যেকোনো ব্যাবসার শুরুতেই আপনাকে করতে হবে পরিকল্পনা। এই প্রবন্ধের প্রশ্নগুলো আপনাকে পরিকল্পনা করতে সাহায্য করবে। আপনি কিছু প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে গিয়ে চিন্তা করবেন। কিছু প্রশ্নের উত্তর দিতে মার্কেট রিসার্চ করতে হবে। সব প্রশ্নের উত্তর যখন আপনি তৈরি করতে পারবেন, আপনার বিজনেস প্ল্যান তৈরি।  

সূচনা (Introduction)

১/ কোম্পানির সাধারণ বর্ণনা

আপনি কোন ধরণের ব্যাবসা করবেন? আপনি কি করতে চান?

২/ রূপকল্প / ভিশন (Vision) / মিশন (Mission) এবং লক্ষ্য / উদ্দেশ্য

অনেক কোম্পানি সাধারণত ত্রিশ শব্দ বা তার চেয়েও কম শব্দে নিজেদের ব্যাবসার রূপকল্প / ভিশন / মিশন হিসেবে তারা কি করতে চান এবং তাদের ব্যবসায়ের মূলনীতি কি তা ব্যাখ্যা করে থাকেন।

যেমন গুগলের মিশন হচ্ছে তারা পৃথিবীর সব তথ্যকে গুছিয়ে রাখতে চায় যেন তা সবার কাছে পৌঁছে দেওয়া যায় এবং উপকারীও হয়। 

our mission is to organize the worlds

ব্যবসায়ের লক্ষ্য হল এমন একটি চূড়ান্ত অবস্থান যেখানে আপনি আপনার কোম্পানিকে দেখতে চান। আর উদ্দেশ্য হল সেই চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছানোর সিঁড়ি। উদাহরণস্বরুপ বলা যায়, কোন কোম্পানির লক্ষ্য যদি হয় তারা কাস্টমার সার্ভিসের দিক দিয়ে শীর্ষে থাকবে, তাহলে তাদের উদ্দেশ্য হবে ভোক্তাদের সন্তুষ্টির জন্য কিছু সার্ভিস ঠিক করা।

মিশন, ভিশন, উদ্দেশ্য-লক্ষ্য নিয়ে আরো জানতে পড়তে পারেন উদ্যোক্তা হতে আসলে কী লাগে?

৩/ ব্যাবসা দূরদর্শিতা

আপনার ব্যাবসার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কি?

আপনার ব্যাবসার পণ্যের গ্রাহক কারা?

আপনার ইন্ডাস্ট্রি সম্পর্কে বিস্তারিত বলুন। এটি কি একটি ক্রমবর্ধমান? আপনি আপনার সদ্য শুরু করা এই ব্যাবসার  স্বল্প এবং দীর্ঘ মেয়াদী কি পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছেন? আপনার কোম্পানি কীভাবে নিশ্চিতভাবে এই ব্যাবসা থেকে উপকৃত হতে পারে?

আপনার কোম্পানির কোর স্ট্রেন্থ  Core Strength অর্থাৎ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শক্তিশালী অংশ এবং মৌলিক সক্ষমতা নির্ণয় করুন। কোন বিষয়টি আপনার প্রতিষ্ঠানকে সফলতায় নিয়ে যাবে? প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য আপনি কি আপনার কোম্পানির সবচেয়ে শক্তিশালী অংশটি নিয়ে চিন্তা করেছেন? অতীতের কোন অভিজ্ঞতা, দক্ষতা এবং সক্ষমতা আপনাকে নতুন যাত্রায় উদ্ধুদ্ধ করেছে?

৪/ মালিকানার ধরণ

কোম্পানিটি  স্বত্বাধিকারী, অংশীদারিত্ব, কর্পোরেশন, সীমিত দায় কোম্পানি – প্রাইভেট লিমিটেড – এগুলোর মধ্যে আপনি কোন ধরণটি নির্বাচন করেছেন? কেন?

malikana dhoron

৫/ ব্যাবসা পণ্য এবং সেবা

আপনার ব্যবসায়িক পণ্য এবং সেবাসমূহ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করুন।

পণ্যে এবং সেবার কোন বিষয়গুলো তুলনামূলকভাবে আপনার ব্যাবসার সফলতা বা ব্যর্থতা বয়ে নিয়ে আসবে? উদাহরণ হিসেবে আপনি পণ্যের গুনগত মান বা স্বতন্ত্রতা নিয়ে ভাবতে পারেন।

আপনার পণ্য এবং সেবার মূল্য কেমন?

বাজারজাতকরণ পরিকল্পনা (Marketing Planning)

বাজারজাতকরণ বা পণ্য বিপনণ (Marketing) পরিকল্পনার ক্ষেত্রে প্রথমত আপনাকে বাজার (Market) নিয়ে দুটো গবেষণা মাথায় রাখতে হবে।

  1. কেন বাজার নিয়ে গবেষণা প্রয়োজন? 
  2. কীভাবে বাজার নিয়ে গবেষণা করবেন?

কেন বাজার নিয়ে গবেষণা প্রয়োজন?

পণ্য বা সেবা যেমন ই হোক না কেন, বাজারজাতকরণ ফলপ্রসু না হলে আপনার ব্যাবসা যাত্রা কখনই সফল হবে না। সেজন্য প্রথম থেকেই চাই ধারাবাহিক গবেষণা। এটা খুবই বিপজ্জনক যে কোনরকম গবেষণা ছাড়াই শুধুমাত্র অনুমানভিত্তিকভাবে আপনি আপনার উদ্দীষ্ট বাজার সম্পর্কে একটা পরিকল্পনা করবেন।  আপনার ব্যবসায়ের গতি ঠিক রাখতে অবশ্যই আপনাকে বর্তমান বাজার সম্পর্কে জানতে হবে।

bazar

তাহলে কীভাবে বাজার নিয়ে গবেষণা করবেন?

‘প্রাথমিক গবেষণা’ হল নিজের গবেষণালব্ধ তথ্য সংগ্রহ করা। উদাহরণস্বরূপ, আপনি একটি জায়গা ঠিক করেছেন আপনার দোকানের জন্য। এবার সেখানে আপনার প্রতিযোগীদের দোকান  চিহ্নিত করুন এবং সেসব দোকানের বাইরে আপনার টার্গেট কাস্টমারদের  পছন্দ সম্পর্কে জানতে বিভিন্ন জরিপ চালান বা সাক্ষাৎকার গ্রহণ করুন। পেশাদার বাজার গবেষণা অনেক ব্যয়বহুল। ভিন্ন মাধ্যম যেমন, ইন্ডাস্ট্রি প্রোফাইল, বাণিজ্য সংবাদ, পত্রিকা, ম্যাগাজিন, গবেষণাপত্র ইত্যাদি   থেকে প্রকাশিত তথ্য উপাত্ত গবেষণা করে মার্কেট সম্পর্কে ধারণা নেয়ার পদ্ধতিকে ‘সেকেন্ডারি গবেষণা’ বলে। বাণিজ্যিক প্রকাশনাগুলোতেও বাজার সম্পর্কে অনেক চমৎকার তথ্য পাওয়া যায়। 

বাজারজাতকরণ পরিকল্পনার ক্ষেত্রে আরো জানতে হবে  অর্থনীতি, পণ্য, ক্রেতা, প্রতিযোগিতা, কর্মসংস্থান, কৌশল। 

৬/ বাজার অর্থনীতি

– আপনার বাজার এর পরিধি, মার্কেট সাইজ কেমন?

– মার্কেট শেয়ার মানে, বাজার এর কত শতাংশ শেয়ার আপনি চাচ্ছেন?

– বাজারে চাহিদা কিসের ?

– মার্কেট ট্রেন্ড কি? ক্রেতাদের পছন্দ কি? কোন ধরণের প্রডাক্ট বেশি চলছে?  

– মার্কেট সাইজ বাড়ার  সম্ভাবনা কতটা এবং আপনার ব্যবসায়ের জন্য সেই মার্কেটে গ্রোথের সুযোগ কেমন ।

৭/ মার্কেট ব্যারিয়ার

আপনার নতুন কোম্পানি নিয়ে বাজারে এ উঠতে কি ধরণের বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন? নিচে কিছু সাধারণ বাধার লিস্ট দেয়া হলো যেন বাধাসমূহ নির্নয় করতে সুবিধা হয়ঃ

  • উচ্চ মূলধন বিনিয়োগ
  • উচ্চমাত্রার উৎপাদন খরচ
  • উচ্চ বিপণন/মার্কেটিং খরচ
  • ভোক্তাদের মূল্যায়ন এবং ব্র‍্যান্ডিং স্বীকৃতি
  • প্রশিক্ষণ এবং দক্ষতা
  • স্বতন্ত্র প্রযুক্তি এবং সরকারি লাইসেন্স
  • পরিবহন খরচ
  • রাজস্ব/ট্যাক্স এবং কোটা সমস্যা

-এবং কীভাবে আপনি এই বাধাসমূহ অতিক্রম করছেন?

মার্কেট ব্যারিয়ার

৮/ ভবিষ্যত ঝুঁকি

নিচের বিষয়গুলো কীভাবে আপনার কোম্পানিকে প্রভাবিত করতে পারে?

  • প্রযুক্তির পরিবর্তন 
  • সরকারি আইন পরিবর্তন 
  • অর্থনৈতিক পরিবর্তন 
  • ইন্ডাস্ট্রি পরিবর্তন 

৯/ পণ্যের কাঠামো এবং উপকারিতা

পণ্যের কাঠামো তৈরি বা সেবা দেয়ার ক্ষেত্রে দুটো জিনিস মাথায় রাখতে হবে।

১/ আপনার পণ্য তৈরির ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারটা টি কি? আপনার পণ্যের  বিশেষত্ব কি?

২/ আপনার পণ্যের উপকারিতা – গ্রাহকদের তা ঠিক কি কাজে আসবে?

পণ্যের উপাদান  আর  উপকার  কিন্তু দুটি আলাদা জিনিস। 

যেমন আপনি খুব ভালো মানের রড আর সিমেন্ট দিয়ে সুন্দর ডিজাইনের একটা বাড়ি বানালেন। এটা হচ্ছে বাড়ির উপাদান। কিন্তু বাড়ির উপকার হচ্ছে আশ্রয়, নিরাপত্তা, সম্মান – যা আসলে বিক্রি করা হয়।  

৩/ আপনি পণ্য বিক্রি করার পর কি সুবিধা দিচ্ছেন? উদাহরণস্বরূপ, পণ্য ডেলিভারি সুবিধা, ওয়ারেন্টি কার্ড, সেবা চুক্তি, সহযোগিতা, পণ্য ব্যবহার করে পর্যবেক্ষণ করার সুবিধা, ক্যাশব্যাক সুবিধা ইত্যাদি। এগুলো গ্রাহকের মনে পণ্য সম্পর্কে বিশ্বস্ততা তৈরি করে ।

১০/ কাস্টমার এনালাইসিস (Customer Analysis)

প্রথমেই আপনার পণ্যের সম্ভাব্য (Target) গ্রাহকদের (Customer) খুঁজে বের করুন। তাদের স্বভাব, বৈশিষ্ট্য বা ধরণ কেমন? তাদের অবস্থান কোথায়? সর্বোপরি তাদের নিয়ে একটা ডেটাবেস  তৈরি করুন।

গ্রাহকদের নিয়ে গবেষণার ধরণ কেমন হবে সেটা সম্পূর্নভাবে নির্ভর করে তারা কোন ধরণের গ্রাহক। তারা কি সরাসরি ভোক্তা নাকি ব্যবসায়িক ক্রেতা? সরাসরি ভোক্তা হলে মধ্যবর্তী সমন্বয়কারী ব্যবসায়ী কারা? আপনাকে অবশ্যই এই সর্বনিম্ন ভোক্তাগণ বা মধ্যবর্তী ব্যবসায়ীগন বা ব্যবসায়ী ক্রেতাদের নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে গবেষণা করতে হবে।

আপনি বিভিন্ন ধরণের গ্রাহকদের নিয়ে কয়েকটি ভিন্ন ভিন্ন গ্রুপ করতে পারেন। তারপর প্রত্যেকটা আলাদা গ্রুপ নিয়ে একটি ডেমোগ্রাফিক প্রফাইল  তৈরি করুন যেখানে থাকবে তাদের বয়স, লিঙ্গ, অবস্থান, উপার্জনের মান, সামাজিক শ্রেণী, পেশা, শিক্ষা এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্য।

Demographic

ব্যবসায়ী গ্রাহকদের ক্ষেত্রে  থাকতে পারে তাদের ইন্ডাসট্রি, ইন্ডাসট্রির পরিধি, অবস্থান, পণ্যের গুনগত মান, ব্যবহৃত প্রযুক্তি, পণ্যের পছন্দনীয় দাম এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্য।

১১/ প্রতিদ্বন্দ্বী তালিকা

বাজারে আপনার পণ্য এবং কোম্পানির প্রতিযোগী খুঁজে বের করুন। নাম এবং ঠিকানা সহ আপনার বড় ধরণের প্রতিযোগীদের চিহ্নিত করুন।

তারা কি সার্বিকভাবে আপনার কোম্পানির প্রতিযোগী নাকি কোনো নির্দিষ্ট পণ্য বা গ্রাহক বা স্থানের প্রতিযোগী?

আপনার কি কোন পরোক্ষ প্রতিযোগী আছে? যেমন কোন কাপড় ব্যবসায়ী জুতার ব্যবসায়ীর সাথে প্রতিযোগিতা করতে পারে, যদিও দুইটা আলাদা ব্যাবসা।

আপনার পণ্য এবং সেবা কীভাবে প্রতিযোগিতায় লড়াই করে?

আপনার সবচেয়ে বড় দুজন প্রতিযোগীর সাথে তুলনা করে নিজের ব্যাবসা পর্যালোচনা করতে নিচের তুলনামূলক পর্যালোচনা ছকটি ব্যবহার করুন। ছকের প্রথম কলামে থাকবে সেসব উপাদান যেগুলো দিয়ে আপনি প্রতিযোগিতার মানদন্ড যাচাই করবেন। এই উপাদানগুলো আপনি আপনার মতো করে পরিবর্তন করে নিতে পারেন।

দ্বিতীয় কলামে আপনাকে রেখে উপাদানগুলোর আলোকে তুলনামূলকভাবে চিন্তা করুন গ্রাহকদের মনে আপনার অবস্থান কি? তৃতীয় এবং চতুর্থ কলামে নিষ্ঠা এবং সততার সহিত আপনার সক্ষমতা এবং দুর্বলতাগুলো লিখুন। যদিও নিজের দুর্বলতা বের করা সবচেয়ে কঠিন, সেজন্য আপনি এমন একজনকে এই দায়িত্ব দিতে পারেন যিনি আপনার ত্রুটির ক্ষেত্রে চোখ খুলে দেবেন। কেউই দুর্বলতার উর্ধ্বে নয়। অপরিকল্পিত প্রচেষ্টার কারণে অনেক কোম্পানিই ব্যবসায় ব্যর্থ হয়।

পরিশেষে শেষ কলামে প্রত্যেকটি উপাদানের ১ টি গুরুত্বপূর্ন এবং ৫ টি অগুরুত্বপূর্ণ জিনিস বের করুন।

টেবিলঃ১ তুলনামূলক পর্যালোচনা 

উপাদানসমূহ আমি শক্তি  দুর্বলতা  প্রতিযোগী ক প্রতিযোগী খ গ্রাহকদের গুরুত্ব 
পণ্য            
মূল্য            
গুনগত মান            
বাছাইকরণ             
সেবা            
নির্ভরযোগ্যতা            
স্থায়িত্ব             
দক্ষতা            
সুনাম            
স্থান            
প্রদর্শনী            
বিক্রয় কৌশল            
ক্রেডিট নীতি            
বিজ্ঞাপন             
ছবি            

এবার প্রতিযোগিতা নিয়ে অল্প কথায় একটা ছোট অনুচ্ছেদ লিখে ফেলুন।

১২/ উপযুক্ত নীশ (Niche) / অবস্থান নির্বাচন

এখন আপনি আপনার ইন্ডাস্ট্রি, পণ্য, গ্রাহক, এবং প্রতিযোগীদের নিয়ে ধাপে ধাপে পর্যালোচনা করুন। আপনার কোম্পানিকে বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে আপনাকে  অবশ্যই কোম্পানির মার্কেট নীশ সম্পর্কে একটা পরিষ্কার ধারণা রাখতে হবে।  অল্প কথায়, মার্কেটে আপনার কোম্পানির একটা নিরাপদ এবং স্বতন্ত্র অবস্থান চিহ্নিত করুন।

মার্কেটিং কৌশল

তারপর  আপনার ব্যবসায়ের নিরাপদ অবস্থান তৈরি করতে কিছু মার্কেটিং কৌশল প্রয়োগ করুন। এখানে কিছু কৌশল সম্পর্কে প্রশ্নগুলো নিয়ে চিন্তা করুন।

১৩/ প্রমোশনাল প্ল্যানিং (Promotional Planning)

আপনার ব্যবসাটা মার্কেটে পরিচিতি লাভ করবে কীভাবে? 

কেন আপনার পণ্যটি অন্যদের মত নয়?

বিজ্ঞাপন নিয়ে তিনটি প্রশ্ন লিখুন। কীভাবে আপনি বিজ্ঞাপন করবেন, কেন বিজ্ঞাপন করবেন এবং বিজ্ঞাপন ছড়িয়ে দেবে কারা? 

আপনি কি কম খরচ প্রক্রিয়ায় বেশি প্রচারমূলক বাজেট নির্দিষ্ট করতে পেরেছেন?

আপনি কি অর্থপ্রদানের বিজ্ঞাপন ছাড়া অন্য কোন পদ্ধতি ব্যবহার করবেন, যেমন ট্রেড শো, ক্যাটালগ, ডিলার ইনসেনটিভ, মুখের কথা (Word of Mouth) – আপনি কীভাবে এটিকে উদ্দীপিত করবেন?, এবং বন্ধু বা পেশাদারদের নেটওয়ার্ক কীভাবে ব্যবহার করবেন?

Bigappon

আপনি কী ব্র্যান্ড ইমেজ প্রজেক্ট করতে চান? আপনি গ্রাহকদের চোখে আপনি নিজেকে কীভাবে দেখতে চান?

বিজ্ঞাপন ছাড়াও, গ্রাফিক্স ছবি সহযোগিতার ক্ষেত্রে আপনি কি পরিকল্পনা করেছেন?

আপনার রিপিট গ্রাহকদেরকে বাছাই করার জন্য এবং পরবর্তীতে তাদের সাথে ধারাবাহিক যোগাযোগ রাখার কি কোনো পদ্ধতি চালু করেছেন?

১৪/ প্রমোশনাল বাজেট (Promotional Budget)

উপরের লিস্টের পণ্যের জন্য আপনার বিনিয়োগ  কত বরাদ্দ করেছেন? হতে পারে তা ব্যাবসা শুরু করার পূর্বে, হতে পারে তা ব্যাবসা চলাকালীন সময়।

১৫/  দ্রব্য মূল্য নির্ধারণ

আপনার পণ্যের মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে কি পদ্ধতি অবলম্বন করছেন? ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা প্রায়শই স্বল্প লাভ রেখে  পণ্য বিক্রয় করে যা ভালো বুদ্ধি  না। দ্রব্য মূল্য আপনার লাভকে প্রভাবিত করে। গ্রাহকরা পণ্যের দাম সবসময় বিবেচনায় আনে না। প্রাইসিং ঠিক না হলে  আপনার সবচেয়ে বড় প্রতিযোগী আপনাকে পেছনে ফেলে দেবে। পণ্যের মান এবং সেবা নিশ্চিত করে আপনি মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রর মধ্যমপন্থা অবলম্বন করতে পারেন। 

আপনার দ্রব্য মূল্য নির্ধারণ নীতি কি আপনার প্রতিযোগিদের পর্যালোচনামূলক ফলাফলের সাথে যায়?

আপনার দ্রব্যমূল্যের সাথে আপনার প্রতিযোগীদের দ্রব্য মূল্যের তুলনামূলক পর্যালোচনা করুন। তাদের নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে আপনার দ্রব্য মূল্য  কম, বেশি, নাকি সমান?

তুলনামূলক  উপাদান গুলোর মধ্যে দ্রব্য মূল্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ? আপনার সম্ভাব্য গ্রাহকেরা ক্রয়ের ক্ষেত্রে সবসময় কি মূল্যকেই বেশি প্রাধাণ্য দেয়?

আপনার গ্রাহক সেবা এবং ক্রেডিট নীতি কী ?

পণ্যের দাম নির্ধারণ করার ব্যাপারে পড়তে পারেন এই লেখাটা – প্রোডাক্ট প্রাইসিং এর কৌশল

১৬/ প্রস্তাবিত স্থান

সম্ভবত, এখনো আপনার পণ্য বাজারজাতকরণেরকোনো  নির্দিষ্ট স্থান নেই। উপযুক্ত স্থান নিয়ে চিন্তা ভাবনা করার এটাই উপযুক্ত সময়। অনেকেই ব্যবসায়ের শুরুতে বাসা থেকেই সফলভাবে বাজারজাতকরণ করে থাকেন।

আপনার শারীরিক উপস্থিতির গুরুত্ব সম্পর্কে পরবর্তী “কার্যক্রম পরিচালনা” সেকশনে বিস্তারিত লিখবেন । আপাতত এখানে বাজারজাতকরণ স্থান নিয়ে বিবেচ্য বিষয়গুলো পর্যালোচনা করুন যা আপনার গ্রাহকদেরকে প্রভাবিত করে।

যদি আপনার পণ্য বাজারজাতকরণের জন্য একটি নির্দিষ্ট স্থান কি আপনার গ্রাহকদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ? যদি হ্যাঁ হয় তাহলে  বর্ণনা করুন কীভাবে তা প্রভাবিত করে?

যদি আপনার গ্রাহকরা আপনার  ব্যাবসা  কেন্দ্রে আসে তাহলে কিছু জিনিস খেয়াল করুন। 

  • জায়গা টা কি সুবিধাজনক? পার্কিং লাগে? লাগলে পার্কিং এর ব্যবস্থা আছে? ভেতরের জায়গা কি প্রশস্ত? বের হওয়ার রাস্তা আছে তো?

– স্থানটা  কি আপনার কোম্পানি প্রোফাইলের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ? 

– সেটা কি আপনার গ্রাহকদের কাঙ্ক্ষিত জায়গা?

-সেটা কি আপনার প্রতিযোগীদের কাছে নাকি দূরে?

– প্রাকৃতিক দুর্যোগে আক্রান্ত হয় কি?

প্রস্তাবিত স্থান

১৭/ পণ্য বিতরণ ব্যবস্থা

আর যদি ক্রেতা আপনার ব্যাবসা কেন্দ্রে এসে কিনবে এমনটা না হয় তাহলে পণ্য সরবরাহ মাধ্যমগুলো দেখতে হবে। 

আপনার পণ্য অথবা সেবাসমূহ কীভাবে গ্রাহক পর্যন্ত পৌঁছাচ্ছেন? 

অর্ডার কীভাবে নিচ্ছেন – খুচরা সরাসরি (মেইল অর্ডার, ওয়েব সাইট অর্ডার, ক্যাটালগ)?  

নাকি পাইকারি, আপনার নিজস্ব সেলস সিস্টেম , এজেন্ট, স্বাধীন প্রতিনিধি, অথবা সেলস কমিশন দেওয়ার  মাধ্যমে?

১৮/ বিক্রয় পরিকল্পনা (Sales projection)

এখন পণ্য, সেবা, গ্রাহক, বাজার (Market) এবং বাজারজাতকরন (marketing) পরিকল্পনা বিস্তারিত বর্ণনা করুন। আপনার এই পরিকল্পনার সাথে কিছু নাম্বার যুক্ত করার এটাই উপযুক্ত সময়। মাসভিত্তিক সেলস অনুমান করে একটি স্প্রেডশিট তৈরি করুন। আপনার ভবিষ্যৎ অনুমান অবশ্যই হওয়া চাই অতীতের বিক্রয়ের ইতিহাস, বাজারজাতকরণ কৌশল, বাজার নিয়ে পর্যালোচনা এবং সম্ভব হলে ইন্ডাস্ট্রির তথ্য উপাত্তের উপর। 

আপনি দুই ধরণের অনুমান করতে পারেন। প্রথমত, সবচেয়ে উত্তম ধারণা যা আপনি প্রত্যাশা করছেন এবং সর্বনিম্ন খারাপ অবস্থা যা আপনি আত্মবিশ্বাসের সাথে সমাধান করতে পারবেন। আপনার প্রস্তুতকৃত সেলস প্রজেকশন তৈরির সময় করা গবেষণাগুলো নোট করে রাখতে ভুলবেন না। 

কার্যক্রম পরিকল্পনা

দৈনিক ব্যবসায়িক কার্যক্রমগুলো বর্ণনা করুন, তার স্থান, সরঞ্জামাদি, কর্মচারী, প্রক্রিয়া এবং পারিপার্শ্বিক পরিবেশ।

১৯/ উৎপাদন কৌশল

কীভাবে এবং কোথায় আপনার পণ্য বা সেবাগুলো উৎপাদিত হয়?

নিচের পদ্ধতিগুলো বর্ণনা করুনঃ

  • উৎপাদন কৌশল এবং ব্যয়
  • গুনগত মান নিয়ন্ত্রণ
  • গ্রাহক সেবা
  • পণ্য প্যাকেজিং  নিয়ন্ত্রণ
  • পণ্য উন্নয়ন

২০/ স্থান নির্বাচন 

পণ্য উৎপাদনের  স্থান কেমন মানের হওয়া উচিৎ? আপনার স্থানটি বর্ণনা করুন।

  • কোন জায়গা বেছে নিচ্ছেন? কেন? 
  • ভবনের ধরণ – পাকা, কাঁচা-পাকা, ইনডাসট্রিয়াল? 

এই সুযোগ-সুবিধাগুলো আছে? 

  • বিদ্যুৎ 
  • পানি 
  • গ্যাস

মাল সরবরাহের জন্য বা যান চলাচলের জন্য কি আপনার স্থানটি সুবিধাজনক? 

২১/ নির্মাণ বাজেট

কোনো কোম্পানিরই উচিৎ নয় প্রথমেই সমস্ত মূলধন নির্মাণ কাজে বিনিয়োগ করা। তবে নির্মাণ পরিকল্পনা,  খরচ, এবং প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি ক্রয় আপনার পরিকল্পনার বিশাল অংশ হতে পারে।

২২/ ব্যয়/খরচ

আপনার বেতন, ভাড়া, তদারকি, ইন্সুরেন্স, এবং প্রাথমিক নকশা তৈরি বাবদ খরচসমূহ বরাদ্দ করুন। এই পরিমাণটা আপনার অর্থনৈতিক খরচের অন্তর্ভুক্ত হবে।

২৩/ আইনী অনুমোদন 

  • লাইসেন্স এবং চুক্তিপত্র 
  • সরকারী বিভিন্ন সংস্থার কাছ  থেকে নেওয়া অনুমতি 
  • স্বাস্থ্যবিধি এবং কর্মস্থান নীতিমালা
  • পেশা বা ইন্ডাস্ট্রি ব্যবস্থাপনার বিশেষ নিয়ম
  • জোনিং বা বিল্ডিং কোড কাগজ
  • ইন্সুরেন্স 
  • ট্রেডমার্ক, কপিরাইট অথবা প্যাটেন্টস
trade licence

২৪/ কর্মচারীবৃন্দ

  • চাকরিজীবি সংখ্যা
  • কর্মীদের ধরণ (দক্ষ, অদক্ষ এবং পেশাদার)
  • কোথায় এবং কীভাবে আপনি উপযুক্ত কর্মচারী নির্বাচন করবেন?
  • নিয়োজিত কর্মচারীবৃন্দের যোগ্যতা
  • বেতন পদ্ধতি 
  • প্রশিক্ষণ পদ্ধতি এবং চাহিদা
  • কে কোন কাজ করবে?
  • কর্মচারীদের জন্য কাজের বর্ণনা কি আপনি খসড়া করে রেখেছেন? যদি না থাকে তাহলে এখুনি লিখে রাখুন।
  • বিশেষ কাজের ক্ষেত্রে আপনি নিয়মিত কর্মচারীর বাহিরেও অতিরিক্ত চুক্তিবদ্ধ কর্মী নিয়োগ দিতে পারেন (অস্থায়ীভাবে)।

২৫/ প্রোডাক্ট ইনভেন্টরি

  • কোন ধরণের প্রোডাক্ট ইনভেনটরিতে রাখবেন আপনি – কাঁচামাল, সরবরাহকৃত, প্রস্তুতকৃত পণ্য?
  • স্টককৃত পণ্যের গড় মূল্য (মোট বিনিয়োগ কেমন?) 
  • একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিক্রয়ের হার কত?
  • উপলক্ষ কেন্দ্রিক বিক্রয় – কোন সময়ে পণ্য বিক্রি বেশি হবে? সেই সময়ে যথেষ্ট স্টক থাকবে তো? 
  • পণ্য উৎপাদন থেকে সাজানো পর্যন্ত মোট সময় কেমন?
  • পণ্যের মেয়াদ কত দিন থাকবে? 
Product Inventory

২৬/ মাল সরবরাহকারী

কাঁচামাল  সরবরাহকারীর ক্ষেত্রে লিখে রাখুন –  

  • নাম এবং ঠিকানা
  • পণ্যের সংখ্যা এবং ধরণ
  • ক্রেডিট এবং সরবরাহ নীতি
  • পূর্ব-ইতিহাস এবং নির্ভরযোগ্যতা

-সমস্যাপূর্ণ পণ্য (যেমন, ফেরতযোগ্য পণ্য) ব্যবস্থাপনায় আপনার কি একের অধিক সরবরাহকারী আছেন?

-আপনি কি তাৎক্ষণিক বা স্বল্পমেয়াদী সময়ের মধ্যে পণ্য সরবরাহ প্রত্যাশা করেন বা সে ব্যবস্থা রেখেছেন?

-সরবরাহমূল্য কি নির্দিষ্ট নাকি পরিবর্তিত? যদি পরিবর্তিত হয় তাহলে কীভাবে মূল্য  পরিবর্তন হবে ?

২৭/ ক্রেডিট / বাকিতে বিক্রির নীতি

  • আপনি কি বাকিতে বিক্রির  চিন্তা করছেন?
  • আপনার কি আসলেই বাকিতে বিক্রি  করা প্রয়োজন? এটা কি আপনার ইন্ডাস্ট্রির ইচ্ছাধীন নাকি গ্রাহকদের পছন্দানুসারে?
  • যদি হ্যাঁ হয় তাহলে, কে কি পরিমান বাকি  পাবে তার নীতিমালা কি?
  • নতুন আবেদনকারীদের মধ্যে যোগ্য ব্যক্তিকে কীভাবে যাচাই করবেন?
  •  কি ধরণের চুক্তি আপনি গ্রাহকে প্রস্তাব করবেন; যেমন, কি পরিমান বাকি  নেবে এবং কখন জমা দেবে?
  • বাকি টাকা ফেরত  দিতে উৎসাহিত করে কোনো ছাড় দেবেন?
  • আপনি কি জানেন বাকিতে বিক্রি  কি পরিমাণ ফিনানশিয়াল কস্ট বয়ে আনবে, অর্থাৎ মূলধনের ওপরে যে চাপ ফেলবে সেটা কত  ? সেটা কি আপনার দ্রব্যমূল্যের অন্তর্ভুক্ত করেছেন?

২৮/ বাকিতে মাল বিক্রয়  (Accounts receivable)

বাকিতে মাল সরবরাহ করা, গ্রাহককে এক প্রকার ঋণ প্রদানের মতই। সেক্ষেত্রে আপনার পাওনা গ্রহণের একটা সময়সীমা নির্ধারণ করুন। যদি আপনি ক্রেডিটের মেয়াদ বাড়াতেই হয়, তাহলে তার একটি হিসাব রাখুন। এটি গ্রাহকদেরকে ক্রেডিট প্রদানে কি পরিমাণ টাকা আটকে আছে তা দেখতে সাহায্য করবে।

  মোট বর্তমান ৩০ দিন ৬০ দিন ৯০ দিন
একাউন্টস রিসিভেবলস          
পার্টি ক          
পার্টি খ          

২৯/ বাকিতে মাল ক্রয় (Accounts payable)

বাকিতে মাল ক্রয়, সরবরাহকারীদের নিকট এক প্রকার ঋণ, যা পরিশোধ করার একটি সময়সীমা নির্ধারণ করা উচিৎ। এটি কখন এবং কাকে আপনি পরিশোধ করবেন তা পরিকল্পনা করতে সাহায্য করবে। আপনি যদি খুব তাড়াতাড়ি বাকি পরিশোধ করেন তাতে আপনার নগদ অর্থ হ্রাস পাবে, আবার আপনি দেরি করে বাকি পরিশোধ করলে সরবরাহকারী থেকে ছাড়ের (discount)  সুযোগ হারাবেন এবং সেটা আপনার ক্রেডিট নষ্ট করে দিতে পারে। যদি আপনি মনে করে দেরি করে বাকি পরিশোধ করলে জরিমানা দিতে হবে তাহলে মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার আগেই সাপ্লাইয়ারের  সাথে যোগাযোগ করুন।

আপনার প্রস্তাবিত বিক্রয় অফারে কি ছাড় আছে?

গৃহীত (বাকিতে ক্রয়)  অর্থের সময়সীমা নিম্নরুপ।

  মোট বর্তমান ৩০ দিন ৬০ দিন ৯০ দিন ৯০ দিনের বেশি
প্রদেয় অর্থের মেয়াদ            
সাপ্লাইয়ার ক            
সাপ্লাইয়ার খ            
baki

৩০/ অফিস ব্যবস্থাপনা 

দিনের পর দিন কে আপনার ব্যাবসা আঞ্জাম দেবে? এই মানুষটির কোন ধরণের অভিজ্ঞতা লাগবে? তার তুলনামূলক  বিশেষত্ব বা বৈচিত্র্য কি? এই মানুষটির প্রস্থানে বা ব্যাবসা পরিচালনায় অক্ষম হয়ে পড়লে কীভাবে ব্যাবসা চালিয়ে যাবেন সেই পরিকল্পনা করে রেখেছেন কি?

যদি আপনার দশ জনের বেশি কর্মচারী থাকে তাহলে আপনি একটি সাংগঠনিক চার্ট তৈরি করুন। সেখানে থাকবে ধারাবাহিক কার্যক্রম এবং কার জব ডেসক্রিপশন এবং মৌলিক দায়িত্ব কী কী।

প্রধান কর্মচারীদের পদ বা পেশাগত অবস্থান বর্ণনা করুন। যদি আপনি ঋণ নিতে চান বা বিনিয়োগকারী খুঁজে থাকেন তাহলে মালিক এবং প্রধান কর্মকর্তাবৃন্দের জীবন বৃত্তান্তও অন্তর্ভুক্ত করুন।

৩১/  উপদেষ্টা নিয়োগ

নিচের লিস্টগুলো অনুসরণ করুনঃ 

  • ডিরেক্টর বোর্ড (প্রয়োজন সাপেক্ষে)
  • আইনী উপদেষ্টা
  • অর্থনৈতিক উপদেষ্টা 
  • ব্যাংকার
  • ব্যাবসা পরামর্শদাতা (প্রয়োজন সাপেক্ষে)
  • দিক নির্দেশক 

৩২/ প্রারম্ভিক ব্যয় এবং মূলধন

আপনি ব্যাবসা কার্যক্রম শুরু করার আগে আপনার অনেক খরচ। প্রথমেই এসব খরচ নির্ভুলভাবে নির্ণয় করা গুরুত্বপূর্ণ। তারপর পরিকল্পনা করতে হবে কোথায় আপনি পর্যাপ্ত মূলধন পাবেন। এটি একটি গবেষণাধর্মী কাজ। আপনি যত বেশি নির্ভুলভাবে গবেষণা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবেন, তত বেশি গুরুত্বপূর্ণ খরচ বাদ পড়ার সম্ভাবনা কমে যাবে।

এমনকি সর্বোত্তম গবেষণা করার পরেও, একটি নতুন ব্যাবসা শুরু করার খরচ ধারণার চেয়েও বেশি হয়। অতিরিক্ত খরচ সীমার মধ্যে রাখতে দুটি পদ্ধতি আছে। প্রথম পদ্ধতি অনুসারে, আপনি প্রতিটি দ্রব্যের বাজেট থেকে কিছু অতিরিক্ত পরিমাণ  খরচ আলাদাভাবে রেখে দেবেন। কিন্তু এই পদ্ধতিতে আপনার বাজেটের খসড়া পরিকল্পনা নির্ভুল হয় না। দ্বিতীয় পদ্ধতি হল, আপনি অতিরিক্ত যে খরচটি আলাদাভাবে রেখে দেবেন তা একটি সম্ভাব্য খরচের আওতাভুক্ত করবেন। এটিই বাস্তবসম্মত এবং নির্ভুল পদ্ধতি। 

সম্ভাব্য অতিরিক্ত খরচের বাজেট কেমন রাখা উচিৎ সে সম্পর্কে ধারণা নিতে তাদের সাথে কথা বলুন যারা একই ধরণের ব্যাবসা করেছিলেন। যদি এ সম্পর্কে আপনি কোন ভাল ধারণা না পান, তাহলে আমরা বলব আপনি সম্ভাব্য অতিরিক্ত খরচটি মোট প্রারম্ভিক খরচের নূন্যতম শতকরা ২০ ভাগ রাখুন। অর্থাৎ মোট বাজেট ১০০ হলে, সম্ভাব্য অতিরিক্ত খরচ রাখুন ২০। 

আপনার গবেষণা এবং কীভাবে আপনি সম্ভাব্য অতিরিক্ত খরচের মধ্যে থাকতে পারবেন, তা ব্যাখ্যা করুন। যদি ঋণ নেওয়া লাগে তাহলে তার  পরিমাণ, শর্ত, মেয়াদ এবং উৎস দিন। এটাও ব্যাখ্যা করুন যে, প্রত্যেক বিনিয়োগকারী কি পরিমাণ বিনিয়োগ করবে এবং প্রত্যেকে ব্যবসায়ের শতকরা কত ভাগ মালিকানা পাবে।

অর্থনৈতিক পরিকল্পনা

অর্থনৈতিক পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে সম্ভাব্য অর্থাৎ প্রজেক্টেড  বারো মাসী লাভ-লোকসানের হিসাব, চার বছর মেয়াদী লাভ-লোকসান, ক্যাশ ফ্লো (cash flow),  ব্যালান্স শীট (balanced sheet), ব্রেক ইভেন (break-even calculation)। এই উপাদানগুলো আপনার কোম্পানির ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক পরিকল্পনা নির্ধারণ করতে সাহায্য করে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, এই পদ্ধতিগুলো চিন্তার মাধ্যমে আপনার কোম্পানির অর্থনৈতিক কাজগুলো গভীর থেকে গভীরতমভাবে সমৃদ্ধ করবে।

৩৩/ বারো মাসী সম্ভাব্য লাভ-লোকসান হিসাব

অনেক ব্যবসায়ী মালিক তাদের পরিকল্পনার মূল কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে বারো মাসী লাভ-লোকসানের সম্ভাব্য হিসাব চিন্তা করেন। এই পদ্ধতিতে আপনি সবগুলো হিসাব সংখ্যাতাত্ত্বিকভাবে রাখতে পারেন। এটিই আপনার লাভ এবং সফলতার অন্যতম উপায়।

আপনার সম্ভাব্য বিক্রয় আসবে ভবিষ্যৎ বিক্রয় পরিকল্পনা থেকে যেখানে থাকবে মাসভিত্তিক সম্ভাব্য বিক্রয়, বিক্রয় দ্রব্য মূল্য, খরচ এবং লাভের বারো মাসী হিসাব।

কোম্পানির আয় এবং ব্যয় নির্ধারণ করার জন্য যে বড় ধরণের বাজেট  পরিকল্পনা করা হয়, তা থেকেই সম্ভাব্য লাভ চিন্তা করা উচিৎ। আপনার ভবিষ্যৎ ধারণা এবং পর্যালোচনাগুলো যত্নেরর সাথে  রাখুন যেন পরবর্তীতে প্রয়োজন সাপেক্ষে তা ব্যাখ্যা করতে পারেন, এবং যেন পুনরায় পিছনে ফিরে দেখার সময় আপনি আপনার তথ্য উৎসগুলো খুঁজে পান।

৩৪/ চার বছর মেয়াদী সম্ভাব্য লাভ হিসাব

বারো মাসী সম্ভাব্য পরিকল্পনা হল অর্থনৈতিক পরিকল্পনার হৃদপিণ্ডের মত। চার বছর মেয়াদী সম্ভাব্য লাভের হিসাব তাদের জন্য, যারা তাদের ব্যাবসা প্রথম বছরের পরে আরো চিন্তা করতে চান।

অবশ্যই প্রথম বছরের পরেও ভবিষ্যতের মৌলিক সম্ভাবনা গুলো নোট করে করে রাখবেন। প্রথম বছরের পরে কোন ধরণের বিশাল পরিবর্তন আসতে পারে তা আগেই ধারণা করে রাখুন।

৩৫/ সম্ভাব্য নগদ প্রবাহ (Projected cash flow)

যদি সম্ভাব্য লাভকে ব্যাবসা পরিকল্পনার হৃদপিণ্ডের সাথে তুলনা করা যায়, তাহলে সম্ভাব্য নগদ প্রবাহ হল ব্যাবসা পরিকল্পনার রক্তের মত। সঠিক সময়ে বিল পরিশোধ করতে না পারলে ব্যাবসা অনিবার্যভাবে ব্যর্থ হবে। ব্যবসার প্রতিটি অংশই গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু নগদ অর্থ ছাড়া বাকি সবকিছুই অর্থহীন।

ক্যাশ ফ্লো হিসাব  রাখার প্রধান উদ্দেশ্য হল ব্যাবসা শুরুর আগের ব্যয়, ব্যাবসা শুরুর দিকের খরচ, অপারেশনস কস্ট, এবং সঞ্চয়ের জন্য কি পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন হতে পারে তা পরিকল্পনা করা। আপনার উচিৎ হবে এই ডকুমেন্ট  নিয়মিত আপডেট করা। এটি আবহাওয়া পূর্বাভাসের মতো আপনাকে ব্যবসার অবস্থা সম্পর্কে ওয়াকিফহাল রাখবে।   স্বল্প সময়ে সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে কখন  খরচ কমাতে হবে  অথবা কখন ঋণ করে হলেও টাকা ম্যানেজ করতে হবে। এই স্প্রেডশিট  তৈরি করার কোন বিশেষ কৌশল নেই। শুধুমাত্র আপনার খরচের খাতগুলো অগ্রিম হিসেব করা।

প্রতিটি দ্রব্যের ক্ষেত্রে ঠিক কখন আপনি বিক্রয়লব্ধ নগদ অর্থ পেতে চান তা নির্ধারণ করুন। অথবা ঠিক কখন আপনি খরচের দায় শোধ করতে চেক লিখতে হবে  তা নির্ধারণ করুন।

আপনার ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা নিয়মিত তদারকি করা উচিৎ। এটা  নগদ প্রবাহের  সরাসরি  অংশ না হলেও  নগদ প্রবাহের উপরে গভীর প্রভাব ফেলে।

আপনার কাজের মূলধন পর্যাপ্ত আছে কিনা এটা ক্যাশ ফ্লো ফাইল থেকে বোঝা যাবে । যদি আপনার  ক্যাশ ফ্লো ডকুমেন্টে নগদ অর্থ মাইনাসে চলে আসে, তাহলে আপনার প্রারম্ভিক মূলধন আরো বাড়ানো প্রয়োজন। এই পরিকল্পনা তাই  কখন এবং কী  পরিমাণ ঋণের প্রয়োজন হবে তার একটি খসড়া ধারণা দেবে।

বিজনেস প্ল্যানিং এর এই অংশে আপনার ব্যবসায়িক ধারণাগুলো ব্যাখ্যা করুন, বিশেষ করে যেগুলো নগদ প্রবাহ এবং সম্ভাব্য লাভ-লোকসানের মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টি করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনি প্রথম মাসে বিক্রয় করেন, তাহলে ঠিক কখন আপনি মূলধন তোলেন? কখন আপনি সরঞ্জামাদি বা কাঁচামাল কেনেন, আপনি কি অগ্রিম টাকা দেন, নাকি ক্রয়ের সময় দেন, অথবা অনেক পরে বিল পরিশোধ করেন? এটি নগদ প্রবাহে কীভাবে প্রভাব সৃষ্টি করে?

কিছু খরচ কি অগ্রিম পরিশোধ করা সম্ভব? কখন?

সেখানে কি কোনো  অনিয়মিত খরচ আছে, যেমন ইনকাম ট্যাক্স যাতে আয়ের এক-চতুর্থাংশ ট্যাক্স দিতে হয় , OpEx বা অপারেশন কস্ট  এবং মেরামতজনিত খরচ কিংবা বিভিন্ন উপলক্ষে ব্যয়, তা কি বাজেটের অন্তর্ভুক্ত হওয়া উচিৎ? 

এছাড়াও এই বিষয়গুলো নগদ প্রবাহের অন্তর্ভুক্ত করুন। যেমন ঋণ পরিশোধ; সরঞ্জামাদি ক্রয়; এবং মালিকের ব্যক্তিগত খরচ জনিত বকেয়া, যা সাধারণ লাভ বা লোকসানের সাথে জড়িত নয়, কিন্তু তা নগদ অর্থ হ্রাস করে।

এবং অবশ্যই ব্যবহার্য জিনিসের ডেপ্রিসিয়েশন খরচ বা সম্পদ অবক্ষয় নগদ প্রবাহের অন্তর্ভুক্ত নয়।

৩৬/ দৈনিক ব্যালেন্স শীট  (Balance sheet) খোলা

ব্যালেন্স শিট  হলো যে কোনো ব্যাবসায়ের একটি মৌলিক জরিপ যা অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা এবং তথ্য প্রকাশ করে থাকে। এর মাধ্যমে দেখা যায় কোম্পানির কোন গুরুত্বপূর্ণ দ্রব্যগুলো সম্পদ হিসেবে বিবেচিত এবং কোনগুলো ঋণ বা দায়বদ্ধতা হিসেবে বিবেচ্য। যখন ঋণসমূহ সম্পদ থেকে বাদ দেয়া হয় তখন অবশিষ্ট অংশ আর্থিক মালিকানা তৈরি করে।

ব্যাবসায়ের শুরুর দিন থেকেই একটি প্রারম্ভিক ব্যয় এবং মূলধনের স্প্রেডশিট ব্যবহার করুন। তারপর সমন্বর হিসাব খোলার শুরু দিন থেকেই হিসাব বইয়ের ব্যালান্স বিস্তারিতভাবে রাখুন। 

কিছু মানুষ বছর শেষে কোম্পানির অর্থনৈতিক অবস্থান বুঝতে  সম্ভাব্য আয়-ব্যায়ের  হিসাব যোগ করতে চায় এই স্প্রেডশিটে। এটা বিশেষ ভাবে তখন উপকারী যখন আপনি বিনিয়োগকারীর কাছে যাবেন।

৩৭/ ব্রেক-ইভেন এনালাইসিস 

ব্রেক-ইভেন এনালাইসিস (break-even analysis) হলো কত টাকা বিক্রি করতে পারলে কোম্পানি চালানোর খরচ উঠে আসবে।   অংকের হিসেবে এটি আয়-ব্যয় এর একটি  সমচ্ছেদ বিন্দু, যার চেয়ে কম বিক্রি হলে কোম্পানির লোকসান হবে এবং বেশি হলে কোম্পানির লাভ হবে।

Break even analysis

গানিতিক ফর্মূলায় প্রকাশ করতে গেলে, ব্রেক ইভেন বিক্রয় নিম্নররূপ – 

ব্রেক ইভেন বিক্রয়= ফিক্সড খরচ / (গড় পণ্যমূল্য – ভ্যারিয়েবল খরচ)

পরিশেষে, এই ব্লগে দেওয়া প্রশ্নগুলোর উত্তর দেওয়ার জন্য আপনাকে কিছু ব্যাবসা সংক্রান্ত বই পড়তে হতে পারে। অথবা আপনি এই তথ্যগুলো ইন্টারনেটে খুঁজলেও পাবেন। কিন্তু মূলত যে কাজটি করতে হবে তা হচ্ছে চিন্তা ভাবনা এবং হিসাব।  এই প্রশ্নগুলো আপনার চিন্তাতে সাহায্য করবে। কোনো অংশ যেন আপনার নজর এড়িয়ে না যায় সেটা নিশ্চিত করবে। 

আপনার ব্যাবসা উদ্যোগ সফল হোক আমরা এই কামনা করি।