আইডিয়া ভ্যালিডেশন কী? (What is Idea Validation)

উদ্যোক্তা মানেই আইডিয়া। এমন কোনো উদ্যোক্তা নেই যার মাথায় নতুন নতুন ব্যাবসার আইডিয়া আসে না।  

ধরুন, বেশ কিছুদিন যাবত আপনার মাথায় একটি নতুন ব্যাবসার আইডিয়া কাজ করছে। আপনি এমন একটি ডেটাবেস বানাতে চাচ্ছেন যেখানে বাংলাদেশের প্রতিটা জেলা, উপজেলা, এবং  থানা পর্যায়ে যত মুদি দোকান আছে তার নাম ও ঠিকানা  দেখাবে। সার্চ অপশনে গিয়ে সার্চ করলেই পুরো ডিটেইলস চলে আসবে। এই সার্ভিসটা মূলত আপনি বাংলাদেশের বিভিন্ন FMCG (Fast Moving Consumer Goods ফাস্ট মুভিং কনসিউমার গুডস) বিক্রি করা কোম্পানিগুলোর জন্য বানানো চাচ্ছেন, এতে করে তারা সহজেই আপনার সার্ভিস  ব্যবহার করে তাদের মার্কেটিং কার্যক্রম আরো সহজ করতে পারবে।

এখন ব্যবসায়িক আইডিয়া হিসেবে এই আইডিয়া কতটা কার্যকর? এটা বোঝার জন্য যে  পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হয়, তাকেই বলা হয় আইডিয়া ভ্যালিডেশন। 

আইডিয়াকে কেন ভ্যালিডেট করা প্রয়োজন? (Why should ideas be validated)

আপনি নিশ্চয়ই এমন কোনো বিজনেস আইডিয়ার পেছনে শ্রম, মূলধন খাটাবেন না যেটার কোনো ভবিষ্যৎ নেই কিংবা যে আইডিয়ার কোনো ভ্যালু মার্কেটে নেই। আইডিয়া ভ্যালিডেশন এর মাধ্যমে আমরা খুব সহজেই আমাদের আইডিয়া কতটা মার্কেটের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, মানুষের কাছে সেটা কতটা গ্রহণযোগ্য তা বুঝতে পারি।

না বুঝে কিংবা হুট করে নেওয়া সিদ্ধান্তের ফলে একটি বিজনেস আইডিয়া খুব ভালো মনে হলেও ব্যর্থ হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, গুগল গ্লাস Google Glass এর আইডিয়া ইউনিক না নতুন  হলেও এটি মানুষের সমস্যা সঠিক ভাবে সমাধান করতে না পারায় এটি ব্যর্থ বিজনেস আইডিয়ায় রূপান্তরিত হয়েছে। গুগল গ্লাসের মার্কেটিং যেমন ভুল ছিলো তেমনই প্রাইসিং ও ঠিক ছিলো না। সব মিলিয়ে এটি একটি ফ্লপ বিজনেস ছিলো

আইডিয়া ভ্যালিডেশন রিস্ক কমাতে, মার্কেটে সার্ভিসের ভ্যালু বাড়াতে ও খরচ কমাতে বিশেষ ভাবে সাহায্য করে। একটি আইডিয়া অবশ্যই মূলধন ও সময় খাটানোর আগে ভ্যালিডেট করা প্রয়োজন, নতুবা সময় এবং মূলধন দুটোই অপচয় হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

আইডিয়া ভ্যালিডেশনের প্রধান কারণ হচ্ছে আপনার আইডিয়াটির প্রকৃতপক্ষে চাহিদা নিরূপণ করা, কারণ সব ব্যাবসা আইডিয়াই “যুগান্তকারী বিজনেস আইডিয়া” তে পরিণত নাও হতে পারে। যেকোনো আইডিয়া সফল হতে হলে প্রথম ও প্রধান যে শর্তটি পূরণ করতে হবে তা হলো “সমস্যার সমাধান করতে পারার ক্ষমতা”। এক্ষেত্রে আইডিয়াটি যতটা স্মার্টনেসের সাথে সমস্যা সমাধান করতে পারে সেটার ব্যবসায় সফল হবার সম্ভাবনা ততটাই বাড়তে থাকে।

আইডিয়া কিভাবে যাচাই করা হয়? (How to validate an Idea?)

আইডিয়া যাচাই করার বিভিন্ন প্রক্রিয়া রয়েছে। যেসব আইডিয়া মার্কেটে আগে থেকেই প্রতিষ্ঠিত এবং অনিশ্চয়তার হার কম সেগুলোর ক্ষেত্রে আইডিয়া ভ্যালিডেশন এর প্রয়োজন নেই। তবে যেসব আইডিয়া এবং প্রোডাক্ট একেবারে নতুন সেগুলোর ক্ষেত্রে আইডিয়া ভ্যালিডেট করা প্রয়োজন। ভ্যালিডেশন সাধারণত অনুমানকে যাচাই করার প্রক্রিয়াকে বোঝায়। 

আইডিয়া ভ্যালিডেশনের প্রক্রিয়া (Idea Validation Process)

যদিও আইডিয়া ভ্যালিডেশন এর বিভিন্ন প্রসেস রয়েছে তবে মূল প্রক্রিয়াটি খুব সাধারণ এবং সহজ।

আইডিয়া ভ্যালিডেশন এর ৬ টি ধাপ রয়েছে –

১. কাস্টমার ও আপনি যে সমস্যাগুলো সমাধান করছেন সেগুলো শনাক্ত করুন-

বেশীরভাগ বিজনেস সফল না হওয়ার একটি কারণ হলো টার্গেট অডিয়েন্স সম্পর্কে জ্ঞানের অভাব এবং কোন সমস্যাটি সমাধান করছে সেটা শনাক্ত না করতে পারা। ধরুন, আপনি একটি আইটি ফার্ম খুলতে চাচ্ছেন যেখানে তরুণদের কম্পিউটার কোর্স করানো হয়। এমতাবস্থায় আপনার টার্গেট অডিয়েন্স হচ্ছে ১৮ – ২৬ বয়সীরা যারা কম্পিউটারের বিভিন্ন কোর্স করার মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সার হতে চাচ্ছে। এক্ষেত্রে আপনি বেকারত্ব সমস্যাটি সমাধানের চেষ্টা করছেন। 

এটি একটি উদাহরণ মাত্র, এরকম সব উদ্যোগ শুরুর একটা কারণ ও উদ্যোগটি কাদের জন্য গ্রহণ করা হয়েছে সেটি শনাক্ত করার মাধ্যমে আইডিয়া ভ্যালিডেশনের প্রথম ধাপটি সম্পন্ন হয়। কাস্টমারের সমস্যাটি সমাধানের জন্য আপনার Think Like a Customer মেথডটি এপ্লাই করতে হবে। কাস্টমারের জায়গা থেকে ভাবতে হবে। একে ডিজাইন থিঙ্কিং (Design Thinking) ও বলে। 

২. অনুমানকে সঠিকভাবে নির্ধারণ করা

আইডিয়া ভ্যালিডেশনের দ্বিতীয় ধাপ হচ্ছে অনুমানকে সঠিকভাবে নির্ধারণ করা। আপনার কাস্টমার বা সমস্যাগুলো সম্পর্কে কিছু অনুমান বের করতে হয় যা ব্যাবসা শুরুর আগে যাচাই করা প্রয়োজন। এই অনুমানগুলো যাচাইয়ের মাধ্যমে ধারণা করা যেতে পারে যে আপনার বিজনেস আইডিয়াটি সফল হবে কি না! 

৩. পরীক্ষণ মেথড ও সফলতার শর্তসমূহ জানা

আইডিয়া ভ্যালিডেশনের মেথড সমূহ সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা রাখা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ প্রতিটা আইডিয়া ভিন্নতার কারণে ভিন্ন মেথডের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করে। এর মধ্যে খুব সাধারণ মেথড হলো – 

  • অনুসন্ধান করা – সরাসরি কাস্টমার থেকে প্রোডাক্ট/সার্ভিস সম্পর্কে ফিডব্যাক নেওয়া। যেমন: কাস্টমারের ইন্টারভিউ নেওয়া, অবজারভেশন করা, অনলাইন সার্ভে করা। এক্ষেত্রে অন্যান্য পদ্ধতির তুলনায় সরাসরি কাস্টমারের ইন্টারভিউ নেওয়া ফলপ্রসূ ফিডব্যাক নিয়ে আসে। কারণ ইন্টারভিউর ক্ষেত্রে কাস্টমারের সাথে আপনার সরাসরি কথোপকথন হয়। অন্তত ২০-২৫ জনের ইন্টারভিউ নেওয়ার মাধ্যমে আপনার আইডিয়া সম্পর্কে সঠিক ফিডব্যাক ও তারা কি কি সমস্যা ফেইস করছে এবং সেগুলো সমাধানের জন্য কি করা প্রয়োজন তা সঠিকভাবে জানা যায়। 
  • প্রি-সেল/প্রি-অর্ডার – যেকোনো একটা প্রোডাক্ট লঞ্চ করার আগে সে প্রোডাক্ট সম্পর্কে অডিয়েন্সের মধ্যে চাহিদা তৈরী করতে বা চাহিদা সম্পর্কে জানতে প্রি-অর্ডার নেওয়া বা প্রি রেজিস্ট্রেশন পদ্ধতি খুব কার্যকরী। একটি ওয়েবসাইটের ল্যান্ডিং পেইজে রেজিস্ট্রেশন করতে কিংবা প্রি অর্ডার করতে ইমেইল দিয়ে রাখার মাধ্যমে আপনি বুঝতে পারবেন আপনার পণ্য বা সার্ভিসটি সম্পর্কে মানুষের আগ্রহ আছে কি না।
  • সুবিধাসমূহ তুলে ধরা- কোনো প্রোডাক্ট বা সার্ভিস শুরুর আগে ম্যানুয়ালি সে সার্ভিস বা পণ্যটির সুবিধা সমূহ ভোগ করার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এতে করে আপনার আইডিয়া সম্পর্কে মানুষের ধারণা হলো এবং আপনার আইডিয়াটির প্রতি মানুষের চাহিদা আছে নাকি সেটাও জানা গেলো।.

৪. সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অনুমানটি যাচাই করা

এবার পালা সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অনুমানটি যাচাই করে দেখার। এক্ষেত্রে সবচেয়ে কমন প্রশ্নটি হলো – “আমি কীভাবে পটেনশিয়াল কাস্টমার পাবো?” অথবা “কোন পরিবর্তনে আমার ব্যাবসাটা বন্ধ হয়ে যাবে?” 

উত্তর হচ্ছে অনুসন্ধান করুন। কাস্টমারের জায়গা থেকে নিজেকে প্রশ্ন করুন এবং আপনার আইডিয়ার সাথে জড়িত মানুষদের সাথে কথা বলুন। যেমন, আপনি যদি পণ্য সরবরাহকারী হয়ে থাকেন তবে আপনার পণ্যের ধারণা দিতে মুদির দোকান কিংবা সুপারশপগুলোতে কথা বলুন। কথা বললেই আপনি সেবা বা পণ্যের চাহিদা, বাজার দাম ইত্যাদি সম্পর্কে অবগত হবেন।

৫. চালিয়ে যাওয়া, ফিরে যাওয়া কিংবা বাদ দেওয়া

আইডিয়া ভ্যালিডেশন এর সব ধাপ অতিক্রমের পর এবার আপনার কাছে ফলাফল আসবে এবং এই ফলাফলের ভিত্তিতে আপনি হয় আপনার আইডিয়ার দিকে অগ্রসর হবে বা আবার প্রথম ধাপ থেকে শুরু করবেন কিংবা আইডিয়াটি বাদ দিবেন। যদি আপনার আইডিয়াটির ফলাফল ইতিবাচক হয় তাহলে আপনি পরবর্তী ধাপে এগিয়ে যাবেন। আপনার আইডিয়া যদি সফলতা থেকে অনেকটা দূরে থাকে তবে আপনার উচিত আবার প্রথম থেকে ধাপগুলো অতিক্রম করে আসা। এবং সর্বশেষে যদি আপনার আইডিয়া অসফল হয় তবে আপনার উচিত এখানেই আইডিয়াটি নিয়ে সকল কার্যক্রম স্থগিত করে দেওয়া। 

৬. অবশিষ্ট অনুমান/ধারণা গুলো যাচাই করুন 

আপনার আইডিয়াটি যদি সফল হয় তবে এবার আপনার অনুমানের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ধাপের পরবর্তী ধাপটি যাচাই করে দেখা প্রয়োজন। যেহেতু প্রথম ক্ষেত্রে আপনি কাস্টমারের কোন সমস্যাটি সমাধান করবেন সেটা নির্ধারণ করেছেন তাই এবার কাজ হচ্ছে সেই বাছাই করা সমস্যাটি সমাধান কিভাবে করবেন এবং সমস্যাটি সমাধানে কি কি বাঁধা অতিক্রম করতে হবে তা নির্ধারণ করা।

সবশেষে, সব ঠিকভাবে শেষ হলে আপনার আইডিয়া সম্পর্কে কাস্টমারের পর্যাপ্ত চাহিদা আছে এ বিষয়টি স্পষ্ট হওয়ার পর আপনি আপনার আইডিয়াটি কার্যকর করতে যা যা পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন তা নেবেন।

স্টার্টআপ আইডিয়া ভ্যালিডেশন উদাহরণ (Startup Idea Validation Examples):

প্রতিটা স্টার্টআপ বিজনেস আইডিয়াকেই আইডিয়া ভ্যালিডেশন প্রসেসের মধ্য দিয়ে যাওয়া উচিত, নতুবা আপনার উদ্যোগটি কতটা মার্কেটে চাহিদাসম্পন্ন তা বোঝা কঠিন হয়ে যায়। ইতোমধ্যেই আমরা জেনেছি এমন অনেক বিজনেস আইডিয়া ছিলো যা শুনতে খুব কার্যকরী মনে হলেও ফ্লপ বিজনেস হিসেবে এখন পরিচিত।

স্টার্টআপ আইডিয়া ভ্যালিডেশনের বেশ কিছু উদাহরণ হিসেবে যদি বলি তাহলে অনেক গুলো বিজনেসের নামই বলা যাবে যেগুলো ভ্যালিডেশনের মাধ্যমে নিজেদের আইডিয়াকে কার্যকর করেছেন। এর মধ্যে কিছু হলো – Buffer, MailChimp.

Buffer

সোশিয়াল মিডিয়াকে যারা বিজনেসের জন্য ব্যবহার করছেন, তারা অনেকেই Buffer এর নাম শুনে থাকবেন। বাফার হচ্ছে এমন একটি সোশিয়াল মিডিয়া ম্যানেজমেন্ট প্লাটফর্ম যার মাধ্যমে আপনারা আপনাদের কন্টেন্ট গুলো পোস্ট এবং শিডিউল করে রাখতে পারবেন। 

এটি ২০১৭ সালে আয় করেছে $15 million ARR (Annual Recurring Revenue) . এবং ব্যবহারকারীরা সর্বমোট ৩২৫,২৭৯,৫২৫ টি পোস্ট করেছেন বাফার এর মাধ্যমে। 

বাফারের ফাউন্ডার Joel Gascoigne বাফার শুরু করার আগে এটি কতটা ফলপ্রসূ আইডিয়া তা জানার জন্য ভ্যালিডেশন করে নেন। তিনি বলেন, 

“আমার পূর্ববর্তী স্টার্টআপের ব্যর্থতা থেকে আমি এটা বুঝতে পেরেছি যে, আমি যদি চাই আমার এই আইডিয়াটি একটি শখ কিংবা আমার ব্যবহার্য কোনো টুল থেকে বেশী কিছু হোক; তবে আমার এই আইডিয়াটি টেস্ট করে দেখতে হবে যে এটির চাহিদা মানুষের মধ্যে আছে নাকি।”

এক্ষেত্রে তিনি একটি ২ পেইজের ওয়েবসাইট নির্মাণ করেন যেটায় ভিজিটররা নিজেদের ইমেইল সাবমিট করলে পরবর্তীতে Joel তাদের মেইল করে তার আইডিয়ার ব্যাপারে ফিডব্যাক নিতেন।

এই ফিডব্যাক গুলোর উপর ভিত্তি করেই তিনি বাফারের কার্যক্রম শুরু করেন, যা বাফারের সফলতায় ভূমিকা রাখে।

MailChimp:

ডিজিটাল মার্কেটিং এর জগতে খুব জনপ্রিয় একটি মার্কেটিং এর নাম হচ্ছে ইমেইল মার্কেটিং। হয়তো আপনিও আপনার মেইলে এমন অনেক প্রমোশোনাল মেইল দেখেছেন। এই প্রমোশোনাল মেইলগুলো এতো মানুষকে কীভাবে পাঠানো হয় ভেবেছেন কখনো? অনেকেই বুঝে ফেলেছেন কথা বলছি MailChimp কে নিয়ে। 

ইমেইল মার্কেটিং এর জগতে এক যুগান্তকারী আবিষ্কারের নাম হচ্ছে MailChimp, যার কো ফাউন্ডার হলেন Ben Chestnut. প্রথম দিকে উনার একটি ওয়েব ডিজাইন এজেন্সি ছিলো যা তিনি Dan Karzuis এর সাথে সম্মিলিত ভাবে শুরু করেন। সেখানে ক্লায়েন্টদের কাজ করতে করতে তারা বুঝতে পারলেন মানুষ ইমেইল মার্কেটিং সার্ভিস চাচ্ছেন।

তাই তারা দুজন মিলে এমন একটি টুল বানিয়ে ফেললেন যেটা দিয়ে ইমেইল মার্কেটিং করা যায়, তবে সেটা ছিলো একটি সাইড প্রজেক্ট মাত্র। ২০০৭ সালে দুজন কো-ফাউন্ডারই সিদ্ধান্ত নেন যে তারা ওয়েব ডিজাইন এজেন্সি ক্লোজ করে MailChimp এর কার্যক্রম পুরোপুরি ভাবে শুরু করবেন।

MailChimp পুরোপুরি শুরু করার পূর্বে Ben & Dan ইমেইল মার্কেটিং এর ব্যাপারে মানুষের ফিডব্যাক নিয়ে নিজেদের আইডিয়াকে ভ্যালিডেট করে ফেলেছিলেন। যার ফলে একটি ব্যর্থ প্রজেক্ট এর সাইড প্রজেক্টটি একটি সফল বিজনেস আইডিয়াতে রূপান্তরিত হয়।

MailChimp এর ২০২১ সালের একটি পরিসংখ্যানে দেখা যায়, এর ইউজার ছিলো ১৩ মিলিয়ন। ২.৪ মিলিয়ন মাসিক এক্টিভ ইউজার ছিলো, ৮ লক্ষ পেইড কাস্টমার ছিলো।  

আইডিয়া ভ্যালিডেশনের সফলতার চাবিকাঠি (Idea Validation Success Factors):

যেহেতু প্রতিটি আইডিয়াই নতুন এবং ভিন্ন তাই সকল আইডিয়াকে একই ভ্যালিডেশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যাচাই করা সম্ভব না। তবে সফল ও সূক্ষ্ম ভাবে আইডিয়াকে ভ্যালিডেট করার জন্য কিছু সাধারণ বিষয় খেয়াল রাখা প্রয়োজন। সেগুলো হলো –

১। নির্মমভাবে জটিল হওয়া – সাধারণত কেউ যখন বিজনেস শুরু করে তখন খুব জটিল চিন্তা করতে চায় না নিজের কাজ নিয়ে। কিন্তু সবসময় সাদামাটা চিন্তার মাধ্যমে ঝুঁকিকে এড়ানো সম্ভব না। তাই জটিলভাবে চিন্তা করতে হবে নিজের কাজের ব্যাপারে।

২। ভ্যালিডেশন প্রসেসকে সহজ করা – ভ্যালিডেশন প্রক্রিয়াকে সবসময় সহজ রাখা উচিত, এতে করে পুরো প্রক্রিয়াটি দ্রুত ইফেক্টিকভাবে সম্পন্ন হবে। প্রতিটি অনুমানকে নিয়ে কাজ না করে সবচেয়ে জটিল ও ইফেক্টিভ অনুমানটি নিয়ে কাজ করা ফলপ্রসূ। 

৩। সঠিক অডিয়েন্স টার্গেট করা – ভ্যালিডেশন প্রসেসকে সফলভাবে সম্পন্ন কর‍তে ফিডব্যাক নেওয়ার ক্ষেত্রে সঠিক অডিয়েন্স টার্গেট করা অত্যন্ত জরুরি। আপনার বিজনেস আইডিয়া সম্পর্কে যদি অডিয়েন্সের ধারণাই না থাকে তাহলে সে বিষয়ে তাদের ফিডব্যাক নেওয়া ফলপ্রসূ হবে না। যেমন, আপনি যদি কন্টাক্ট লেন্সের বিজনেস করতে চান তবে সেই বিজনেস সম্পর্কে যাদের ধারণা আছে তাদের থেকে ফিডব্যাক নিলে আপনার আইডিয়াটি ভ্যালিডেট হওয়া সহজ হবে।

৪। ভুল থেকে শিক্ষা নিন – আপনার মতো অনেকেই নতুন আইডিয়া নিজে কাজ করেছেন এবং ভুলের জন্য সফল হতে পারেন নি। এগুলো আমরা যদি একটু রিসার্চ করি, আশে-পাশে থেকেই প্রচুর ধারণা পাবো এবং সেই ভুল থেকে শিক্ষা নিতে পারবো। 

পরিশেষে বলা যায়, আইডিয়া ভ্যালিডেশন হচ্ছে এমন একটি প্রসেস যার মাধ্যমে আইডিয়াকে যাচাই করা যায় শুরুর আগেই, এতে করে একটি ভুল বা কম চাহিদা সম্পন্ন আইডিয়াতে সময় ব্যয় হয় না। অনেক সময় কোনো বিজনেস আইডিয়া শুনতে অনেক ইফেক্টিভ মনে হলেও বাস্তবে সেটার কোনো ভ্যালু মার্কেটে থাকে না বা তৈরী করা যায় না। তাই কোনো স্টার্টআপ শুরুর আগে আইডিয়া ভ্যালিডেট করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও ঝুঁকিহীন সিদ্ধান্ত।