যে কোনো ব্যাবসা শুরুর আগে আপনাকে জানতে হবে ব্রেক-ইভেন এনালাইসিস কি। কারণ, ব্রেক-ইভেন এনালাইসিস আপনার ব্যবসার গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে এবং ফিনানশিয়াল প্ল্যানিং করতে সাহায্য করবে।
ব্রেক-ইভেন এনালাইসিস এর মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন, আপনি কতটি পণ্য বা সেবা বিক্রি করার মাধ্যমে আপনার প্রাথমিক মূলধন তুলতে পারবেন এবং লাভ ও করতে পারবেন। যদি আপনি ব্রেক-ইভেন হিসাব না জানেন তাহলে লাভ তো দূরের কথা, আপনার মূলধন তুলে আনাও দুঃসাধ্য হয়ে যেতে পারে।
১। ব্রেক-ইভেন এনালাইসিস কি?
ব্রেক-ইভেন এনালাইসিস হল কোন ব্যাবসা বা কম্পানির এমন একটা সমচ্ছেদ বিন্দু, যে পরিমাণ পণ্য বা সেবা বিক্রি করলে কম্পানি লাভবান হবে; কিংবা অন্তত লস হবেনা।
” ব্রেক-ইভেন তত্ত্ব এমন একটি ভিত্তির উপর স্থাপিত, যা পণ্য বিক্রয়ের একটি নূন্যতম অবস্থা বুঝায়, যে পরিমাণ বিক্রি করলে না লাভ হবে, না লস হবে” (এম.বি. ড্যালিমান)
একটা উদাহরণ দেয়া যাক। যেমন ধরুন আপনার একটি বইয়ের দোকান আছে। তাহলে কতটি বই বিক্রি করলে আপনার দোকানের ভাড়াসহ, কর্মচারীর টাকা এবং বই কেনার টাকা উঠে আসবে, এই হিসেবটা বের করা যায় ব্রেক-ইভেন ফর্মূলা ব্যবহার করে। অথবা কোনো মোবাইল কম্পানির প্রতি মিনিট কত টাকা চার্জ রাখলে এবং কি পরিমাণ মিনিট সার্ভিস দিলে কম্পানির মূলধন উঠে আসবে, এই হিসেব বের করার এক পদ্ধতি হল ব্রেক-ইভেন এনালাইসিস।
ব্রেক-ইভেন এনালাইসিস বুঝতে হলে আরো দুটি টার্ম আপনাকে বুঝতে হবে। সেগুলো হল ফিক্সড খরচ এবং ভ্যারিয়েবল খরচ।
- ফিক্সড খরচ : আপনার কিছু মাসিক খরচ আছে যেগুলো ব্যাবসা চলুক আর না চলুক, খরচ গুলো আসবেই। যেমন, দোকান ভাড়া, কর্মচারীর বেতন।
- ভ্যারিয়েবল খরচ : যা বিক্রির সাথে সাথে পরিবর্তিত হয়। যেমন, পণ্যের ক্রয়মূল্য, ডিসকাউন্ট অফার, পার্ট টাইম কর্মচারী।
২। ব্রেক-ইভেন এনালাইসিস এর গুরুত্ব
অনেক ক্ষুদ্র এবং মাঝারি ধরনের ব্যবসায়ীরা অনেক সময় ফলপ্রসূ ফিনানশিয়াল এনালাইসিস করে না। তারা জানে না কি পরিমাণ পণ্য বা সেবা বিক্রয় করলে তাদের মূলধন ফিরে পাবে।
লিজ সিন্তথিয়ার মতে, “ব্রেক-ইভেন এনালাইসিস হল এমন একটি পদ্ধতি যার মাধ্যমে নূন্যতম সেলস এর পরিমাণ বের করা যায় যেন ব্যবসায় অন্তত লস না হয়”
ব্রেক-ইভেন এনালাইসিস এমন একটি শক্তিশালী মাধ্যম যা প্ল্যানিং এবং গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণে সাহায্য করে। খরচ, সেলস পরিমাণ, প্রোডাক্ট প্রাইসিং এবং অন্যান্য জিনিস বের করতেও ব্রেক-ইভেন এনালাইসিস এর প্রয়োজন হয়।
২.১। প্রাইসিং করতে
প্রোডাক্ট প্রাইস কেমন হবে তা বুঝতে সাহায্য করে ব্রেক-ইভেন ফর্মূলা। প্রোডাক্ট প্রাইসিং ফলপ্রসূ করার পেছনে অনেক সাইকোলজি জড়িত থাকলেও, আপনাকে জানতে হবে কিভাবে এটি মোট প্রোফিট মার্জিনকে প্রভাবিত করে।
২.২। ফিক্সড খরচ বুঝতে
অধিকাংশ মানুষ প্রোডাক্ট প্রাইসিং এর ক্ষেত্রে ভ্যারিয়েবল খরচ কে বেশি প্রাধান্য দেয়, প্রোডাক্ট প্রাইস কত হলে তা ভ্যারিয়েবল খরচ তুলতে সাহায্য করবে। কিন্তু ভ্যারিয়েবল খরচ ছাড়াও, ফিক্সড খরচ গুলোও কভার করতে হবে, যেমন ইন্সুরেন্স কিংবা ওয়েব ডেভেলপমেন্ট ফি। ব্রেক-এনালাইসিস এর মাধ্যমে এই খরচটা বের করে আনা সম্ভব।
২.৩। খরচ ভুলে যাওয়া থেকে বাঁচতে
ক্ষুদ্র ব্যবসার ক্ষেত্রে খরচের হিসেব অনেকেই রাখে না, অথবা ভুলে যায়। কিন্তু ব্রেক-ইভেন এনালাইসিসের মাধ্যমে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র খরচগুলোও হিসেবের মধ্যে নিয়ে আসা যায়।
২.৪। সেলস টার্গেট ঠিক করতে
ব্রেক-ইভেন ফর্মূলার মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন লাভ করার জন্য ঠিক কতটা পণ্য আপনাকে বিক্রি করতে হবে। এটি আপনার বিক্রয়ের লক্ষ্য নিশ্চিত করতে সাহায্য করবে। আপনি যখন আপনার সেলস টার্গেট জানবেন তখন উদ্যোগ নিয়ে কাজ করা সহজ হবে।
২.৫। স্মার্ট সিদ্ধান্ত নিতে
অনেক উদ্যোক্তা আবেগের উপর বিজনেস ডিসিশন নিয়ে থাকেন। তাদের কাছে যখন মনে হয় বিজনেসটি ভালো হবে, তখন অগ্রসর হয়। কিন্তু এটার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হল ডেটাভিত্তিক অগ্রসর হওয়া। সফল উদ্যোক্তারা তাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে বিভিন্ন ডেটাভিত্তিক ফ্যাক্ট এর উপর নির্ভর করে। আপনার সামনে ডেটা থাকলে তা আপনার কাজকে অনেক সহজ করে দেবে।
২.৬। ফিন্যানন্সিয়াল ঝুঁকি কমাতে
অনুমানভিত্তিক প্রোডাক্ট প্রাইসিং খুব বেশি হলে তা আপনার জরিমানার কারণ হতে পারে। আবার কম হলে তা আপনার লসের কারণ হতে পারে। তাই প্রোডাক্ট প্রাইসিং ঠিক রাখতে ব্রেক-ইভেন এনালাইসিস গুরুত্বপূর্ণ, যা আপনার ফিন্যানন্সিয়াল ঝুঁকি কমাবে।
২.৭। বিজনেস ফান্ড সংগ্রহ করতে
আপনি যখন বিজনেস চালিয়ে নেয়ার জন্য ঋণ বা বিনিয়োগ গ্রহণ করবেন, স্বাভাবিকভাবেই তা আপনাকে পরিশোধ করতে হবে। কিন্তু আপনার ফিন্যানন্সিয়াল প্ল্যান যদি বাস্তবসম্মত না হয় তাহলে আপনি মূলধন তুলে লাভ করতেও হিমশিম খাবেন। সেক্ষেত্রে ঋণ পরিশোধ করা দুরহ কাজ হয়ে যাবে। ব্রেক-ইভেন এনালাইসিস আপনার বাস্তবসম্মত ফিনানশিয়াল প্ল্যান করতে সাহায্য করবে। এটি সঠিক প্রোডাক্ট সেলস এর মাধ্যমে আপনার মূলধনের পাশাপাশি লাভ ও উঠিয়ে আনতে সাহায্য করবে।
৩। কীভাবে ব্রেক-ইভেন হিসেব বের করবেন
আপনার এভারেজ সেলিং প্রাইস থেকে ভ্যারিয়েবল খরচ বাদ দেয়ার পর যা থাকবে, তা দিয়ে ফিক্সড খরচকে ভাগ করলে যা পাওয়া যাবে, তাই হল ব্রেক-ইভেন পয়েন্ট।
অর্থাৎ, ফর্মূলা: ব্রেক-ইভেন পয়েন্ট= ফিক্সড খরচ/( এভারেজ সেলিং প্রাইস- ভ্যারিয়েবল খরচ)
ফর্মূলাটি এনালাইসিস করলে আমরা দেখতে পাই, প্রোডাক্ট এর এভারেজ প্রাইস বাড়ালে সেলস সংখ্যা কমবে, ভ্যারিয়েবল খরচ কমালে সেলস সংখ্যা কমবে। অপরদিকে, এভারেজ প্রাইস কমালে সেলস কমালে সেলস বাড়াতে হবে এবং ভ্যারিয়েবল প্রাইস বাড়লেও সেলস বাড়াতে হবে। এই ফর্মূলার মাধ্যমে আপনি নূন্যতম সেলস সংখ্যা এবং নূন্যতম প্রোডাক্ট প্রাইসিং বের করবেন। কিন্তু আপনাকে লাভ করতে হলে টার্গেট আরো বেশি নিতে হবে।
এখন আসুন উদাহরণ এর মাধ্যমে বুঝবো কিভাবে ব্রেক-ইভেন ফর্মূলা কাজ করে। সেজন্য এই টেম্পলেট ফাইল টি খুলুন। তারপর ‘Make a copy’ করে নিন। তারপর সেখানে আপনাদের ডেটা দিয়ে হিসেব বের করতে শিখুন।
৩.১। ডেটা সংগ্রহ করুন
এই ধাপে আপনি সকল ধরনের খরচের লিস্ট করুন – প্রোডাক্ট খরচ, ভাড়া এবং ব্যাংক চার্জ সহ সবকিছু। তারপর সেগুলো খাতায় লিখুন।
তারপর খরচগুলোকে দুই ভাগে ভাগ করুন।
১/ ফিক্সড খরচ
২/ ভ্যারিয়েবল খরচ
৩.১.১। ফিক্সড খরচ
ফিক্সড খরচ হল সেই খরচ যা প্রতি মাসেই আপনাকে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ ব্যয় করতে হয়। বিজনেসের লাভ লোকসান যাই হোক, সে পরিমাণ খরচ আপনার হবেই।
যেমন, আপনার যদি একটি কাপড়ের দোকান থাকে। তাহলে ধরুন সেখানে আপনার দোকান ভাড়ায় যায় মাসিক ২০,০০০/- টাকা, কর্মচারীদের স্যালারি দিতে হয় ১০,০০০/- টাকা এবং অন্যান্য বিল পরিশোধ করতে হয় ৫০০০/- টাকা। তাহলে আপনার মোট ফিক্সড খরচ হল মাসিক ৩৫,০০০/- টাকা।
এবার স্প্রেডশিটটা ব্যবহার করে আপনার বিজনেসের মাসিক ফিক্সড খরচ বের করুন।
৩.১.২। ভ্যারিয়েবল খরচ
ভ্যারিয়েবল খরচ হল সেগুলো যেগুলো পরিবর্তিত হয়। যেমন, আপনার কাপড়ের ব্যবসার জন্য সালোয়ার কামিজের পাইকারি দাম বা হোলস্যাল প্রাইস ৬০০/- টাকা, প্রতি পিস বিক্রিতে ফেইসবুক বুস্টিং এর জন্য খরচ হয় ২০/- টাকা, ডেলিভারি চার্জ প্রতি পার্সেল ৮০/- টাকা। এই খরচ গুলো আপনার সবসময় হয় না, শুধু বিক্রির সাথে সম্পর্কিত বলে এগুলো ভ্যারিয়েবল খরচের মধ্যে পড়বে। তাহলে আপনার মোট ভ্যারিয়েবল খরচ হল ৭০০/- টাকা।
এবার আপনি স্প্রেডশিট ব্যবহার করে আপনার ব্যবসার ভ্যারিয়েবল খরচ বের করুন।
৩.২। এভারেজ সেলস প্রাইস / গড় বিক্রয় মূল্য নির্ণয় করুন
আপনার প্রোডাক্টগুলোর প্রতি পিসের বিক্রির গড় দাম বা এভারেজ সেলস প্রাইস নির্ধারণ করুন। যেমন, আপনি একটি ড্রেস বিক্রি করেন ১০০০/- টাকায়, আরেকটি ৬০০/- টাকা, এবং আরেকটি ৮০০/- টাকাতে। তাহলে তিনটি যোগ করে তিন দিয়ে ভাগ দিলে গড় দাম আসবে ৮০০/- টাকা। এটা হল আপনার পণ্যের এভারেজ প্রাইস।
৩.৩। স্প্রেডশিটে ডেটাগুলো তুলুন
এবার স্প্রেডশিটের নির্দিষ্ট ঘরে সবগুলো ডেটা তুলুন। উপরের কাপড়ের হিসেব থেকে আমরা পেয়েছি ভ্যারিয়েবল কস্ট হল ৭০০/- টাকা এবং এভারেজ প্রাইস ধরেছি ৮০০/- টাকা। সুতরাং ব্রেক-ইভেন ফর্মূলা অনুসারে, এভারেজ প্রাইস থেকে ভ্যারিয়েবল কস্ট বাদ দিলে প্রফিট মার্জিন পাই ১০০/- টাকা। তারপর মার্জিন ১০০/- টাকা দিয়ে ফিক্সড প্রাইস ৩৫,০০০/- ভাগ করেলেই ব্রেক-ইভেন ইউনিট আসে ৩৫০। অর্থাৎ প্রতি মাসে ৩৫০ পিস কাপড় বিক্রি করলে ব্যবসায় কোন লাভ বা লস হবেনা। কিন্তু লাভ করার জন্য অবশ্যই ৩৫০ পিসের চেয়েও বেশি বিক্রি করার টার্গেট নিতে হবে।
৩.৪। ভ্যালু বদলে বিজনেস অ্যানালাইসিস করুন
ব্রেক-ইভেন ফর্মূলা এনালাইসিস করলে দেখা যায়, এভারেজ প্রাইস সবসময় ভ্যারিয়েবল কস্ট এর চেয়ে বেশি রাখতে হবে। না হয় গাণিতিক ভুল হবে।
এখন, এভারেজ প্রাইস কে সবসময় ভ্যারিয়েবল কস্টের চেয়ে বেশি রেখে, এ দুটি খরচ পরিবর্তন করে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ফিনানশিয়াল প্ল্যান তৈরি করা যায়।
যেমন, ভ্যারিয়েবল প্রাইস অপরিবর্তিত (৭০০/-) রেখে, এভারেজ প্রাইস বাড়িয়ে ৯০০/- টাকা ধরলে সেলস সংখ্যা কমে হয় ১৭৫ টি।
এভারেজ প্রাইস কমিয়ে ৭৫০/- টাকা করলে ব্রেক ইভেন ইউনিট সংখ্যা বেড়ে হবে ৭০০ টি! অর্থাৎ লস থেকে বাঁচতেই বিক্রি করতে হবে অন্তত ৭০০ পিস সালোয়ার কামিজ!
অর্থাৎ, আপনার এভারেজ সেলস প্রাইস যত কম হবে, আপনার সেলস বাড়ানোর পেরেশানি তত বাড়বে। আর এভারেজ প্রাইস যত বাড়বে, আপনার সেলস বাড়ানোর পেরেশানি তত কমবে।
এখন, এভারেজ প্রাইস অপরিবর্তিত (৮০০/-) রেখে, আপনি পাইকারি কেনাতে ৫০ টাকা কমে কিনতে পারেন অর্থাৎ ভ্যারিয়েবল কস্ট কমিয়ে ৬৫০/- টাকা করলে ব্রেক ইভেন ইউনিট সংখ্যা কমে হয় ২৩৩ টি।
অর্থাৎ কেনা বা অন্যান্য ভ্যারিয়েবল খরচ কমাতে পারলে সে অনুপাতে ব্রেক ইভেন ইউনিট সংখ্যা কমে আসে।
প্রোডাক্ট এর এভারেজ প্রাইস খুব বেশি হলে কম সংখ্যক সেলস টার্গেট ফিলাপ করাও কঠিন হয়ে যেতে পারে। আবার প্রোডাক্ট এর মানের সাথে সামঞ্জস্য রেখেও প্রাইসিং এর চিন্তা মাথায় রাখতে হবে। তাই, এই ধরনের জটিল সিদ্ধান্ত গুলো নিতে ব্রেক-ইভেন এনালাইসিস এর বিকল্প নেই।
৩.৫। ব্রেক-ইভেন এনালাইসিসের ব্যবহার
চার ধরনের ক্ষেত্র দেখা যায় যেখানে ব্রেক-ইভেন এনালাইসিস প্রয়োগ করার প্রয়োজন হয়।
৩.৫.১। নতুন ব্যাবসা শুরু করতে গেলে
যেকোনো নতুন ব্যাবসা শুরু করতে গেলে অবশ্যই ব্রেক-ইভেন এনালাইসিস করা লাগবে। এটি শুধু আপনার ব্যাবসা টিকিয়ে রাখতে সাহায্য করবেনা, বরং প্রোডাক্ট সম্পর্কে বিভিন্ন ধরনের গবেষণা, বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং প্রোডাক্ট প্রাইসিং কৌশল সম্পর্কে ধারনা দিতে সাহায্য করবে।
৩.৫.২। নতুন পণ্যর দাম নির্ধারণে
আপনি যেকোনো নতুন পণ্য তৈরি করতে গেলে কি পরিমাণ খরচ হতে পারে সে সম্পর্কে আইডিয়া দিতে ব্রেক-ইভেন এনালাইসিস গুরুত্বপূর্ণ। আপনার যদি ফিক্সড খরচের বাহিরে কোন ভ্যারিয়েবল খরচ নাও থাকে, তবুও নতুন পণ্য গঠনে কিছু ভ্যারিয়েবল খরচ যোগ হবে যা ব্রেক-ইভেন এনালাইসিস এর মাধ্যমে আপনি পণ্যের দাম নির্ধারণ করতে পারবেন।
৩.৫.৩। নতুন সেলস চ্যানেল খুলতে
নতুন কোন বিক্রয় চ্যানেল খুলতে গেলে আপনার কিছু ভ্যারিয়েবল কিংবা ফিক্সড খরচ বাড়বে। সেক্ষেত্রে সেলস পরিমাণ এডজাস্ট করতে আপনার ব্রেক-ইভেন এনালাইসিস করা লাগবে। যেমন, আপনি ফেইসবুকে সেলস করে থাকেন, কিন্তু এখন নতুন ওয়েবসাইট বা ইন্সট্রাগ্রাম কিংবা পিন্টারেস্ট খুলে সেখানে সেলস করতে চান। এক্ষেত্রে ইন্সট্রাগ্রাম এর বিজ্ঞাপন বাবদ চার্জ যোগ হতে পারে। তখন, আপনার নতুন খরচ এডজাস্ট করতে ব্রেক-ইভেন এনালাইসিস লাগবে।
৩.৫.৪। বিজনেস মডেল বদল
আপনার বিজনেস মডেল পরিবর্তন করলেও ব্রেক-ইভেন এনালাইসিস লাগবে।
৩.৬। ব্রেক-ইভেন এনালাইসিস এর দুর্বলতা
ব্রেক-ইভেন এনালাইসিস এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকলে কিছু সীমাবদ্ধতাও রয়েছে।
৩.৬.১। এটি সম্ভাব্য চাহিদা নির্ণয় করতে ব্যর্থ
ব্রেক-ইভেন এনালাইসিস এর মাধ্যমে সেলস টার্গেট নির্ধারণ করা গেলেও, আদৌ টার্গেট পূরণ করতে পারবে কিনা তা নিশ্চিত করতে পারে না। কারণ, এটি কাস্টমার চাহিদা সম্পর্কে কোন ধারণা দিতে পারে না।
৩.৬.২। নির্ভরযোগ্য ডেটার উপর নির্ভরশীল
মাঝে মধ্যে একই কস্ট ফিক্সড খরচ এবং ভ্যারিয়েবল খরচ দুই ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হয়। সেক্ষেত্রে ব্রেক-ইভেন এনালাইসিস এর মাধ্যমে সেলস টার্গেট বের করা জটিল হয়ে যায়। যেমন, কর্মীদের বেতন সাধারণত ফিক্সড হয়, কিন্তু মাঝে মাঝে সেলস এর উপর নির্ভর করে কর্মীদের বেতন ও পরিবর্তিত হয়। সেক্ষেত্রে এই পদ্ধতি সঠিক সমাধান দিতে ব্যর্থ হয়।
৩.৬.৩। মাল্টি-প্রোডাক্ট হিসাবে ব্যর্থ
অনেক বিজনেসে বিভিন্ন ধরনের প্রোডাক্ট নিয়ে ডীল করে। যেমন, কারো একই সাথে কাপড়, জুতা এবং কসমেটিকস এর বিজনেস থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে, এভারেজ হিসেব সঠিকভাবে নির্ণয় করা কঠিন।
ব্রেক-ইভেন এনালাইসিস ফর্মূলায় একই সময়ে শুধুমাত্র একটি ভ্যালু চেইঞ্জ করা যায়। কিন্তু মাঝে মাঝে প্রোডাক্ট এর এভারেজ প্রাইস কমে গেলে তখন সেলস বাড়াতে এবং একই সাথে ভ্যারিয়েবল কস্ট কমের মধ্যে রাখার চিন্তা করতে হয় (ফর্মুলা অনুসারে)।
৩.৬.৪। সময়ের হিসেব নেই
ব্রেক-ইভেন এনালাইসিস এ সময়ের কোন ভ্যারিয়েবল নেই। আপনি হিসেব করার সময় নিজ থেকেই টাইম ধরে হিসেব করতে হবে। সেটা মাসভিত্তিক কিংবা বাৎসরিক হতে পারে। মাসভিত্তিক হিসেবে আপনি সপ্তাহিক সেলস মনিটর করতে পারবেন না। আবার বাৎসরিক হিসেব করলে মাসভিত্তিক সেলস মনিটর করতে পারবেন না। সেজন্য আপনাকে ভাল ক্যাশ ফ্লো ম্যানেজমেন্ট কিংবা সম্ভাব্য সলিড সেলস এর উপর নির্ভর করতে হবে।
তাছাড়া, আপনার ভবিষ্যতে কি হবে না হবে তা ব্রেক-ইভেন এনালাইসিসের মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব নয়। যেমন, আগামী বছর আপনার কাঁচামালের দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে গেল। ব্রেক-ইভেন এনালাইসিস এর মাধ্যমে সেলস বের করলে আপনার সেলস টার্গেট অনেক বেড়ে যাবে, নয়ত আপনার প্রোডাক্ট প্রাইস অনেক বাড়াতে হবে। প্রোডাক্ট প্রাইস অনেক বেড়ে গেলে আপনাকে হারাতে হবে কাস্টমার।
৩.৬.৫। প্রতিদ্বন্দ্বীতা উপেক্ষা করে
আপনি যখন মার্কেট প্রতিযোগিতায় নামবেন তখন প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য ব্রেক-ইভেন এনালাইসিস কোন কাজে আসে না।
দেখা গেল আপনার প্রতিদ্বন্দ্বী কোন একটা প্রোডাক্ট এর প্রাইস দ্রুত পরিবর্তন করছে। তখন তাদের সাথে পাল্লা দিতে ব্রেক-ইভেন এনালাইসিসের মাধ্যমে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সম্ভব হয় না।
এক কথায় ব্রেক-ইভেন এনালাইসিস আপনাকে একটা সোজা সাপটা হিসেব করতে সাহায্য করবে যেটা নুন্যতম সফলতার জন্য প্রযোজ্য। কিন্তু এটিই আপনার বিজনেসে বিশাল পরিবর্তন আনতে একমাত্র রিসার্চ মাধ্যমে হতে পারে না।
৩.৭। ব্রেক-ইভেন পয়েন্ট কমানোর কিছু উপায়
৩.৭.১। ফিক্সড কস্ট কমানো
ব্রেক-ইভেন এনালাইসিস ফর্মূলা থেকে আমরা দেখতে পাই, ফিক্সড কস্ট সেলস সংখ্যার সমানুপাতিক। অর্থাৎ, ফিক্সড কস্ট বাড়লে সেলস বাড়াতে হবে এবং ফিক্সড কস্ট কমালে সেলস সংখ্যা কমে যাবে। ফিক্সড কস্টের মধ্যে রয়েছে কর্মচারীদের বেতন, শপ রেন্ট কিংবা বিদ্যুৎ বিল। সেক্ষেত্রে কর্মচারী কম রেখেও ফিক্সড কস্ট কমানো যায়। অথবা অফলাইন বিজনেসের পরিবর্তে অনলাইন বিজনেস করলে স্টোর ভাড়া বাবদ কস্ট কমে যায়।
৩.৭.২। এভারেজ প্রাইস বাড়ানো
ব্রেক-ইভেন এনালাইসিস ফর্মূলা অনুসারে, এভারেজ প্রাইস সেলস সংখ্যার ব্যাস্তানুপাতিক। অর্থাৎ, প্রোডাক্ট প্রাইস বাড়ালে সেলস সংখ্যা কমে যাবে এবং প্রোডাক্ট প্রাইস কমালে সেলস সংখ্যা বাড়াতে হবে। সুতরাং, প্রোডাক্ট প্রাইস বাড়ানোর মাধ্যমেও সেলস ইউনিট কমানো সম্ভব।
৩.৭.৩। ভ্যারিয়েবল কস্ট কমানো
ব্রেক-ইভেন এনালাইসিস ফর্মূলা অনুসারে, ভ্যারিয়েবল কস্ট সেলস সংখ্যার সমানুপাতিক। অর্থাৎ, ভ্যারিয়েবল কস্ট কমালে সেলস সংখ্যা কমবে এবং ভ্যারিয়েবল কস্ট বাড়ালে সেলস সংখ্যা বাড়াতে হবে। সুতরাং, ভ্যারিয়েবল কস্ট কমানোর মাধ্যমেও সেলস ইউনিট কমানো সম্ভব।