ব্যাবসা বলতেই যে দুটি শব্দ বার বার আমাদের সামনে চলে আসে তা হল, পণ্য এবং সেবা। আমরাতো খাই সুন্দর করে প্যাকেটে মোড়ানো কোন প্রক্রিয়াজাত খাবার। খাওয়ার সময় কখনো কি আমরা ভেবেছি এই পণ্য কয়টি ধাপ অতিক্রম করে একদম শূন্য থেকে  আমাদের হাতে এসে পৌঁছায়? যে বাহারী ডিজাইনের পোষাক আমরা পরছি নিত্যদিন, তা কিন্তু চোখের পলকেই তৈরি হয়ে যায়নি। অথবা এই যে যানবাহন, হসপিটাল বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সেবা নিচ্ছি কীভাবে এই প্রক্রিয়াগুলো কাজ করে? একেক পণ্যের ডিজাইন একেক রকম কেন, তার পেছনে কি কোনো যুক্তি খুঁজেছি? পণ্যের বিভিন্ন স্টাইল কি আদৌ আমাদের ব্যবহারিক জীবনে কোনো ইতিবাচক প্রভাব ফেলে? নাকি নিছক চোখ ধাঁধানো ছাড়া আর কোনো ভিন্ন উদ্দেশ্য নেই এসব ডিজাইনে? 

যেকোনো পণ্য কেনার সময় আমরা দোকানীকে প্রথমেই যেটা জিজ্ঞেস করি তা হল, পণ্যটি ভাল হবে তো? পণ্যটি যাবে তো অনেক দিন? কাপড়ের রঙ উঠবে না তো? খাবারটি শরীরের জন্য ক্ষতিকর নয়তো? অর্থাৎ কাস্টমারের প্রথম এবং প্রধান প্রত্যাশা হল পণ্যের গুণগত মান ঠিক থাকা এবং দামের সাথে পণ্যের মানের সামঞ্জস্য রাখা।

পণ্য এবং সেবার গুণগত মান কিংবা বাহারী ডিজাইন নিয়ে মনের কোণে উঁকি দেয়া প্রশ্নগুলোর উত্তর নিয়ে সাজানো এই ব্লগটি। এখানে থাকছে পণ্য এবং সেবা সম্পর্কে ধারণা, পণ্য ও সেবার মান নির্ধারণ কি, পণ্য ডিজাইনের গুরুত্ব এবং পণ্য ডিজাইনের দশটি ধাপ। 

১। পণ্য বা সেবা বলতে কি বুঝায়

আমরা যখন বাজারে বা দোকানে কোন কিছু কেনাকাটা করতে যাই তখন কি করি? কিছু টাকা পয়সা অথবা ব্যাংক কার্ড কিংবা মোবাইল বিকাশ নিয়ে যাই। তারপর বাজারে গিয়ে সাবান, শ্যাম্পু, তেল, লবন, চিনি, শাক সব্জি, কাপড় ইত্যাদি হাত দিয়ে নেড়ে চেড়ে দেখি। এরপর দাম দর করে যেটা ভাল লাগে কিনি এবং বাসায় এনে সেগুলো ব্যবহার করতে করতে একসময় শেষ বা নষ্ট হয়ে যায়। এই যে, টাকার বিনিময়ে কেনা যে জিনিসগুলো ধরা যায়, মালিক হওয়া যায় এবং ব্যবহার করা যায় সেগুলোকেই বলে পণ্য/দ্রব্য (product)।

পণ্য/ দ্রব্য পরিমাপযোগ্য। অর্থাৎ আপনি দ্রব্য বা পণ্য কেজি, গ্রাম, মিলিগ্রাম, মিটার, সেন্টিমিটার ইত্যাদি মাপে কিনতে পারবেন।

এখন ধরুণ আপনার মা অসুস্থ। সেজন্য ভাল একজন ডাক্তার দেখাতে মিরপুর থেকে ধানমন্ডি তে ইবনে সিনা হসপিটালে যাবেন। যেহেতু অসুস্থ মানুষ তাই বাসের ঝাক্কিঝুক্কি এড়াতে গেলেন উবারে করে। উবার আপনাকে আরামে নিমিষেই ইবনে সিনা হসপিটালের সামনে নামিয়ে দিল। বিনিময়ে আপনি তাকে বাস ভাড়ার তুলনায় একটু বেশি ভাড়া দিলেন (যা অ্যাপে দেখিয়েছে)। এভাবে উবার একই গাড়ি ব্যবহার করে দৈনিক সেবা গ্রহণকারীদের বিভিন্ন লোকেশনে নিয়ে যাচ্ছে এবং বিনিময়ে টাকা আয় করছে। এখানে কেউ কিন্তু উবার কিনে ফেলেনি, শুধুমাত্র ব্যবহার করেছে। এই যে উবার মানুষের উপকার করে বিনিময় নিচ্ছে এটাকে বলে সেবা (Service)। 

তারপর আপনি আপনার মাকে হসপিটালের ডাক্তার দেখালেন। আসার সময় ডাক্তার কে ভিজিট দিলেন এক হাজার টাকা। এটাকেও বলে সেবা (Service)। আবার ইবনে সিনা ডাক্তারদেরকে তার হসপিটালে রোগী দেখার সুযোগ দিয়ে নিচ্ছে কিছু চার্জ। এটাও একধরণের সেবা বা সার্ভিস। 

সেবা বা সার্ভিস পণ্যের মত পরিমাপযোগ্য না। তবে কখনো কখনো সেবা সময় দ্বারা পরিমাপযোগ্য। যেমন, টিউশনি, পার্ট টাইম/ফুল টাইম কন্টাক্ট জব। 


২। পণ্য বা সেবার মান নির্ধারণ বলতে কি বুঝি




দাম দিয়ে অনেক শখ করে মায়ের জন্য একটি লাল রঙের সুতি শাড়ি কিনলেন। প্রথম ধোয়াতেই শাড়ির কালার উঠে পানি টকটকে লাল হয়ে গেল। কিছুদিন না যেতেই শাড়িটি পুরোনো ন্যাকড়ার মত ধূসর হয়ে গেল। তখন আমরা বলি, শাড়ির কোয়ালিটি ভালো না। 

অথবা আপনি আপনার এলাকা থেকেই ব্রডব্যান্ডের কানেকশন নিলেন। মাসিক বিল এক হাজার টাকা। কিন্তু প্রায় কিছুদিন পর পর ইন্টারনেট কানেকশন পাওয়া যায়না। কোন না কোন সমস্যা হয় এবং বার বার ব্রডব্যান্ডের লোকদেরকে ফোন দিয়ে আনাতে হয়। এতে আপনার অফিসিয়াল কাজের যেমন ক্ষতি তেমনি বাচ্চাদের অনলাইন কোডিং ক্লাস বা দূরের আত্মীয়দের সাথে কমিউনিকেশন করতে প্রচুর সমস্যা হয়। তখন আমরা বলি তাদের সার্ভিস খুব বাজে। সেজন্য নতুন জায়গা থেকে দেখেশুনে এবার ভালো ইন্টারনেট কানেকশন নিলেন। অর্থাৎ শাড়িটি বা ব্রডব্যান্ডের সার্ভিস যে উদ্দেশ্যে তৈরি হয়েছে সে লক্ষ্য পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। যে কোনো পণ্য সময়ের সাথে সাথে ক্ষয়ে যাবে বা নিঃশেষ হয়ে যাবে। এটা অত্যন্ত স্বাভাবিক। কিন্তু পণ্য বা সেবার মান এমন হতে হবে যেন কাস্টমার সে পণ্য বা সেবা একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ব্যবহার করে তার টাকা উসূল করতে পারে। একটি মোবাইল/ফ্রিজ/টিভি/ফ্যান এর ওয়ারেন্টি সময় যদি হয় ছয় মাস, তাহলে তার গুণগত মান এমন পর্যায়ের হতে হবে যেন কাস্টমার তা অন্তত দুই বছর  পর্যন্ত নিরাপদে ত্রুটিহীনভাবে ব্যবহার করতে পারে। নয়তো কাস্টমার বলবে, এদের প্রডাক্ট ভালো না, ওয়ারেন্টি শেষ হওয়ার সাথে সাথে নষ্ট হয়ে যায়। 

একটি খাবারের মেয়াদ যদি থাকে ছয়মাস, এটার অর্থ হল খাবারটি ছয় মাস পর্যন্ত মানবদেহের জন্য নিরাপদ হতে হবে।

যে কোনো পণ্য বা সেবার মান নির্ধারণের ক্ষেত্রে মাথায় রাখতে হবে, তা দামের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কিনা। প্রিজারভেটিভ খাবার বা কসমেটিকস এর ক্ষেত্রে চিন্তা করতে হবে, তাতে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকারক কিছু আছে কিনা, ল্যাবরেটরি দ্বারা সার্টিফাইড কিনা। এমনকি যা দ্বারা পণ্য মাপা হচ্ছে সে ওজনের মেশিন ক্যালিব্রেটেড কিনা তা নিশ্চিত হলে নিশ্চিন্তে বলা যাবে আমি সঠিক পরিমাণে পণ্য পেয়েছি। ফ্রেশ খাবারের ক্ষেত্রে, নিশ্চিত করতে হবে পঁচা বা নষ্ট আইটেম যেন না থাকে।

৩। পণ্য বা সেবা ডিজাইনের গুরুত্ব

দুই কোম্পানির দুটো বোরখার কথা চিন্তা করা যাক। একটার সামনের জিপার ৮ সে.মি.। অন্যটির ১০ সে.মি.। দুটো বোরখা দিয়ে মাথা ঢুকবে। কিন্তু একজন ব্রেস্টফিডিং মায়ের জন্য ৮ সে.মি. জিপার যথেষ্ট নয়, সেক্ষেত্রে  ১০ সে.মি. জিপার প্রয়োজন হবে। সুতরাং তিনি দুই ধরণের দুটি বোরখা না কিনে ১০ সে.মি. জিপারের একটা কিনবে। আবার অন্য কাস্টমারের জন্য এই ১০ সে.মি. জিপার ব্যবহারযোগ্য। অর্থাৎ এখানে ১০ সে.মি. জিপারের বোরখা ডিজাইন করা হয়েছে সর্বস্তরের কাস্টমারকে লক্ষ্য করে। মাত্র ২ সে.মি. ডিজাইন আইডিয়ার কারণে টার্গেট কাস্টমারের ফিল্ড চেইঞ্জ হয়ে যেতে পারে। সুতরাং পণ্য ডিজাইনের উপর টার্গেট কাস্টমারের সার্বজনীন ব্যবহারযোগ্যতা বৃদ্ধি পায়।

আমরা কি কখনো চিন্তা করেছি, অধিকাংশ তেল বা পানীয় বোতলের মাথা সরু থাকে কেন? কারণ, তাতে লিকুইড ঢালতে গিয়ে অনেক বেশি পড়ে যায় না। অর্থাৎ এক্ষেত্রে পণ্য ডিজাইনের মাধ্যমে কাস্টমারের কেনা প্রোডাক্টে ব্যবহারের সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে – একবারে বেশি পড়ে গেলে তো বিপদ!  

ধরুন লেক্সাস বিস্কুটের প্যাকেজগুলো এত ছোট কেন? একটা বড় কাগজের প্যাকে অনেকগুলো প্লাস্টিকের মিনি প্যাক থাকে কেন? কারণ মানুষ বড়জোর ৩/৪ টা কুকিজ খাবে। কিন্তু পুরো প্যাকেট খুললে বাকি বিস্কুট নষ্ট হওয়ার চান্স থাকে। তাই কুকিজ সুরক্ষিত রাখার জন্য পণ্যটি এভাবে ডিজাইন করা হয়েছে। অর্থাৎ এখানে পণ্য ডিজাইন প্রোডাক্টকে সুরক্ষিত রাখছে।

আবার এখন বর্তমান যুগে সারাক্ষণ মোবাইল পাশেই রাখতে হয়। কিন্তু জামা/ পায়জামা বা বোরখার সাইডে যদি থাকে পকেটের সিস্টেম তাহলে স্বাভাবিকভাবেই কাস্টমার সে ডিজাইনের ব্যাপারে বেশি আগ্রহী হবে। সুতরাং এখানে পণ্য ডিজাইন কাস্টমারকে দিচ্ছে বাড়তি সুবিধা।

বাচ্চাদের ব্রেইনের লজিক্যাল পার্টের চেয়েও ইমোশনাল পার্ট বেশি কাজ করে। সেজন্য তাদের প্রোডাক্টগুলোর ডিজাইন বরাবরই আকর্ষনীয় এবং শিশুসুলভ হয়। এটাকে বলে ইমোশনাল ব্র‍্যান্ডিং। যেমন, নুডলস বা চিপস এর ডিজাইন, জামার ডিজাইন ইত্যাদি। এছাড়াও বাচ্চাদের ডায়পার ধরে রাখার জন্য বডিস এবং রাবার প্যান্ট এভয়েড করার জন্য বাচ্চাদের রোম্পার হল অভিনব ডিজাইন আইডিয়া।

সার্ভিসও কিন্তু ডিজাইন করার জিনিস। বর্তমানে ওয়েবসাইটে কেনাকাটা কিংবা সফটওয়ার ব্যবহারের ক্ষেত্রে UX বা ইউজার এক্সপেরিয়েন্স বলতে যে বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেওয়া হয় এটি মূলত সার্ভিস ডিজাইন। 

বর্তমানে ডিজাইন থিঙ্কিং যে কোনো ব্যবসার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।




৪। পণ্য/সেবা ডিজাইনের ধাপগুলো


পণ্য/সেবা ডিজাইনের  দশটি ধাপ  বর্ণনা করা হলো – 

৪.১। ব্রেইনস্টর্মিং করা

৪.২। সমস্যা নির্ণয় করা

৪.৩। সমাধান বের করা

৪.৪। নকশা ও মডেলিং তৈরি করা

৪.৫। ডিজাইন জাস্টিফাই করা

৪.৬। উপকরণ সংগ্রহ 

৪.৭। উৎপাদন নমুনা সংগ্রহ 

৪.৮। ব্যবহারিক পরীক্ষা

৪.৯। উৎপাদন শুরু করা

৪.১০। গুণগত মান নিশ্চিত করা শুরু করা

৪.১। ব্রেইনস্টর্মিং করা

অর্থাৎ আপনি পণ্যের কোন ধরণের ডিজাইন নিয়ে কাজ করবেন তা চিন্তা করা, বা বর্তমান সেবা, বা পণ্যের ডিজাইনে কি পরিবর্তন আনতে চান? কেন ডিজাইনে পরিবর্তন আনা জরুরি? 

৪.২। সমস্যা নির্ণয় করা

মার্কেটে আপনার এই পণ্যের বা সেবার প্রচলিত ডিজাইনের বর্তমান সমস্যা কি তা চিহ্নিত করুন। যেমন, আপনি বিশুদ্ধ নারিকেল তেলের বিজনেস করেন, তাই শীতকালে তা জমে যায়। এখন বোতলের মুখ সরু হওয়ায় জমাট বাধা তেল দেয়ার জন্য কাস্টমারকে সে তেল রোদে রেখে বা গরম পানিতে চুবিয়ে তেল গলিয়ে নিতে হয়। এখন, আপনি চিন্তা করুন আপনার নারিকেল তেলের বোতলের ডিজাইনে কি পরিবর্তন আনলে কাস্টমারের এই সমস্যা সমাধান হবে।

আবার ধরুন, শহরে বিদ্যুত বিল দিতে ব্যাংকে লম্বা লাইনে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা খুবই বিরক্তিকর ব্যাপার। এতে সময় যেমন নষ্ট হয়, অন্যদিকে ব্যাংকের দরজা পার হয়ে লাইন রাস্তায় পৌঁছে যেত বলে, রৌদ্রে অনেক সময় ধরে কষ্ট পেতে হতো। 

৪.৩। সমাধান বের করা

ধরলাম আপনি নারিকেল তেলের বোতল ডিজাইনের সমাধান বের করলেন। সিদ্ধান্ত নিলেন বোতলের মুখ আরো চওড়া করবেন যেন হাতের আঙুল দিয়ে বা চামচ দিয়ে তেল ওঠানো যায়। 

যারা ডিজাইন থিংকিং নিয়ে কাজ করেন তারা দেখলেন যদি বিদ্যুত বিল দেওয়ার ব্যাপারটাকে অটোম্যাটেড করে ফেলা যায়, ব্যাংকের পাশাপাশি বিকাশের মাধ্যমে যদি দেওয়ার ব্যবস্থা করা যায়, তাহলে ক্রেতাদের এই ভোগান্তি থাকবে না। আর ক্রেতারাও সময় এবং কষ্ট বাঁচাতে খুশি হয়ে কিছু বাড়তি টাকা দিয়ে দেবেন বিলের সাথে যা অটোম্যাশনকারীদের জন্য আয়ের উৎস হবে। 

৪.৪। নকশা ও মডেলিং তৈরি করা

এখন এই ডিজাইন কাগজে কলমে বা ডিজিটালি তৈরি করুন। তারপর একটা মডেল দাড় করান। তাহলে আপনি প্রকৃত চিত্র অনুধাবন করতে পারবেন।

৪.৫। ডিজাইন জাস্টিফাই করা 

এখন এই সিদ্ধান্ত বাজারে কতটুকু গ্রহণযোগ্য হবে তা জাস্টিফাই করুন। বোতলের মুখ চওড়া হলে শীতকালে আরাম হলেও গরম কালে আবার পড়ে যাওয়ার চান্স থাকবে। সেক্ষেত্রে কাস্টমার সেটা কীভাবে নেবে? দুটি সমস্যার মধ্যে কোন সমস্যাটি বড় তা এনালাইসিস করুন। চওড়া মুখের জন্য প্লাস্টিকের বোতল ভাল হবে নাকি কাঁচের জার ভাল হবে। 

যেমন অটোম্যাশনের ক্ষেত্রে শুধু ব্যাংক থেকে অনলাইনে বিল দেওয়ার ব্যবস্থা করলে দেখতে হবে মোট বিদ্যুত ব্যবহারকারী কতজন এবং ব্যাংক একাউন্টধারীর সংখ্যা কত। যদি পার্থক্য বেশি থাকে তাহলে শুধু ব্যাংক পেমেন্ট কাজ করবে না এবং তাই মোবাইল ফিনানশিয়াল সার্ভিসগুলোকে এখানে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। 

৪.৬। উপকরণ সংগ্রহ 

তারপর নতুন জাস্টিফাইড মডেল বানানোর জন্য কি কি উপাদান লাগবে তা সংগ্রহ করুন। সেবার ক্ষেত্রে এমন মানুষ লাগবে যিনি কাজটি বাস্তবায়ন করবেন, যেমন – সফটওয়ার কোডার লাগবে একটি টেক সল্যুশন প্রোগ্রাম করার জন্য। 

৪.৭। উৎপাদন নমুনা সংগ্রহ

উপাদানসমূহ দিয়ে উৎপাদনের জন্য প্রাথমিক নমুনা তৈরি করুন। বর্তমানে থ্রিডি প্রিন্টিং এর মাধ্যমে খুব সহজেই পণ্যের মডেল তৈরি করা যায়। 

সেবার জন্যও সিস্টেমের একটি মৌলিক কাঠামো দাঁড় করতে হবে। 

৪.৮। ব্যবহারিক পরীক্ষা করা

তারপর নিজেরাই নতুন ডিজাইনের পণ্যটি আগে ব্যবহার করে দেখুন, বা কিছু কাস্টমারকে দিয়ে টেস্ট করিয়ে নিন। এ পর্যন্ত পুরো প্রক্রিয়া কয়েকবার করা লাগতে পারে। বার বার ডিজাইন পরিবর্তন করা লাগতে পারে। এতে একটু খরচ হবে। 

৪.৯। উৎপাদন শুরু করা 

পরীক্ষা নিরীক্ষার পর যে নমুনা ফাইনাল হবে তা মার্কেটে ছাড়ার জন্য নতুনভাবে উৎপাদন শুরু করুন।

৪.১০। গুণগত মান নিশ্চিত করা শুরু করা

ডিজাইনের পাশাপাশি পণ্যের গুণগত মান ঠিক আছে কিনা তা প্রতি ধাপে নিশ্চিত করতে হবে। তারপর বিশেষভাবে সেটা মার্কেটে কাস্টমারের ব্যবহারের জন্য ছাড়ার পরে র‍্যান্ডম স্যামপ্লিং এর মাধ্যমে আমরা যে কাংখিত মান নির্দিষ্ট করেছিলাম সেটা ঠিক থাকছে কিনা তা নিশ্চিত করতে হবে। 
পরিশেষে, পণ্য হল এমন জিনিস যা ক্রয়ের মাধ্যমে মালিকানা পাওয়া যায়, স্পর্শ করা যায়, বহনযোগ্য, ব্যবহারযোগ্য এবং পরিমাপযোগ্য। অপরদিকে, সেবা হল নির্দিষ্ট সময়ের জন্য টাকার বিনিময়ে কোন কিছু থেকে উপকৃত হওয়া। পণ্য এবং সেবার গুণগত মান কাস্টমারের প্রথম এবং প্রধান প্রত্যাশা। পণ্য বা সেবা ডিজাইনের পেছনে নিছক সৌন্দর্যই একমাত্র উদ্দেশ্য নয়। পণ্য ডিজাইন কাস্টমারকে দেয় বাড়তি সুবিধা, পণ্য সুরক্ষিত রাখে, সাশ্র‍য় করে পণ্য এবং বাঁচায় অনাকাঙ্খিত খরচ। এবং সবচেয়ে বড় কথা, ডিজাইন থিঙ্কিং অনেক সময় নতুন পণ্য বা সেবা আনার জন্য ইনোভেশন হিসেবে কাজ করে।