যেকোনো ব্যবসার ক্ষেত্রে প্রতিটা ব্যবসায়ীর লক্ষ্য থাকে অধিক সেলসের মাধ্যমে প্রফিট করা। প্রতিটা ব্যবসার জন্য সেলস খুব গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু ক্ষুদ্র ব্যবসার জন্য সেলস হচ্ছে প্রাণ। সেলস না থাকলে ব্যবসাও থাকবে না! কিন্তু ব্যবসাতে সেলস যেহেতু খুব সহজেই অর্জন করা যায় না, তাই চাইলেই যে কেউ সেলস জেনারেট করতে পারে না। এর জন্য প্রয়োজন অনেক অধ্যবসায় এবং স্ট্র‍্যাটেজি। এই লেখাতে আমরা সেলস কীভাবে ক্ষুদ্র ব্যবসার প্রাণ তা জানবো।

সেলস কী?

ক্রেতা এবং বিক্রেতার মধ্যে এমন একটি লেনদেন যেখানে বিক্রেতা অর্থের বিনিময়ে সেবা বা পণ্য বিক্রি করে তাকে বিক্রয় বা সেলস বলে। উদাহরণস্বরূপ, দোকান থেকে আপনি এক হালি ডিম অর্থের বিনিময়ে ক্রয় করলেন, তখন সেটাকে সেলস বলা যায়। 

একটি সেলস তখনই সম্পন্ন হয় যখন কোনো পণ্য বা সেবা ক্রেতার চাহিদা পূরণ করে এবং তিনি সেই পণ্যটি বা সেবাটি টাকা দিয়ে কিনতে আগ্রহী হোন। 

সুষ্ঠুভাবে সেলস সম্পন্ন হতে হলে ক্রেতা এবং বিক্রেতা সেলসের টার্মসগুলো অর্থাৎ বিক্রির শর্তগুলোতে সম্মতি প্রকাশ করতে হবে। সেলস সংগঠিত হওয়ার আরো একটি শর্ত হচ্ছে, যে পণ্য বা সেবার বিনিময় করা হবে সে পণ্য বা সেবাটি যাতে বিনিময়যোগ্য হয়। এছাড়া বিক্রেতা যদি পণ্য বা সেবার আইনগত স্বত্বাধিকারী না হন তবে এক্ষেত্রে সেলস সংগঠিত হবে না।

সুতরাং সেলস সংগঠিত হওয়ার বিষয়গুলো অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে। যেকোনো লেনদেনই সেলসের আওতাধীন হবে না। যেমন যদি কোনো পণ্য বা সেবা অর্থের বিনিময় ছাড়া সংগঠিত হয় তবে সেটাকে সেলস হিসেবে ধরা হয় না বরং একে দান বলা যেতে পারে।

কী করলে বিক্রি বাড়ানো যায়? 

সেলস জেনারেট নিয়ে হাজার হাজার বই লেখা হয়েছে, বাজারেও আছে। আমরা ভালো সেলসম্যানের কিছু বৈশিষ্ট্য যা আয়ত্বে আনলে বিক্রয় বাড়ানো সম্ভব তা নিয়ে সংক্ষেপে কিছু বলব –

১. পণ্য সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকা: 

আপনি যে পণ্যটি সেল করার চেষ্টা করছেন সে পণ্যটি সম্পর্কে যদি আপনার সঠিক ধারণাই না থাকে তাহলে সেলস জেনারেট করা আপনার জন্য কঠিন হবে। কারণ, কাস্টমারকে আপনার পণ্য এর ব্যাপারে আগ্রহী করে তুলতে পণ্যের সঠিক বিবরণ তুলে ধরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ধাপ। পণ্যটির সুবিধাসমূহ, ব্যবহারিতা, কেন এটা ব্যবহার করা উচিত ইত্যাদি সম্পর্কে পরিপূর্ণ ধারণা থাকতে হবে। একটি পণ্য বিক্রির ক্ষেত্রে আপনি বা আপনার কাছের মানুষ এই পণ্যটি কীভাবে ব্যবহার করেছেন, কি উপকারিতা পেয়েছেন সেই গল্পটি শেয়ার করার মাধ্যমে সেলস জেনারেট করা অত্যন্ত সহজ হয়ে যায়।

২. কাস্টমার সম্পর্কে সঠিক ধারণা রাখা: 

কোনো পণ্য সেল করার আগে আপনার জানা উচিত আপনি কার কাছে পণ্যটি সেল করছেন? আপনার পণ্যের টার্গেট কাস্টমার কারা সে সম্পর্কে যদি আপনার সঠিক ধারণাই না থাকে তবে ভুল মানুষের কাছে পণ্যের প্রচার করলেও সেলস জেনারেট হওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে। যেমন, যদি আপনি আপনার প্রোডাক্টটি কোনো কোম্পানির কাছে সেল করতে চান তবে এটি নিশ্চিত করুন যে আপনি ওই কোম্পানি সম্পর্কে সঠিক ধারণা রাখেন। তারা তাহলে আপনার রিসার্চের কারণে খুশি হয়েও যেতে পারে।

৩. কাস্টমারের আগ্রহকে মাথায় রাখা: 

আপনি যখন আপনার কাস্টমার সম্পর্কে সঠিক ধারণা পাবেন তখন আপনার কাজ হচ্ছে কাস্টমার কী চাচ্ছে সেটা বোঝা এবং মাথায় রাখা। তাহলে আপনার পণ্য বা সেবাটি তাদের আগ্রহ বা প্রয়োজন অনুযায়ী তুলে ধরা সহজ হবে। আপনি যদি আপনার প্রোডাক্ট এমন মানুষের কাছে তুলে ধরেন যার আপনার পণ্য সম্পর্কে কোনো আগ্রহ নেই তবে এই সময়টা আপনার জন্য নিতান্তই অলাভজনক হবে।

৪. খুব বেশী জোর না করা: 

আপনার সেল করতে হবে দেখে যে আপনি খুব বেশী জোর করবেন প্রোডাক্ট নিয়ে সেটাও কিন্তু উচিত না, এটি কাস্টমারের মধ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাই কোনো পণ্যের তথ্য শেয়ার করার পর যদি দেখেন ক্রেতা এখনো তেমন আগ্রহী না তবে সেখানেই থেমে যাওয়া বুদ্ধিমানের কাজ। মনে রাখবেন, একজন সেলস পার্সনের আচরণ লং টার্মে সেলস জেনারেটের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে।

৫. বিশ্বাস অর্জন করা: 

সেলসের খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হচ্ছে বিশ্বাস অর্জন করতে পারা। আপনি কি কখনো এমন কারো থেকে পণ্য ক্রয় করবেন যাকে আপনি বিশ্বাস করেন না? উহু, কিনবেন না। এটাই স্বাভাবিক। তাই আপনি যখন কোনো কিছু সেল করার চেষ্টা করবেন সবার আগে তার বিশ্বাস অর্জনের চেষ্টা করুন। আপনি যদি একবার তার বিশ্বাস অর্জনে সক্ষম হোন তবে সেখান থেকে আপনার সেলস জেনারেট করা সহজতর হয়ে যাবে।

৬. বন্ধুত্বসুলভ আচরণ করুন:

সেলসের পথটি কখন মসৃণ হয় জানেন? যখন আপনি কাস্টমারের সাথে বন্ধুত্বসুলভ আচরণ করেন। একজন ক্রেতা কখনোই রবোটিক আচরণের মানুষের সাথে কথা বলে খুব একটা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে না, আপনিও করবেন না নিশ্চয়ই? তাই খুব বেশী জোর না করা এবং বিশ্বাস অর্জন করার সহজ উপায় হচ্ছে কাস্টমারের সাথে সৌজন্যমূলক এবং বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যবহার  করা। 

৭. সেলসের সাথে অভিজ্ঞতা অর্জন:

সেলস একটি অভিজ্ঞতালব্ধ প্রক্রিয়া। যত অভিজ্ঞতা বাড়ে তত সেলস জেনারেট হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। যেহেতু সেলস মানেই আপনাকে লক্ষ্য স্থির করতে হবে, ধৈর্য্য ধরতে হবে এবং সাহস রাখতে হবে। সেলসে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে আপনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সেলস ইন্টার্ন হিসেবে কাজ করতে পারেন। 

সেলস – ক্ষুদ্র ব্যবসার প্রাণ

একটি ক্ষুদ্র ব্যবসার মূল চালনা শক্তি কী যদি প্রশ্ন করা হয় তবে কোনো সংকোচ ছাড়া বলা যাবে সেলস। কারণ একটি ক্ষুদ্র ব্যবসার ক্ষেত্রে মূলধন থাকে কম, কিন্তু খরচ সে অনুযায়ী কম হয় না বরং ব্যাবসা  চলমান রাখতে প্রতিটি খাতেই খরচও চলমান থাকে। এই খরচ উঠিয়ে আনতে তাই প্রয়োজন নিয়মিত সেলস। 

সেলসের ধাপ সমূহ কী?

সেলসের ধাপ বলতে এমন কিছু পুনরাবৃত্তিযোগ্য প্রক্রিয়াকে বোঝায় যাকে কাজে লাগিয়ে সেলস টিম একটি পটেনশিয়াল কাস্টমারের মাধ্যমে সেলস জেনারেট করে। সেলস এর ধাপ সমূহ সেলসের একটি রোড ম্যাপ বলা যেতে পারে। এই ম্যাচ ছাড়া মার্কেটিং টিমের যেকোনো কার্যক্রমই ব্যর্থ হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। ক্ষুদ্র ব্যবসার ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীর মূল লক্ষ্য থাকে সেলস টার্গেট পূরণ করা। 

একটি আদর্শ সেলসের প্রক্রিয়া অনভিজ্ঞ একজন সেলস পার্সনকে সেলস জেনারেট করতে সহায়তা করে। সেলসের প্রক্রিয়াকে ৭ টি ধাপে সাজানো যায়।


১. প্রশ্ন করুন এবং শুনুন: 

প্রোডাক্ট স্পেশালিষ্ট Josh Gillespie বলেন, কাস্টমারকে সেলসের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রশ্ন করুন তবে অবশ্যই সেটি যেন প্রাসঙ্গিক হয়।

আপনার পটেনশিয়াল কাস্টমারকে এমন ভাবে প্রশ্ন করুন যাতে মনে হয় তিনি পণ্যটি নিবেন। যেমন এই প্রশ্ন করবেন না “আপনি কি পণ্যটি নিতে ইচ্ছুক?” বরং এই প্রশ্ন করুন “আপনি কীভাবে পেমেন্ট করতে ইচ্ছুক?”

২. যোগাযোগ স্থাপন করুন:

সেলসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দ্বিতীয় ধাপ হলো আপনার অডিয়েন্সের সাথে যোগাযোগ করা। এটি বিভিন্ন মাধ্যমের দ্বারা হতে পারে। যেমন, সরাসরি কল করা, সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে যোগাযোগ করা কিংবা ইমেইল করা। তবে ফোন কল অনেক খরচের বিষয় – নিজের বা কর্মচারীর মানবঘন্টা / ম্যান আওয়ার দরকার হয় অনেক। আর ফোনের বিল তো আছেই। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে ৮০% ফোন কলের মধ্যে মাত্র ২% কল কাস্টমার রিসিভ করে এবং সেটা পরের ধাপ পর্যন্ত এগিয়ে যায়। কিন্তু উন্নত বিশ্বে সবচেয়ে ইফেক্টিভ যোগাযোগ মাধ্যম হচ্ছে ইমেইল। 

এক সমীক্ষায় দেখা গেছে ৭৮% সেলস রিপ্রেজেনটেটিভরা জানিয়েছেন, তারা বিভিন্ন ইভেন্ট কিংবা এ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়েছেন ইমেইল মার্কেটিং এর কারণে। ইমেইল করার সবচেয়ে ভালো সময় হচ্ছে সকাল ৮ টা থেকে ১০ টা এবং দুপুর ৩ টা থেকে ৪ টা। এই সময়গুলোতে সাধারণত মানুষ ব্যস্ত থাকে কম যার ফলে ইমেইল চেক করার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। কিন্তু বাংলাদেশে ইমেইল মার্কেটিং কাজ করে না বললেই চলে। বাংলাদেশের ক্রেতাদের মেসেঞ্জার কিংবা হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ পাঠালে ভালো কাজে দেয়। 

৩. কাস্টমারকে ফলাফল দেখান: 

সেলস জেনারেটের ক্ষেত্রে কাস্টমারের সাথে যোগাযোগ করার ক্ষেত্রে তাকে আপনার পণ্যের উপকারীতাটা দেখান। কাস্টমারের রিভিউ এক্ষেত্রে ভীষণ কাজে দেয়। এতে করে কাস্টমার আপনার পণ্য তার জন্য কতটা ফলপ্রসূ হবে সেটা বুঝতে পারবে, যা সেলস জেনারেটে ভূমিকা রাখে।

৪. আপত্তিজনক কথা এড়িয়ে যান: 

সেলসে আপত্তিজনক কথা শোনাটা অনেক স্বাভাবিক একটি বিষয়। যেমন, “আপনার পণ্যের দাম বেশী” এমন কথা শুনলে তার ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া দেখাবেন না বরং কথোপকথন চলমান রাখুন। আপনার তরফ থেকে কাস্টমারকে বোঝানোর চেষ্টা করুন আপনার পণ্য তাকে কী দিচ্ছে এবং কীভাবে সেটা যে দাম রাখা হয়েছে সেই পরিমাণ টাকার চেয়ে অনেক বেশি ভ্যালু বা মূল্য দিচ্ছে।  । 

“আরো সুবিধা দিন”, সাধারণত আমরা কোনো কিছু কিনতে গেলে চাই পণ্যের দাম কম হবে, কোয়ালিটি ভালো হবে, কোয়ান্টিটি বেশী হবে ইত্যাদি। কিন্তু সবকিছু একসাথে পাওয়া যেমন অসম্ভব তেমনই কম দামে ভালো পণ্য পাওয়াও তেমন অসম্ভব। তাই কাস্টমারকে নেতিবাচক উত্তর না দিয়ে তাকে বোঝানোর চেষ্টা আপনার পণ্যটি নিলে কি কি সুবিধা পাবে, আপনার পণ্যের মান কেন আপনার কম্পিটিটরদের থেকে ভিন্ন।

“আপনার পণ্য আমার চাহিদা পূরণ করছে না” –  আপনি যখন কাস্টমারের পয়েন্ট অফ ভিউ থেকে দেখবেন তখন আপনার বুঝতে সুবিধা হবে কাস্টমার কেনো আপনার এপ্রোচে আগাচ্ছে না কিংবা কে্নো আপনার পণ্যটি তার চাহিদা পূরণ করতে পারছে না। তাই সেলস পার্সনের জায়গা থেকে সরে গিয়ে কাস্টমারের জায়গা থেকে চিন্তা করুন। 

সেলসের বিভিন্ন আপত্তিকর কথাগুলো পার করে সেলস জেনারেট করা প্রথমে খুব সহজসাধ্য ব্যাপার না হলেও এটি অভিজ্ঞতার সাথে সাথে আয়ত্ত্বে চলে আসবে। তাই সেলসে অভিজ্ঞতা অর্জন করা অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।

৫. আপনার কাস্টমারকে বোঝার চেষ্টা করুন: 

আপনার কাস্টমারকে কেনাকাটার ক্ষেত্রে কোন বিষয়টি আগ্রহী করে তোলে সে বিষয়টি বোঝার জন্য সময় ব্যয় করুন। সময় নিন তাদের ইচ্ছা, আগ্রহ, ভয়, চ্যালেঞ্জ সমূহ বোঝার জন্য। আপনি যত আপনার কাস্টমারকে বোঝার চেষ্টা করবেন সেলস ফানেল ক্রিয়েট হওয়া ততটাই সহজ হয়ে যাবে। কাস্টমারের চাহিদা বোঝার চেষ্টা করুন এবং সেটি স্মার্টনেসের সাথে সমাধান করুন।

৬. সিদ্ধান্ত নিতে উদ্বুদ্ধ করুন:  

“হয়তো কিনবো” এটি সেলসের ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। আপনি যখন বুঝবেন কাস্টমার আপনার পণ্যের প্রতি আগ্রহী তখন তাকে কেনার জন্য সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করুন, উদ্ধুদ্ধ করুন। আপনি যখন কাস্টমারের সাথে কথা বলবেন তখন তাকে কিনবেন কি না জিজ্ঞেস করবেন না উনাকে সরাসরি সিদ্ধান্ত নিতে এপ্রোচ করুন। আমরা দোনোমোনো থাকা অবস্থায় জীবনে বহুবার ‘নিয়ে নেন স্যার/ ম্যাডাম, ঠকবেন না” – শুনে সিদ্ধান্ত নিয়ে কিনে ফেলেছি – তাই না? 

৭. সেলটি শেষ করুন:

আপনি সবগুলো ধাপই খুব ভালোভাবে অতিক্রম করেছেন এবং এবার আপনার কাজ হলো সেল প্রক্রিয়াটি শেষ করা। এই সবগুলো ধাপ অতিক্রমের পর কাস্টমার যদি তখনো দ্বিধায় ভুগে তবে তাকে প্রশ্ন করুন আর কি জানতে পারলে তার সিদ্ধান্ত নেওয়াটা সহজ হবে। এক্ষেত্রে মনে রাখুন, এই ধাপে কাস্টমারকে সিদ্ধান্ত নিতে এপ্রোচ করতে হবে। কোনো অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্ন করা যাবে না। তার সকল দ্বিধা শেষ হলে এবার চুক্তিটি শেষ করুন এবং সেলস প্রক্রিয়াটি শেষ করুন।

যদি এই সম্পূর্ণ প্রক্রিয়ার পরও উত্তর না বোধক হয় তবে তাকে রেগুলার ফলোআপ করুন, পরবর্তীতে তার মাধ্যমে সেলস জেনারেট করা যায় কি না সেই চেষ্টা করুন।

ডাইরেক্ট সেলস কী ও এর সুবিধাগুলো কী কী?

ডাইরেক্ট সেলস হল এমন সেলস যা একজন উৎপাদক, পরিবেশক বা দোকানে বিক্রি করার পরিবর্তে সরাসরি ভোক্তার কাছে বিক্রি করেন। ডাইরেক্ট সেলসগুলো সাধারণত খুচরা বিক্রির স্থান বাদে অনলাইনে, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর বাড়িতে কিংবা কর্মস্থলেও হয়ে থাকে। অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ডাইরেক্ট সেলসের মাধ্যমে সেল করেন এতে করে ভোক্তা ও বিক্রেতার মধ্যে কোনো মধ্যস্থতাকারীর প্রয়োজন হয় না।


১. আয় বৃদ্ধি করে: 

সেলার ডাইরেক্ট সেলসের মাধ্যমে মধ্যস্বত্বভোগীর কমিশন/লাভটা নিজে নেওয়ার মাধ্যমে তাদের আয় বৃদ্ধি করতে পারে। টাকা বেশি আসলে কাজের প্রতি ডেডিকেশনও বাড়ে, ফলে আয়ও বাড়ে। সফল বিক্রেতারা প্রায়শই স্পষ্ট লক্ষ্য তৈরি করে এবং লক্ষ্যগুলো নির্ধারণ করে তাদের আয় বাড়ায় যা তাদের লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করে।

২. সময়ে নমনীয়তা দেয়:

ডাইরেক্ট সেলসের একটি বিশেষ সুবিধা হলো সেলার নিজের সুবিধা মতো সময়কে শিডিউল করতে পারে। এর মাধ্যমে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাজকে অধিক গুরুত্ব দিতে সক্ষম হওয়া যায়। সেলার যারা ফুল টাইম চাকরি করেন, কলেজ/ভার্সিটি পড়াশুনা করেন কিংবা যাদের বাচ্চা আছে তাদের জন্য সময়ের এই নমনীয়তা থাকাটা অনেক সুবিধাজনক।

৩. স্বব্যবস্থাপনা:

ডাইরেক্ট সেলস সাধারণত স্বায়ত্তশাসনের অনুভূতি উপভোগ করতে দেয়। তারা সাধারণত নিজেদের লক্ষ্য, নিয়ম, সেলস অবজেক্টিভ ও কাস্টমার সার্ভিস নিজেরাই সাজিয়ে থাকেন। 

৪. ঘর থেকে কাজ করার সুযোগ:

ডাইরেক্ট সেলের মাধ্যমে সেলার ঘরে বসেই নিজের সুবিধা মতো সময়ে কাজ করার সুবিধা পায়। এটি সময় এবং অর্থ দুটোকেই বাঁচিয়ে দেয় কার‍ণ এতে করে স্পেসিফিক কোনো কর্মস্থলে যেতে হয় না।

৫. কাস্টমারের সাথে সম্পর্ক স্থাপন:

ডাইরেক্ট সেলসের মাধ্যমে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কাস্টমারের সাথে সরাসরি যোগাযোগ ও সম্পর্ক স্থাপন করার সুযোগ হয়। যার ফলে কাস্টমারের সমস্যাগুলো তারা সহজেই বুঝতে পারে এবং কাস্টমারও উপকৃত হন। এর মাধ্যমে কাস্টমারের কাছে বিশ্বস্ত হওয়া সহজ হয় এবং কাস্টমারের চাহিদা সম্পর্কে সঠিক ধারণা পাওয়া যায়।

৬. বিভিন্ন বিজনেস স্ট্র‍্যাটেজি:

ডাইরেক্ট সেলসে একজন সেলার যেহেতু সরাসরি ক্রেতার সাথে যোগাযোগ করেন তাই শুধু সেলসের স্ট্র‍্যাটেজি না খাটিয়ে মার্কেটিং এর অন্যান্য স্ট্র‍্যাটেজিও কাজে লাগাতে পারেন। 

৭. দাম ও অন্যান্য খরচ:

সরাসরি বিক্রিতে  যেহেতু হোলসেলার, রিটেলার পয়েন্ট এর প্রয়োজন হয় না তাই অনেক খরচ কমে যায়, যার ফলে দাম-ও অনেকটা সাশ্রয়ী হয়ে থাকে। 

৮. ব্যবসায় স্কিল গঠন:

ডাইরেক্ট সেলস প্রায়ই সেলারকে কাস্টমার সার্ভিস, সেলস এবং মার্কেটিং স্কিল গঠন করতে সহায়তা করে। সেলার যে যে স্কিলগুলো শিখতে পারে –

  • লিডারশিপ
  • অর্গানাইজেশন
  • ধৈর্য 
  • আন্তঃসম্পর্ক 
  • যোগাযোগ 
  • প্রেজেন্টেশন 
  • লিসেনিং
  • আর্থিক ব্যবস্থাপনা 
  • সময় ব্যবস্থাপনা 
  • প্রজেক্ট ব্যবস্থাপনা 
  • দরকষাকষি 

৯. কাস্টমার সন্তুষ্টি:কাস্টমার সন্তুষ্টি নির্ভর করে কাস্টমার সার্ভিসের উপর। এবং কাস্টমার সার্ভিস তখনই ভালো হয় যখন কাস্টমারকে পূর্ণাঙ্গ সময় দেওয়া হয় যা ডাইরেক্ট সেলসের মাধ্যমে সহজেই সম্ভব। যেহেতু ক্রেতার সাথে বিক্রেতার সরাসরি যোগাযোগ হয়। কাস্টমার সন্তুষ্টির মাধ্যমে ব্যবসার প্রচারণা বৃদ্ধি পায় যা সেলস জেনারেট করতে বিশেষভাবে কার্যকরী।

অনলাইনে সেলসম্যানশিপ

ডিজিটাল এই যুগে অনলাইনে ক্রেতাদের কেনাকাটার রেশিওটা আগের তুলনায় অনেক বেশি। যেহেতু অনলাইন ভিত্তিক ব্যবসার এখন স্বর্ণযুগ চলছে তাই বলাবাহুল্য অনলাইনে সেলস্ম্যানশিপ কিরকম হওয়া উচিত। সেলস যেহেতু ক্ষুদ্র ব্যবসার প্রাণ তাই অনলাইন বিক্রির দক্ষতা কীভাবে বাড়ানো যেতে পারে?
আমরা অনলাইনে ফেইসবুক ভিত্তিক ব্যাবসা করছি তারা দেখবো আমাদের পেইজে একটা সাইডে পেইজ ‘রেসপন্স রেট’ নামে একটা পার্সেন্টেজ দেখায়। এই পার্সেন্টেজ যতো বেশি হবে সেলের সম্ভাবনা তত বেশি হবে। অনলাইনে ওয়ান টু ওয়ান কথোপকথনের কোনো সুযোগ নেই তাই কাস্টমার যখন পেইজে কিছু জানতে চায় ঠিক তখন-ই রেস্পন্স করলে লিডগুলো কনভার্সনে কনভার্ট করা সহজ হবে ইনশা’আল্লাহ।

আরেকটা দিকের কথা বলবো, সেটা হল যতোবেশি হিউম্যান সেন্ট্রিক উত্তর দেয়া যায় তত ভালো। এতে করে কাস্টমারের মনে হবে রবোটিক কোনো কিছুর সাথে সে কথা বলছে বরং মানুষের সাথে কথা বলছে। 

সবশেষে, একটি ক্ষুদ্র ব্যাবসা পরিচালনা ও চলমান রাখার ক্ষেত্রে সেলস অনেক বড় ভূমিকা রাখে। তাই সেলসের স্ট্র‍্যাটেজি ঠিক করে সেলস ফানেল সহজেই তৈরী করা সম্ভব। তবে যেকোনো ব্যাবসা  দাঁড় করানোই যেহেতু অনেকটা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার তাই এক্ষেত্রে প্রয়োজন অনেক ধৈর্য, অধ্যবসায়, সুষ্ঠ পরিকল্পনা। সবসময় শিখুন, নিজেকে আপডেট রাখুন – আর গড়ে তুলুন আপনার ব্যাবসা।