ব্যাবসা পরিচালনা করতে গিয়ে আমাদের অনেক কিছু মাথায় রাখতে হয়। মার্কেট রিসার্চ থেকে শুরু করে প্রতিদ্বন্দ্বী, প্রতিযোগিতা সব দিকেই খেয়াল রাখা প্রয়োজন নতুবা মার্কেটে সফল হওয়া কঠিন। এখন অনেকেই ভাবতে পারেন, প্রতিদ্বন্দ্বী আর প্রতিযোগিতা কি খুব গুরুত্বপূর্ণ জিনিস? আমার ব্যবসা আমি করব অন্যদের ব্যবসা অন্যেরা করবে। কিন্তু এ ধারণা ঠিক নয়। ব্যবসা করতে হলে প্রতিদ্বন্দ্বী আর প্রতিযোগিতা খুবই গুরত্বপূর্ণ। এগুলো কী এবং কেন জরুরি তা এই ব্লগে আলোচিত হবে। 

ব্যবসার প্রতিদ্বন্দ্বী কারা?

ব্যবসার প্রতিদ্বন্দ্বী হল সে সকল ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যারা একই প্রোডাক্ট এবং সার্ভিস একই ক্রেতাদের কাছে বিক্রি  করছে। ভবিষ্যতে যারা এই ইন্ডাস্ট্রিতে ব্যাবসা করবে তারাও হবে সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বী। বিশ্বায়নের  এই যুগে প্রতিদ্বন্দ্বী একটি নির্দিষ্ট এলাকায় সীমাবদ্ধ থাকবে তা কিন্ত না, ভিন্ন দেশ থেকেও প্রতিদ্বন্দ্বী থাকতে পারে।
যেমন – FMCG ইন্ডাস্ট্রিতে দেশীয় প্রতিষ্ঠান প্রাণ, টিকে গ্রুপ, ইফাদ যেমন আছে তেমন আছে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান ইউনিলিভার, ম্যারিকো। এই ইন্ডাস্ট্রিতে ব্র্যান্ডগুলো একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী। যেমন – Coca-Cola এবং Pepsico, একই রকম পণ্য উৎপাদন করে এবং তাদের পণ্য ক্রেতাদের কাছে বেশ জনপ্রিয়। যেসব প্রতিযোগী একই রকম পণ্য ও টার্গেট কাস্টমার নিয়ে কাজ করে মার্কেটে সফলতা অর্জন করে তাদের আর্ক রাইভাল বা চরম প্রতিদ্বন্দ্বী  বলা হয়। সুতরাং কোকাকোলা ও পেপসিকোকে আর্ক রাইভাল বলা যেতে পারে। 

ব্যবসার প্রতিযোগিতা কী?

প্রতিযোগিতা বা কম্পিটিশন বলতে ইন্ডাস্ট্রিকে কেন্দ্র করে সামগ্রিকভাবে বোঝায়। প্রতিদ্বন্দ্বী মিলে মার্কেটে প্রতিযোগিতা সৃষ্টি হয়। যেমন – ফার্মাসিউটিক্যাল ইনডাস্ট্রিতে স্কয়ার, বেক্সিমকো, নোভারটিস, ড্রাগ ইন্টারন্যাশনাল – ইত্যাদি প্রতিদ্বন্দ্বীর সমন্বয়ে প্রতিযোগিতা হয়। সেলস, রেভিনিউ, মার্কেট শেয়ার বৃদ্ধিতে সকলে ইনডাস্ট্রিতে প্রতিযোগিতা করে।  
মার্কেটে তিন ধরণের প্রতিযোগিতা পরিলক্ষিত হয় –

১/ ডিরেক্ট কম্পিটিশন
২/ ইনডিরেক্ট কম্পিটিশন
৩/ পটেনশিয়াল কম্পিটিশন

ডিরেক্ট কম্পিটিশন –

যেখানে প্রতিদ্বন্দ্বীরা একই প্রোডাক্ট একই টার্গেট অডিয়েন্সের কাছে সেল করে। ডিরেক্ট কম্পিটিশনের কিছু বৈশিষ্ট্য হল তারা একই ইনডাস্ট্রি, প্রোডাক্ট, কাস্টমার  নিড, ডিসট্রিবিউশন চ্যানেল এবং টার্গেট অডিয়েন্স নিয়ে কাজ করে। যেমন Nike এবং Addidas, খেলাধুলার পোশাক বিক্রি করে। এখানে দুটি ব্র্যান্ড একই প্রোডাক্ট, ইনডাস্ট্রি এবং কাস্টমার কেন্দ্র করে ব্যাবসা করছে।  

ইনডিরেক্ট কম্পিটিশন –

যেখানে প্রতিদ্বন্দ্বীরা একই প্রোডাক্ট একই টার্গেট অডিয়েন্সের কাছে সেল করে কাস্টমারের ভিন্ন কোনো চাহিদা পূরণ করছে। যেমন Toyota এবং Tesla। Toyota গ্যাস ভিত্তিক গাড়ি উৎপাদন করে বিশাল এক জনগোষ্ঠীকে সেবা দিচ্ছে। Tesla বৈদ্যুতিক গাড়ি উৎপাদনের মাধ্যমে কাস্টমারের ভিন্ন চাহিদা পূরণ করছে।  


পটেনশিয়াল/ রিপ্লেসমেন্ট কম্পিটিশন –

এখানে মূলত নতুন ধারার ব্যবসার সূচনা হয়। সময়ের সাথে সাথে কাস্টমার আচরণ এবং চাহিদাতে পরিবর্তন আসে। সেই চাহিদা পূরণের উদ্দেশ্যে নিত্যনতুন সল্যুশন ব্যবসায়ীরা নিয়ে আসে। এটাকে রিপ্লেসমেন্ট কম্পিটিশন বলে। যেখানে পূর্বের কোনো প্রোডাক্ট পুরোপুরিভাবে অবসোলেট হয়ে যায়।
যেমন – উবার মার্কেটে আসার পরে ট্যাক্সি সার্ভিস এর চাহিদা নেই বললেই চলে। সিএনজি ব্যবহারের প্রবণতাও অনেকাংশে কমে এসেছে।

মার্কেটিং এ একটি কনসেপ্ট আছে যেটাকে বলে Marketing Myopia। কনসেপ্টা খুব সিম্পল। এখানে ব্যবসায়ীরা তাদের প্রোডাক্ট অথবা সার্ভিস নিয়ে এতোটাই ফোকাসড থাকে যে সময়ের সাথে সাথে যে কাস্টমারের বিহেভিওরে পরবর্তন হচ্ছে সেদিকটায় গুরুত্ব আরোপ করে না। যার ফলে প্রতিযোগিতা থেকে ছিটকে যায়। দূরদৃষ্টির অভাবে এরকম হয়ে থাকে। 
যেমন – Nokia ব্র্যান্ডের কথা সবাই মনে করতে পারবে। তারা প্রোডাক্টের ফিজিক্যাল কিবোর্ড নিয়ে এতোটাই ফোকাসড ছিল যে টাচস্ক্রিনের আবির্ভাব তাদের মার্কেট থেকে দূরে ঠেলে দিয়েছিল।   

প্রতিযোগী – টার্গেটিং কাস্টমার

প্রতিদ্বন্দ্বী শুধুমাত্র যে একই রকম পণ্য তৈরী করে শুধু তা-ই নয় বরং একই দামে বিক্রি করে থাকে। গাড়ির বাজারে, Ford হচ্ছে Toyota এর প্রতিদ্বন্দ্বী। কিন্তু, Toyota এবং Rolls Royce প্রতিদ্বন্দ্বী নয়। যদিও তারা একই রকম পণ্য অর্থাৎ গাড়ি তৈরী করে কিন্তু তারা একই কাস্টমারকে টার্গেট করছে না। তাদের উভয়ের পণ্যের দামের মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে তাই তাদের ভোক্তাও ভিন্ন। Toyota একদিকে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বিবেচনায় এনে প্রোডাক্ট সেল করে আবার Rolls Royce এলিট কাস্টমার গ্রুপ টার্গেট করে। টার্গেট অডিয়েন্স ভিন্ন হওয়ার কারণে ব্র্যান্ডগুলো কথা বলার ভয়েসেও ভিন্নতা আসে। 
এখানে ব্র্যান্ড ভয়েস বলতে মূলত ব্র্যান্ডগুলোর কথা বলার এপ্রোচকে বোঝায়। যেমন –
Rolls Royce তার অডিয়েন্সের সাথে লাক্সারি টোনে কথা বলে।
“Your luxury car is waiting” – যারা লাক্সারি লাইফস্টাইল লিড করে অভ্যস্ত তাদের ভাষায় কথা বলছে।
Toyota বলে, “Your satisfaction is guaranteed” – যারা গাড়ি কেনার সময় লাক্সারির চেয়ে কমফোর্ট আর ক্রয়ক্ষমতাকে বিবেচনায় অগ্রাধিকার দেয় তাদের ভাষায় কথা বলে। তাদের কমিউনিক্যশনে সবসময় অর্থনৈতিক বিষয়টা প্রাধান্য পায়।   

প্রতিদ্বন্দ্বীতা ভোক্তাদের জন্য ভালো 

ইনডাস্ট্রি যদি প্রতিদ্বন্দ্বীতাপূর্ণ হয় তাহলে সেটা কাস্টমারের জন্য উইন-উইন হবে। প্রতিদ্বন্দ্বীতার কারণে কাস্টমারের কাছে বিকল্প অপশন থাকে। প্রতিদ্বন্দ্বীরা মানসম্মত পণ্য কিংবা সেবা বাজারে নিয়ে আসে। যার ফলে পণ্য কিংবা সেবার মান নিশ্চিত হয়। 

যদি দুটি কোম্পানি একই পণ্য, একই দামে বিক্রি করে তবে কোয়ালিটি যেটার ভালো বেশী ভোক্তা সেটা কিনতেই আগ্রহী হবে বেশী। 


প্রতিদ্বন্দ্বীতার কারণে ব্র্যান্ডগুলো ক্রেতাদের চাহিদার দিকে গুরুত্ব দেয় বেশি। ব্র্যান্ডের শক্তি কীভাবে আরো শক্তিশালী করা যায়, দুর্বলতা কীভাবে কাটিয়ে উঠা যায় সেগুলো নিয়ে কাজ করে। রিসার্চ এন্ড ডেভলপমেন্ট এবং প্রোডাক্ট ইনোভেশন এর দিকে বিশেষ জোর দেয়। প্রোডাক্ট অফারিং, মার্কেটিং এ ব্যতিক্রম এপ্রোচ লক্ষ্য করা যায়। 

যেমন – মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস ইনডাস্ট্রিতে দেশীয় ব্র্যান্ড নগদ এবং বিকাশ এর কথা টেনে আনা যায়। বিকাশ ইন্ডাস্ট্রি লিডার এবং তারা ক্যাশআউট চার্জ হিসেবে বেশ ভালো টাকা প্রফিট করে। যখন একসাথে অনেক টাকার লেনদেন করা হয় তখন চার্জের পরিমাণটা ক্রেতাদের জন্য কষ্টসাধ্য হয়ে যায়। নগদ ইন্ডাস্ট্রিতে এসেই ক্যাশ আউট চার্জ কমিয়ে দেয় এবং অনেক আকর্ষণীয় অফার কাস্টমারদের দিচ্ছে।

এখানে আমরা ইন্ডাস্ট্রিতে প্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যে তীব্র প্রতিযোগিতা দেখতে পাচ্ছি। এরকম প্রতিযোগিতা ভোক্তাদের জন্য ভালো।  

প্রতিযোগিতার সুবিধাসমূহ – 

ব্যবসার প্রত্যক্ষ প্রতিযোগিদের প্রভাব বেশ কঠিন, কারণ প্রত্যক্ষ প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে যেহেতু পণ্য, দাম ও ক্রেতা সব এক হয়ে থাকে তাই কম্পিটিশন অনেক বেশী টিকে থাকার ক্ষেত্রে।

অন্যদিকে, পরোক্ষ প্রতিযোগিদের ক্ষেত্রে মার্কেট শেয়ারে প্রভাব ফেললেও প্রত্যক্ষ প্রতিযোগিদের মতো এতোটা কঠিন প্রতিযোগিতা হয়না যেহেতু তাদের পণ্য ভিন্ন। ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী তাদের পণ্যের ভ্যালু নির্ভর করে।

অনেকেই ভাবতে পারেন, ব্যবসার প্রতিযোগিতা থাকলে ব্যাবসা করা যায় না কিংবা আপনার ক্রেতার অভাব হতে পারে। বিষয়টি একেবারেই এমন নয়। প্রতিটা কোম্পানির যখন কাস্টমার বেইজ তৈরী হয়ে যায় তখন সে কোম্পানির ক্রেতা অন্য কেউ চাইলেই নিতে পারে না সহজে। আবার প্রতিযোগিতার ফলে কোম্পানির মধ্যে পণ্যের গুণগত মান বজায় রাখার চাপ থাকে ফলে এগিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যেও তারা পণ্যের গুণগত মান বজায় রাখে। যা ব্যবসার উন্নতিতে অবদান রাখে।

১. অনুপ্রেরণা:

ক্যাপিটালিজম এর হৃদয় বলা যেতে পারে প্রতিযোগিতাকে। প্রতিযোগিতা মানুষকে আরো কঠোরভাবে কাজ করার অনুপ্রেরণা দিয়ে থাকে। প্রতিযোগিতা কোম্পানিগুলোকে তাদের পণ্যকে আরো ভালো করার অনুপ্রেরণা দেয়। দলের কর্মস্পৃহা বাড়িয়ে তোলে। আপনার যেসব কর্মচারী কমিশন ভিত্তিক কাজ করে, যদি মার্কেটে অনেক প্রতিযোগিতা দেখে তবে তারাও আরো গুরুত্বের সাথে কাজ করবে সেলস বাড়ানোর জন্য। 

২. অংশীদারত্ব:

অনেক কোম্পানি তাদের প্রতিযোগিদের পছন্দ করে না, কারণ তারা ভাবে তাদের ক্রেতাকে প্রতিযোগী কোম্পানি নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সত্য হচ্ছে, যত বেশী কোম্পানি আপনার প্রতিযোগী হিসেবে থাকবে মার্কেট তত বড় হতে থাকবে। আপনার প্রতিযোগিদের সাথে ভালো সম্পর্ক গড়ে তোলার মাধ্যমে পারস্পরিক বিভিন্ন সুবিধা পাবেন। নেটওয়ার্কিং এর মাধ্যমে একে অপরকে বিভিন্ন টিপস শেয়ারের পাশাপাশি বিভিন্ন ইভেন্টে অংশগ্রহণ করা যেতে পারে। 

৩. ক্রেতা:

প্রতিযোগিতা ভোক্তারদের জন্য অনেক উপকারী, কারণ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ভোক্তারা উন্নত মানের পণ্য পেয়ে থাকে। যেহেতু প্রতিযোগিতা ক্রেতাকে খুশি করে, তাই এটি আপনার ব্যবসার জন্য ভালো। কেমন হতো যদি একই রকম আইসক্রিমই শুধু পাওয়া যেতো, অন্য কোনো কোম্পানির আইসক্রিম পাওয়া না গেলে? একই রকম আইসক্রিম খেয়ে খেয়ে একসময় আপনি বিরক্ত হয়ে যেতেন পরে আর খেতে চাইতেন না যা একটি ব্র‍্যান্ডের জন্য নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। সুতরাং প্রতিযোগী থাকার মাধ্যমে ক্রেতা যেমন একই রকম পণ্যের বিভিন্ন স্বাদ নিতে পারে তেমনই এটি ব্র‍্যান্ডের জন্যও সুদূরপ্রসারী ফলাফল এনে দেয়।

৪. SWOT

প্রতিযোগিতার মাধ্যমে কোম্পানি নিজের শক্তি, দুর্বলতা, সুযোগ ও ঝুঁকি বুঝতে পারে। যেহেতু প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে কোম্পানিকে নিজের শক্তি, দুর্বলতা, ঝুঁকির ব্যাপারে রিসার্চ করতে হয় তাই কোম্পানি সহজেই নিজের এই বিষয়গুলো নিয়ে কাজও করতে পারে। এছাড়া আপনার পণ্য, সার্ভিস, অনলাইন উপস্থিতি কিংবা অন্য যেকোনো কিছু ইমপ্রুভ করতে হয় সময়ের সাথে সাথে, নতুবা মার্কেটে টিকে থাকা যায় না।

৫. শিক্ষা:

আপনার ব্যাবসা যদি সেরকম সফল হয়ে থাকে, তাহলে অন্য কোম্পানিগুলো আপনাকে অনুসরণ করলেও হুমকি বোধ করবেন না। আপনার বরং খুশি হওয়া উচিত যে আপনার ব্যবসাটি অনুসরণ করার মতো যথেষ্ট ভালো হয়েছে। তবে আপনি যদি সবচেয়ে উপরেও থাকেন তবুও আপনার প্রতিযোগী থেকে আপনার অনেক কিছু শেখার আছে। হয়তো খুব ছোট একটি পরিবর্তন আপনার ব্যবসাকে আরো সফল করে দিতে পারে। আপনার ব্যবসা সফল হোক কিংবা না হোক, আপনি আপনার প্রতিযোগীর যেকোনো সিদ্ধান্ত কিংবা ভুল থেকে শিখতে পারবেন।

৬. কাস্টমার সার্ভিস:

আপনি কীভাবে আপনার ক্রেতাকে ধরে রাখবেন? উত্তর হচ্ছে, ভালো কাস্টমার সার্ভিসের মাধ্যমে। খুব ভালো কাস্টমার সার্ভিস একটি ব্যবসার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অনেকে ভাবেন ক্রেতা দামি কিছু কিনলেই তাকে ভালো সার্ভিস দিতে হবে কম দামি জিনিস নিলে প্রয়োজন নেই। ধারণাটি ভুল, যেকোনো মূল্যের পণ্যের বিনিময়েই ক্রেতাকে ভালো সার্ভিস দেওয়া একটি কোম্পানির দায়িত্ব। নতুবা কোম্পানির উপর নেতিবাচক প্রভাব পরতে খুব একটা সময় লাগে না। আর যদি সে কোম্পানির থাকে প্রত্যক্ষ প্রতিযোগী তবে কাস্টমার সার্ভিসে একটু অবহেলা আপনার কাস্টমার বেইজ হারাতে সক্ষম!

যখন আপনার কাস্টমার সার্ভিস ভালো হবে তখন আপনার কোম্পানির সম্মানও বাড়বে।

৭. নিশ:

একটি মার্কেট অনেকগুলো কাস্টমার গ্রুপ নিয়ে গঠিত হয়। একেক ডেমোগ্রাফিকের ভিন্ন ভিন্ন চাহিদা। আবার তাদের ইনটারেস্ট এবং বিহেভিওর অন্যদের থেকে ব্যতিক্রম। এই নির্দিষ্ট গ্রুপটির কিছু বিশেষ চাহিদা কিংবা পছন্দ থাকে যা সচরাচর বৃহত্তর স্বার্থে ব্র্যান্ডগুলো অফার করে না।

যেমন – ‘মেইনস্ট্রিম মার্কেটিং’ ও ‘হালাল মার্কেটিং’। এখানে যে শব্দটি কমন সেটা হচ্ছে ‘মার্কেটিং’। কিন্তু ব্যতিক্রম কি বলতে পারবেন? ‘মেইনস্ট্রিম’ এবং ‘হালাল’ শব্দ দুটি।
মেইনস্ট্রিম মার্কেটিং-এ  একটি বৃহত্তর ডেমোগ্রাফিকের কমন চাহিদাকে কেন্দ্র করে সার্ভ করা হয়, কিন্ত হালাল মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে ডেমোগ্রাফিকের সেগমেন্টটা নিশ। কারণ, এখানে যে নির্দিষ্ট কাস্টমার বেইসকে টার্গেট করে সার্ভ করা হচ্ছে তাদের চাহিদা ও পছন্দ অন্যদের থেকে ব্যতিক্রম। এই গ্রুপ্টা এমন পণ্য  চায় যেটা ইসলামিকালি গ্রহণযোগ্য অর্থাৎ নির্ধারিত সীমারেখার মধ্যে।

প্রতিযোগিতাপূর্ণ ইনডাস্ট্রিতে কেউ যদি এরকম নিশ সেগমেন্ট নিয়ে কাজ করতে পারে তাহলে তীব্র প্রতিযোগিতাও আশির্বাদ হিসেবে কাজ করবে। যেটার মাধ্যমে বিশ্বস্ত কাস্টমার বেইস ও প্রফিট নিশ্চিত হবে।

আপনার কোম্পানির কোন বিষয়টি স্পেশাল? আপনার ভালো মানের পণ্য নাকি আপনার কাস্টমার সার্ভিস নাকি অন্য কিছু? আপনার কোম্পানির একটি ভালো দিক হাজারো প্রতিযোগীর ভিড়ে আপনার কোম্পানিকে কাস্টমার এনে দিবে। 

প্রতিযোগিতা যদিও আপনাকে কঠিন পরীক্ষায় ফেলে দিয়ে চাপে রাখে, কিন্তু এটি দিনশেষে আপনার ব্যবসার জন্যই ভালো ফলাফল নিয়ে আসে। আপনার সৃজনশীল চিন্তাধারা, দুর্দান্ত কাস্টমার সার্ভিস আপনার ক্রেতাকে খুশি করার মাধ্যমে আপনার ব্যবসায় ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। 

প্রতিযোগিতার অসুবিধা সমূহ:

ব্যবসায় প্রতিযোগিতার যেমন ভালো দিক রয়েছে তেমনই রয়েছে কিছু মন্দ দিকও। প্রতিযোগিতা অনেকসময় একপাক্ষিক কোম্পানির শেয়ার কমাতে কিংবা ভোক্তা কমাতে দায়ী যদি চাহিদা কম থাকে। অনেক সময় আবার প্রতিযোগিতার ফলে পণ্যের দাম কমিয়ে দেওয়া হয় যার ফলে লাভ কম হয়। 

ক্রেতাদের ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা সাধারণত ভালো দিক, কারণ ক্রেতাদের তখন পছন্দ করার অনেক সুযোগ থাকে। মার্কেটে যত বেশী প্রতিযোগী বাড়বে ক্রেতার তত বেশী অপশন তৈরী হবে। কিন্তু প্রায় সময় দেখা যায় অতিরিক্ত চাপে অনেক কোম্পানি নিজের পণ্যের মান কমিয়ে ফেলে কারণ গুণগত মান ঠিক রাখলে পণ্যের দাম কমিয়ে সেটা সম্ভব হয়না। যার ফলে ক্রেতাও খারাপ পণ্যের সম্মুখীন হয়। আবার প্রায়ই বিভিন্ন ভালো কোম্পানিও প্রতিযোগিতার চাপে দেউলিয়া হয়ে যায় যার ফলে ভোক্তা ভালো পণ্য হারায়। 

প্রতিযোগিতার ফলে দেখা যায় অনেকেই সফল কোম্পানিগুলোকে কপি করা শুরু করে দেয়। কেউ হয়তো নিজেদের রেস্টুরেন্টে প্রতি শুক্রবার ৫০ জন কাস্টমারকে ফ্রি প্যাস্ট্রি দিচ্ছে, আপনিও সেটা দেখে একই কাজ করছেন। তখন ব্যাপারটি ভোক্তার কাছে কমন হয়ে যায় এবং উভয় দিকের চাহিদা কমে। তাই প্রতিযোগীর কাজ দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে তাকে কপি না করে তার থেকে ভালো কিছু করার চেষ্টা করলে সফলতার আশা করা যায়।

সবশেষে, ব্যবসায় প্রতিযোগিতার ভালো ও মন্দ উভয় দিক থাকলেও মার্কেটে ব্যবসাগুলোকে সচল রাখতে প্রতিযোগিতা প্রয়োজন। এছাড়া প্রতিযোগী ছাড়া কোনো কোম্পানি নিজের দুর্বল দিক গুলো নিয়ে কাজ করে না, পণ্যের গুণগত মান বাড়ানোর চেষ্টা করে না। প্রতিযোগী বাজারে কোম্পানিরা নতুন নতুন আইডিয়া, পণ্য নিয়ে আসে। তাই ব্যবসায় সুস্থ প্রতিযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।