় ব্র্যান্ডিং , মার্কেটিং সহ নানা রকমের পরিকল্পনা নিয়ে। আর ব্যবসাকে সফল করতে এসব পরিকল্পনার চূড়ান্ত ধাপ হল সেলস বা বিক্রয় ; আর বিক্রির জন্য বিক্রির আটটি ধাপ জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
সেলস হচ্ছে ব্যাবসা উদ্যোগের সকল পরিকল্পনার ফলাফল। সেলসের মাধ্যমেই পণ্য ও সেবা কাঙ্ক্ষিত রেভিনিউ বা নগদ অর্থে রুপান্তর হয়। উদ্যোক্তা সেলস টেকনিক বা বিক্রয় কৌশল যত ভাল রপ্ত করতে পারবেন তার সফল হওয়ার সম্ভাবনা তত বেশি থাকবে। এজন্য প্রতিটি উদ্যোক্তার অবশ্যই সেলস এর সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা, কর্ম কৌশল, বিশেষ প্রক্রিয়া, নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা থাকতে হবে।
সেলস সবচেয়ে কঠিন কাজগুলোর একটি। সেলস রিপ্রেজেন্টেটিভ বা বিক্রয় প্রতিনিধিকে প্রতিনিয়ত ক্রেতার কাছে প্রত্যাখ্যান হতে হয়, মোকাবেলা করতে হয় অনেক কঠিন সময়। ইমেইল, মোবাইল কল, আউটলেট এ যতই কাস্টমারের ‘না’ শুনুক তবুও ‘হ্যাঁ’ বানানোর কৌশল শিখতে হয়। এজন্য দরকার উপযুক্ত সেলস প্রসেস বা প্রক্রিয়া।
বিক্রয় প্রক্রিয়া হল এমন কিছু পদক্ষেপের ক্রম যা গ্রাহকদের মধ্যে সম্ভাবনার রূপান্তর, প্রতিনিধিদের অনুসরণীয় এবং চুক্তি সম্পাদন করার জন্য একটি শক্তিশালী কাঠামো।
হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ এর গবেষণা অনুসারে, সেলস প্রসেস এর ধাপ অনুসরণ করলে অধিক রেভিনিউ আসে। কারণ এটি বিক্রয়কর্মীদের জন্য একটি রোডম্যাপ বা গাইড হিসাবে কাজ করে। যাতে তারা কাস্টমার বা ক্লায়েন্টকে দ্রুত এবং সহজে বুঝতে পারে। ব্যবস্থাপকরা জানতে পারে কী কী ভুলের জন্য বিক্রয় স্থগিত হচ্ছে।
ষ্ট্যাণ্ডার্ড সেলস প্রসেস এর ধাপসমূহ:
নতুন উদ্যোক্তারা তাদের উদ্যোগ বা ব্যবসায় সফলতার জন্য নিম্নোক্ত বিক্রির আটটি ধাপ মেনে চলতে পারেন –
১/ পণ্যকে জানা ও বোঝা
আপনি কী বিক্রি করছেন সে সম্পর্কে জানুন। ক্রেতা কী চায় তা বুঝতে হবে। প্রতিদ্বন্দ্বীরা কী দিচ্ছে সেটা ভালোভাবে খেয়াল করতে হবে।
বিক্রয়কর্মীদের পণ্য, টার্গেট কাস্টমার, ইন্ড্রাস্ট্রি এবং প্রদত্ত ব্র্যান্ড ভ্যালুস সম্পর্কে পরিপূর্ণ ভাবে জানতে হবে। এরপর মার্কেটে এই প্রোডাক্ট এর প্রতিযোগীদের ভালভাবে জানতে হবে এবং তাদের ডেটা গবেষণা করতে হবে। কাস্টমারের কাছে প্রতিদ্বন্দ্বীদের চেয়ে নিজেকে আলাদা ভাবে প্রকাশ করেতে এবং বেস্ট অফার সরবরাহ করতে রিসার্চ এর বিকল্প নাই। পণ্য ক্রয়ে কাস্টমারদের বিশেষ সুবিধাগুলো কী কী যা অন্যরা প্রদান করে না সেসব এড্রেস করা জরুরী। পণ্য ও সেবার ক্ষেত্রে ক্রেতা কর্তৃক আপত্তিগুলো খুঁজে বের করে তার সমাধান নিয়ে কাজ করতে হবে। প্রয়োজনে মেন্টরের সহায়তা নিতে হবে।
আমেরিকান লেখক ও উদ্যোক্তা ‘সেইথ গডিন’ বলেছেন –
“আপনার পণ্যের জন্য কাস্টমার সন্ধান করবেন না বরং আপনার কাস্টমারের জন্য পণ্য খুঁজুন”।
২/ ক্রেতার জুতোয় চলা
সেলসম্যানকে চলতে হয় অনেক পথ। তারা অধিকাংশ সময় নিজের জুতো পরে থাকে।
অন্যের জুতো যে পরতে হয় – এটা অনেক সেলসে থাকা মানুষেরা বোঝেও না।
বিক্রয় কৌশলের একটি ব্যাসিক শর্ত হল কাস্টমারের দৃষ্টিকোণ থেকে চিন্তা করতে জানা। ক্রেতা ঠিক কী চাইছেন তা বুঝতে পারা, তার মূল সমস্যাগুলি অনুভব করতে পারা এবং ক্রেতার ইমোশনকে অনেক বেশি গুরুত্ব দেয়া। সেক্ষেত্রে দরকার ক্রেতা বা গ্রাহকের জুতোতেও কিছু সময় ব্যয় করা।
ধরি, কর্পোরেট সেলস এর উদ্দেশ্যে কোন এক স্বীকৃত কোম্পানিতে প্রোডাক্ট বিক্রির জন্য প্রপোজাল প্রেজেন্ট করতে হবে। এক্ষেত্রে টেকনোলজিক্যাল আধুনিকায়ন মাথায় রেখে পরিসংখ্যানগত ও ডেটা নির্ভর একটি রিপোর্ট সাবমিট করা ক্ল্যায়েন্টের জন্য অনেক ফলপ্রসূ হবে নিশ্চয়।
কিন্তু একই প্রোডাক্ট কোন ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে বিক্রির জন্য এই পদ্ধতি কার্যকর নাও হতে পারে। এক্ষেত্রে দেখতে হবে সেই কাস্টমার টেকনোলজির ব্যাপারে পারদর্শী কিনা। যদি মনে হয় এমন প্রেজেন্টেশনে তার আগ্রহ নেই তাহলে কাগজ কলমেই পণ্য বা সেবা সম্পর্কে প্রেজেন্ট করা শ্রেয়। এই কাস্টমারের জন্য এটাই বেশি কার্যকর হবে।
সেলস ও মার্কেটিং বিশেষজ্ঞ ‘রয় বার্টেল’ বলেছেন –
“বেশিরভাগ মানুষ মনে করে সেলস এর জন্য অনেক কথা বলতে হবে। কিন্তু একজন সক্রিয় বিক্রয়কর্মী জানে অন্যের কথা শোনা এই কাজের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ।”
তাই কাস্টমারের দৃষ্টিভঙ্গী বুঝে তাকে পণ্য কিনতে সচেষ্ট করতে মুখের চেয়ে কান খোলা রাখা জরুরী।
৩/ গবেষণা ও উন্নয়ন
আপনার পণ্যটি ক্রেতার জন্য আসলেই উপযুক্ত কী? আপনি যা বিক্রি করছেন তা কী তার কাজে লাগবে? ক্রেতার চাহিদা বাড়াতে প্রোডাক্ট রিচার্স ও ডেভেলপমেন্ট এর কোন বিকল্প নাই।
একসময় প্রতিটা মানুষের হাতে টাইম জানার জন্য ঘড়ি থাকতো। কিন্তু সবার হাতে হাতে মোবাইল আসার পর থেকে ঘড়ির চাহিদা কমতে শুরু হল। এখন ঘড়িতে আধুনিক নানান ফিচার যুক্ত হয়ে ঠিকই অনেক মানুষের কাছে ঘড়ির প্রয়োজনীয়তা বিদ্যমান রয়েছে। আবার কম্পিউটার ও মোবাইলে টেলিভিশনের কাজ সহজেই হলেও টেলিভিশনে অনেক নতুনত্য ও সফটওয়্যার যুক্ত হওয়ায় মানুষ ঠিকই টেলিভিশনের নির্ভরতা কমায় নি। এর পেছনে ছিল গবেষণা। প্রতিনিয়ত গবেষকরা পণ্যের উন্নয়নে আগামীতে কাস্টমারের চাহিদা বিশ্লেষণ করে কাজ করে গেছেন।
দুবাই এর বিজনেস আইকন আল হারামাইন গ্রুপ এবং এনআরবি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ‘মাহতাবুর রহমান নাসির’ বলেছেন –
“মার্কেটে কম্পিটিশন থাকবে আর সেই কম্পিটিশনে টিকে থাকতে হলে কোয়ালিটি ডেভেলপমেন্ট নিয়ে কাজ করতে হবে।”
আজকে যে পণ্যের চাহিদা তুঙ্গে, আগামী ৫ বছর পর সেই চাহিদা নাও থাকতে পারে কিংবা চাহিদার ধরণ পরিবর্তন হতে পারে। তাই পণ্যের মান উন্নয়ন, কাস্টমারের সন্তুষ্টি ও সহজলভ্যতা নিয়ে গবেষণা খুব জরুরী।
৪/ কাছে আসা
এই পর্যায়ে আত্মবিশ্বাস ও সৌজন্যতার সাথে ক্রেতার আস্থা অর্জন করতে হবে। আলোচনা করতে হবে সততা ও দক্ষতার সাথে। বুঝতে হবে উনি কী চাচ্ছেন। মূল্যায়ন করতে হবে তার আগ্রহের।
ক্রেতার সাথে সাক্ষাৎ এর সময় সাবলীলভাবে নিজের ও ব্র্যান্ডের পরিচয় এবং যোগাযোগের কারণ ব্যাখ্যা করতে হবে। নিজেকে পছন্দ করানোর খুব বেশি চেষ্টা না করে সম্মান অর্জন ও সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করতে হবে। ইতিবাচক ভঙ্গিতে ক্রেতার চাহিদা এবং বাজেট সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করতে হবে।
বিভ্রান্তিকর ও বিতর্কিত কোন কথা বলা যাবে না। পণ্য সম্বন্ধে বাড়িয়ে মিথ্যা তথ্য দেবার কোন দরকার নাই। বরং বের করতে হবে পণ্যে সেবার ‘Unique Selling Proposition’ (USP) বা পণ্যের অনন্য দিকগুলো। আর সেগুলোই কাস্টমার ও ক্লায়েন্টকে বোঝাতে হবে। মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে বা বেস্ট কোয়ালিটির কথা বলে তা নিশ্চিত না করে হয়তো সাময়িক আস্থা অর্জন ও সেলস সম্ভব কিন্তু সেটা কখনই টেকসই হবে না। কারণ অদূর ভবিষ্যতে ক্রেতার চোখে ওই মিথ্যা ধরা পড়বেই আর ক্রেতা হারাতে হবে। মনে রাখুন একজন ক্রেতা বা ক্লায়েন্ট তৈরি করার চেয়ে হারানো বেশি নেতিবাচক। হারানো ক্রেতারা সেই পণ্য বা ব্র্যান্ড নিয়ে খারাপ রিভিউ দিবে যা অনেক ক্ষতিকর।
মাসমেইলার এর কো-সিইও ‘সিভা দেভাকি’ বলেছেন –
“বিক্রয় মানে শুধু পণ্য বিক্রি করা নয়, সাথে আস্থা ও বিশ্বাস গড়ে তোলা”।
৫/ উপস্থাপন | বিক্রির আটটি ধাপ এর অন্যতম একটু দিক
ক্রেতার মন জয় করতে পারলেই এবার উপস্থাপন পর্যায়ে এগিয়ে যান। পণ্যের অনন্য বৈশিষ্ট্য এবং অন্য ক্রেতাদের ইতিবাচক মূল্যায়ন স্পষ্টভাবে উপস্থাপন করুন।
উপস্থাপনার ধাপ হচ্ছে ক্রেতাকে বিক্রেতার মতে আনার উপযুক্ত সময়। ক্রেতার সামনে পণ্য উপস্থাপনের সময় বিক্রয় প্রতিনিধিকে পণ্যের গুণগত মান, কাস্টমার ফিডব্যাক, চলমান গবেষণা, ব্র্যান্ডকে সংজ্ঞায়িত করার মত বিষয় সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলতে হবে।
সাফল্যের গল্প বা প্রশংসাপত্র শেয়ার করতে হবে। এসব ব্র্যান্ডের আস্থাশীলতা বাড়ায়। গুরুত্ব বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনে পণ্যের টেকনিক্যাল পারসন যেমন প্রকৌশলী বা ডিজাইনারকেও এসময় সাথে নিয়ে যাওয়া বুদ্ধিমানের কাজ।
সেলস প্রেজেন্টেশন সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। বিক্রয়কর্মীকে অবশ্যই ক্রেতা চাহিদার বাইরে অপ্রাসঙ্গিক এবং কোম্পানির সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ বিষয় এড়িয়ে চলতে হবে।
প্রেজেন্টেশনটি সুনির্দিষ্ট হতে হবে। অতিরিক্ত ব্যাখ্যা এড়িয়ে চলতে হবে। একই পয়েন্ট পুনরাবৃত্তি করা উচিত নয়। পণ্যের সমস্ত শক্তিশালী দিক তুলে ধরে প্রতিযোগীদের থেকে নিজের পণ্যের বিশেষত্ব প্রমাণ করতে হবে।
উপস্থাপনায় বিজয়ের আত্মবিশ্বাস থাকতে হবে। ক্রেতা পক্ষে বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে যে, বিক্রয়কর্মীর বক্তব্য খাঁটি এবং সত্য। এজন্য বক্তব্যের পক্ষে যথেষ্ট রেফারেন্স নিয়ে কথা বলা ভাল।
সেলস এক্সপার্ট ‘থমাস রয় ক্রমওয়েল’ বলেছেন –
“বিক্রয় সফলতা হল শৃঙ্খলা, আত্মোৎসর্গ ও ত্যাগের ফলাফল”।
৬/ মধ্যস্থতা
বিক্রয় মধ্যস্থতা আলোচনা বিক্রেতাদের পণ্য বা সেবার মান পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং ক্রেতার উৎকণ্ঠাগুলোর সমাধানকে নির্দেশ করে। ক্রেতার প্রতিটি জিজ্ঞাসার উত্তর দিন। তাদের আপত্তিগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনুন, সম্ভব হলে সমাধান করুন।
মধ্যস্থতার ক্ষেত্রে বিশেষ করে প্রাইস নেগোসিয়েশন বা দাম কষাকষির ব্যাপারে সতর্কতা ও বিচক্ষণতা বজায় রাখতে হবে যাতে ক্রেতা মনঃক্ষুণ্ণ না হয়। এক্ষেত্রে পণ্যটি প্রস্তুতির আগের কাঁচামাল সোর্সিং, উৎপাদন, বিপনন খরচের একটা সুস্পষ্ট ধারণা দেয়া যেতে পারে।
যেমন তৈরি পোশাক শিল্পে মার্চেন্ডাইজারদের অর্ডার নিশ্চিতের আগে পণ্যের কস্ট ব্রেকডাউন প্রকাশ করতে হয়। প্রতি পিচ পোশাক তৈরিতে কত ডলার খরচ হচ্ছে তা বায়ার জানতে পারে। এই কস্টিং শিটে উৎপাদন, কাঁচামাল, ইয়ার্ন, ফেব্রিক, এক্সসেসরিস, ডাই, ক্যামিকেল ইত্যাদির খরচের বর্ণনা আলাদা ভাবে দেওয়া থাকে। এতে দুই পক্ষে আস্থার জায়গা আরও দৃঢ় হয় এবং প্রাইসিং সহ অন্যান্য মধ্যস্থতা সহজ হয়।
‘জন এফ.কেনেডি’ বলেছেন –
“সন্দেহ ও অস্পষ্টতা রেখে বিক্রয় মধ্যস্থতা হওয়া উচিত নয়”।
৭/ সেলস / বিক্রি
এবার সময় কাঙ্ক্ষিত বিক্রয় সম্পন্ন করবার। মাথায় রাখতে হবে অনেক চ্যালেঞ্জ পাড়ি দিয়ে এই ধাপে আসা সম্ভব হয়েছে। তাই ছোট কোন ভুলে অবস্থান থেকে ছিটকে পরা যাবে না। ক্রেতা প্রয়োজন মনে না করলেও একসাথে বেশি পণ্য বিক্রির জন্য অহেতুক জোরাজুরি করা একদম ঠিক না। প্রথম সেলস অধিক মুনাফার চেয়ে সম্পর্ক তৈরির সূচনা হিসেবে ভাবতে হবে।
একজন বিক্রয়কর্মী তথা ব্যবসায়ীর কাছে ক্রেতা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ব্যবসার উত্থান ও প্রতিষ্ঠিত হতে নির্ভর করতে হয় পণ্যের ক্রেতার উপর। তাই ক্রেতাকে সর্বোচ্চ সম্মানের জায়গায় রেখে তাকে ব্যবসার অংশীদার হিসেবে ভাবতে হবে।
চুক্তি সম্পাদনের প্রতিশ্রুতি পূরণ করে পণ্য ডেলিভারি দিতে হবে। টাকা নেওয়ার আগে পণ্যের দাম, অফার (যদি থাকে), বিক্রয়োত্তর সেবা – সব চূড়ান্ত করে তবেই বিক্রির কাজটা শেষ করতে হবে। সেলস সম্পন্ন হলে শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করা খুব ভাল চর্চা।
উদ্যোক্তা ও প্রযুক্তি উদ্ভাবক স্টিভ জবস বলেছেন –
“আপনি যদি ক্রেতার চাহিদা শুনে, বুঝে এবং খাপ খাইয়ে তার কাছে থাকতে পারেন তাহলেই বিক্রয় সাফল্য দীর্ঘমেয়াদী করতে পারবেন”।
৮/ বিক্রয়োত্তর কাজ
সেলস শুরু মানেই কার্যক্রম শেষ না বরং আসল কাজ শুরু এখন থেকেই। একটি কাস্টমার বা ক্লায়েন্ট তৈরি করা কঠিন। আর এটা ধরে রাখা আরও বেশি কঠিন। পণ্যের মান, মূল্য, সেবার যেসব প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে তা চলমান ভাবে রক্ষা করার চ্যালেঞ্জ নেবার সময় এখন। পণ্য ও সেবা প্রদানের সাথে সাথে ক্রেতা – বিক্রেতার এমন সুসম্পর্ক তৈরি করতে হবে যা বিজনেসকে এগিয়ে নেবে।
পণ্য বা সার্ভিস কেমন ছিল জানতে চান। ক্রেতা আর কী হলে সন্তুষ্ট হতেন তাও জানুন। ফলো আপ করুন। নতুন সব সার্ভিস সম্পর্কে আপডেট রাখুন। মনে রাখবেন আপনি শুধু একবারের জন্য বিক্রি করবেন না বরং দীর্ঘ সম্পর্কের মাধ্যমে ক্রেতাকে ধরে রাখবেন।
কানাডিয়ান ক্রিয়েটিভ ক্যাটালাইস্ট ‘বব হুই’ বলেছেন –
“আপনি আপনার কাস্টমারের প্রতি যত্নশীল না হন এবং সার্ভিস না দেন, তাহলে তারা আপনার প্রতিদ্বন্দ্বীর দখলে চলে যাবে”।
তাই সব সময় স্মরণ রাখুন কাস্টমার শুধুমাত্র পণ্য কেনার চাপে পড়তে চান না, তারা সমাধান চায়।
শেষ কথা
সেলস বা বিক্রয় বিভাগ একটি ব্র্যান্ড, এন্টারপ্রাইজ, প্রোডাক্ট, সার্ভিস এবং কাস্টমার বা ক্লায়েন্টদের মধ্যে ব্যবধান পূরণে সেতুর কাজ করে।
সেলস ব্যবসার জন্য তেমন, মানুষের জন্য অক্সিজেন যেমন। সেলস এর সুনির্দিষ্ট প্ল্যান এবং ধাপগুলো ভালভাবে প্রতিপালন করতে না পারলে আপনার ব্যাবসা দম বন্ধ হয়ে সবকিছু ভেঙে পড়বে।
নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য তাদের ব্যবসাকে ধাপে ধাপে এগিয়ে নিতে অবশ্যই সেলস বা বিক্রয় বিভাগকে অনেক শক্তভাবে ঢেলে সাজানো অত্যাবশ্যক।