আজকাল ক্রেতারা খুব স্মার্ট, কোনো পণ্য কি কেনার আগে কিংবা সেবা নেয়ার আগে সে বিষয়ে নিজেরাই খুব ভালো রিসার্চ করে নিতে পারেন। ঠিক এমন ভাবে বিক্রেতা হিসেবে যদি নতুন প্রোডাক্ট কিংবা সেবা মার্কেটে আনতে যান তাহলে ক্রেতা কারা, তাদের চাহিদা কি, মার্কেটে সমস্যা কি, সমাধান কে কিভাবে করছে, প্রোডাক্ট সোর্সিং কোথা থেকে করছে, কম্পিটিটর কারা, কম্পিটিটর কি অফার করছে, কোন ডিস্ট্রিউবিউশন চ্যানেলে কাজ করছে – ইত্যাদি রিসার্চ করা আপনার ব্যবসার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও ব্যাবসা চলমান অবস্থায়, এক্সপেক্টেড রেজাল্ট থেকে কোন কিছুর কমতি দেখলে মার্কেট রিসার্চ করা হয়ে থাকে। 

আপনি যদি নতুন উদ্যোক্তা হয়ে থাকেন অথবা মার্কেট রিসার্চ ছাড়াই ব্যাবসা শুরু করে দিয়েছেন অথবা মার্কেট রিসার্চ করবেন ভাবছেন এরকম অবস্থায় থাকেন তবে এই লেখাটি আপনার জন্য সম্পূর্ণ একটি গাইডলাইন হবে। আমরা এখানে সবার জন্য উপযোগী করে মার্কেট রিসার্চ এর বেসিকটুকু দেয়া চেষ্টা করবো যেন ব্লগটি পড়ে সহজেই কিছু প্রয়োজনীয় জ্ঞান রপ্ত করতে পারেন ইনশা’আল্লাহ। 

১। মার্কেট রিসার্চ কী? 

মার্কেট রিসার্চ হলো সম্ভাব্য কাস্টমারের উপর করা একটি রিসার্চ যেখানে কয়েকটি ধাপের মাধ্যমে মার্কেটে নতুন প্রোডাক্ট কিংবা সেবার কার্যকারিতা যাচাই করা হয়। মার্কেট রিসার্চ একটি নির্দিষ্ট টার্গেট অডিয়েন্সের উপর করা হয় যেখানে এই গ্রুপটা থেকে প্রোডাক্ট কিংবা সেবা সম্পর্কিত ফিডব্যাক নেয়া হয়। এই রিসার্চ মূলত পণ্য ডিজাইন করতে, ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা উন্নত করতে এবং মার্কেটিং স্ট্র‍্যাটেজি তৈরি করতে এই তথ্য ব্যবহার করা হয়। যা টার্গেট অডিয়েন্সকে ক্রেতায় রূপান্তর করতে সাহায্য করে। 

মার্কেট রিসার্চাররা সাধারণত একটি মার্কেটের বিভিন্ন দিক নিয়ে রিসার্চ করে, যার ফলে উপযুক্ত ফলাফল পেতে কয়েক সপ্তাহ থেকে মাস পর্যন্ত লাগতে পারে। অনেক সময় কোন নিশ সেগমেন্ট নিয়ে রিসার্চ করার মাধ্যমেও পূর্ণাঙ্গ ধারণা পাবেন যেমন, কাস্টমার কোন ব্র্যান্ডের হ্যান্ডসেট ব্যবহার করছে, কোন মাধ্যমে অর্ডার দেয়, কোন প্ল্যাটফর্মে তাদের আনাগোনা – ইত্যাদি। রিসার্চের রেজাল্টের উপর ভিত্তি করে ওই সেগমেন্টে ভ্যালু দিতে হবে যা আপনার কম্পিটিটররা দিচ্ছে না।
রিসার্চ দেখতে যেরকম হয় একটা উদাহরণ দিচ্ছি। যেকোন রিসার্চ শুরু করতে গেলে প্রথমে একটি ক্লেইম দাঁড় করাতে হয় যেটাকে একাডেমিক্যালি নাল হাইপোথেসিস বলে। আবার, এই ক্লেইমের বিপরীতে আরেকটি ক্লেইম করতে হয় যেটাকে অলটারনেটিভ হাইপোথেসিস বলে। বিষয়টা বেশ জটিল মনে হচ্ছে তাই না? সহজ করে বলছি,  আপনি ক্লেইম করলেন, কাস্টমাররা আইফোনের মাধ্যমে ওয়েবসাইটে বেশি অর্ডার করে যেটা হল নাল হাইপোথেসিস। এই ক্লেইমের বিপরীতে বললেন, কাস্টমার অন্য হ্যান্ডসেটের মাধ্যমে বেশি অর্ডার দেয়। এই যে আপনি একটি ক্লেইম দাঁড় করালেন এটার রেজাল্ট দেখার জন্যই মার্কেট রিসার্চ করা হয়। অনেক সময় এটা ব্রোড টপিকেও করা হতে পারে। ধরণ ও পরিধি ভেদে সেটা হতে পারে ৫০ জনের উপর কিংবা ৫ হাজার জনের উপর। 


মার্কেট রিসার্চের ক্ষেত্রে ২ টি বিষয় মাথায় রাখা প্রয়োজন –

১. আপনি যে বিষয়ে রিসার্চ করছেন, কম্পিটিটররও একই বিষয়ে রিসার্চ করে ফেলেছে এবং তাদের কাস্টমার বেইজ আছে। সেক্ষেত্রে, গভীর মার্কেট রিসার্চ করা প্রয়োজন।

২. আপনার কাস্টমার পুরো মার্কেটের সবাইকে রিপ্রেজেন্ট করবে না। তারা বাজারের সেই অংশের মনোভাবের প্রতিনিধিত্ব করে যা ইতিমধ্যেই আপনার ব্র্যান্ডের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছে।

মার্কেট রিসার্চ সার্ভিস মার্কেটে খুব দ্রুত বাড়ছে যার মাধ্যমে বোঝা যায় মার্কেট রিসার্চের প্রতি মানুষ গুরুত্ব দেওয়া শুরু করেছে যেহেতু এখন ২০২২ সালের প্রায় শেষ! মার্কেটটি  ২০২১ সাল মোটামুটি $75 বিলিয়ন থেকে ২০২৫ সালে ৫% চক্রবৃদ্ধি হারে $90.79 বিলিয়ন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

২। মার্কেট রিসার্চ কেন গুরুত্বপূর্ণ?

মার্কেট রিসার্চের মাধ্যমে আপনার বুঝতে সুবিধা হবে কাস্টমার কোথায় আছে। আপনি যখন কাস্টমারের চাহিদা, সমস্যা, কেমন সমাধান চাচ্ছে ইত্যাদি বুঝতে পারবেন তখন আপনার জন্য পণ্য বা সার্ভিসটি সাজাতে সহজ হবে তুলনামূলক ভাবে। মার্কেট রিসার্চের মাধ্যমে বিভিন্ন বিষয়ের উপর আলোকপাত করা যায়। যেমন-

  • আপনার ক্রেতারা কোথায় আছে। 
  • আপনার টার্গেট কাস্টমাররা কেনাকাটার জন্য প্রতিযোগীদের কোন বিশেষ দিকটায় গুরুত্ব দেয়।
  • বর্তমান মার্কেটে আপনার টার্গেট কাস্টমারের কাছে কোন বিষয়টি ট্রেন্ডিং এ আছে।
  • আপনার মার্কেটটি কে তৈরী করেছে এবং তাদের চ্যালেঞ্জ গুলো কি ছিলো?
  • আপনার টার্গেট অডিয়েন্সকে কোন বিষয়টি আগ্রহী করে তোলে কেনাকাটার জন্য।
  • আপনি যে ব্যবসায়িক উদ্যোগে বিনিয়োগ করছেন, তার চাহিদা আছে কিনা।
  • কোনো পণ্য বা সার্ভিসের দাম নির্ধারণের পর কাস্টমারের মনোভাব যাচাই করা।

মূলত, মার্কেট রিসার্চ আপনাকে কাস্টমারের বিষয়ে সকল তথ্য পেতে সাহায্য করবে যার মাধ্যমে আপনি আপনার টার্গেট অডিয়েন্সের এটেনশন পেতে পারেন।যার ফলে, আপনি যেকোনো বড় ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন ব্যবসার উন্নতির লক্ষ্যে।যেহেতু আমরা বেসিকটুকু নিয়ে কথা বলছি তাই এখন কিছু পদ্ধতির কথা বলবো যেগুলো মূলত কোন রিসার্চের প্রাথমিক পর্যায়ে করা লাগে।

মার্কেট রিসার্চ

 

প্রাইমারি রিসার্চ     
যখন কোন নতুন সেবা কিংবা প্রোডাক্ট মার্কেটে আনা হয় তখন প্রাথমিক পর্যায়ে ব্যবসায়ী অথবা উদ্যোক্তা সরেজমিনে মার্কেটে উপস্থিত থেকে ডাটা সংগ্রহ করে। এটা হচ্ছে মাঠ পর্যায়ের প্রাথমিক ডাটা কালেকশন।  

প্রাইমারি রিসার্চের প্রাপ্ত ডাটাশীট থেকে দুই ধরণের রেজাল্ট পাওয়া যায় –
এক্সপ্লোরেটরি ইনফরমেশনঃ প্রাইমারি রিসার্চের মাধ্যমে এমন কিছু সমস্যা খুঁজে বের করা হয় যেগুলো পূর্বে কখনো বের করা হয়নি। 

কনক্লুসিভ ইনফরমেশনঃ প্রাথমিক পর্যায়ের প্রাপ্ত ডাটাগুলো নিয়ে পরবর্তীতে তুলনামূলক বিশ্লেষণ করে মার্কেটের ট্রেন্ড সম্পর্কে ধারণা নেয়া হয়। 

একটি উদাহরণের মাধ্যমে বিষয়টা সহজ হবে।  “Milvik Bangladesh” থেকে দলবদ্ধ ভাবে কিছু তরুণকে একটি ব্যস্ততম সড়কের মোড়ে দেখা যায়। তাদের সামনে দিয়ে যারাই আসা যাওয়া করতো সবাইকে তারা দাঁড় করিয়ে কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতো। পরে দেখলাম তারা নতুন একটি সার্ভিস নিয়ে এসেছে। এই সার্ভিস কি আদৌ কোন সমস্যার সমাধান করবে কিনা, এটার কি কোন চাহিদা আছে কিনা – ইত্যাদি প্রশ্ন করে তথ্যাদি সংগ্রহ করছে। এটাই হল প্রাইমারি রিসার্চ।

এছাড়াও আছে ফোকাস গ্রুপ ডিসকাশন, ওয়ান টু ওয়ান ইন্টারভিউ এবং মার্কেট সার্ভে। আমরা পর্যায়ক্রমে এগুলো নিয়ে প্রাথমিক ধারণা দেয়ার চেষ্টা করবো।



মিলভিক বাংলাদেশ এর মাঠপর্যায়ে ডাটা সংগ্রহ


ফোকাস গ্রুপ ডিসকাশন
প্রাইমারি রিসার্চে তুলনামূলক বড় একটি অংশের উপরে রিসার্চ করা হয়। প্রাপ্ত ডাটাশীট থেকে সম্ভাব্য কাস্টমারদের ডেমোগ্রাফিক অর্থাৎ বয়স, পেশা, শিক্ষা, বৈবাহিক অবস্থা, জাতীয়তা – ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে কাস্টমার ছেঁকে অডিয়েন্স সাইজটাকে ছোট করে নিয়ে আসা হয়। এই অডিয়েন্সেদের ছোট ছোট গ্রুপ করে রিসার্চার কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে। তাদের উত্তরগুলো রিসার্চের সুবিধার্থে নথিকরণ করা হয়।
ফোকাস গ্রুপ ডিসকাশন সাধারণত করা হয় যখন কম সময়ের মধ্যে রিসার্চ করে দ্রুত সিধান্তে আসা লাগে।

ওয়ান টু ওয়ান ইন্টারভিউ
এই পর্যায়ে এসে, ফোকাস গ্রুপে অংশগ্রহকারীদের একে অপরের সাথে মুখোমুখি কথোপকথনের ব্যবস্থা করা হয়। রিসার্চ টপিক নিয়ে তারা একে অপরকে জিজ্ঞেস করে। অনেক সময় সময় স্বল্পতার কারণে রিসার্চার সবাইকে উদ্দেশ্য করে কিছু প্রশ্ন ছুড়ে দেয় এবং একসাথে তথ্যাদি সংগ্রহ করে। এতে করে সময় বাঁচে।

সার্ভে
এই টার্মটার মোটামুটি সবাই পরিচিত কারণ সবাই জীবনের কোন না কোন সময়ে সার্ভে নামক ফর্মটি ফিলাপ করেছে, হোক সেটা রেস্টুরেন্টে কিংবা ইন্টারনেটে। সার্ভে করার জন্য সশরীরের উপস্থিত থাকতে হয় না। ইন্টারনেটের কল্যাণে সার্ভে করা সেকেন্ডের ব্যপার। আপনি যেকোন কিছু নিয়ে সার্ভে করতে চাইলে সেটা ইমেইল কিংবা ডিজিটালি কারও কাছে পাঠিয়ে দিতে পারেন। নতুন কিছু বাজারে আনা কিংবা চলমান জিনিসের উন্নতিকরণের উদ্দেশ্যে সার্ভে করা যেতে পারে।
কিছু উদাহরণ দেই তাহলে বোঝাটা সহজ হবে।  যেমন – রেস্টুরেন্টে খাবারের পরে, কোয়ালিটি ঠিক আছে নাকি আরো ভালো করতে হবে সেটা নিয়ে কয়েকটি পাতা ধরিয়ে দেয়া হয়। যাদের রেস্টুরেন্টে যাওয়ার অভ্যাস আছে তারা হয়তো বিষয়টা বুঝতে পারবেন। পাঠাও এর সার্ভিস নেয়া পরে রাইডার হেলমেট দিয়েছে কিনা, রাইডারের রেটিং এসব সম্বলিত কিছু তথ্য দিতে হয় যা তাদের সার্ভিস উন্নতিকরণে সাহায্য করে।   



               

২। সেকেন্ডারি রিসার্চ

সেকেন্ডারি রিসার্চ এর ডাটা নিজে থেকে সংগ্রহ করতে হয় না। যে ডাটাগুলো নিয়ে ইতোমধ্যে কাজ করা হয়ে গেছে কিংবা বিভিন্ন সাইটে এভেইলেবল আছে সেগুলো মূলত সংগ্রহ করা হয় রিসার্চের সুবিধার্থে। 
উদাহরণ স্বরূপ – Google Scholar  এর কথা বলা যেতে পারে। গুগলে আমরা যেভাবে সার্চ করি ঠিক এভাবেই এখান থেকে সার্চ করে বিভিন্ন গবেষণা সম্পর্কে ধারণা নেয়া যেতে পারে। রিসার্চাররা এখানে তাদের রিসার্চ পেপার পাবলিশ করে থাকে। কারও রিসার্চের প্রয়োজনে এই সাইট থেকে ডাটা সংগ্রহ করতে পারবে। এছাড়াও সেলস ডাটা, মার্কেট সাইজ, মার্কেট স্ট্র্যাটেজি, কনটেন্ট, জার্নাল, পরিসংখ্যান – ইত্যাদি এই রিসার্চের অন্তর্ভুক্ত। সেকেন্ডারি রিসার্চ সাধারণত আপনার কম্পিটিটরকে বোঝার জন্য বেশ কার্যকরী। যেসকল সোর্স থেকে সেকেন্ডারি রিসার্চের ডাটা সংগ্রহ করতে পারবেন – 

পাবলিক সোর্স

সেকেন্ডারি রিসার্চের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রাথমিক ধাপ হচ্ছে পাবলিক সোর্স রিসার্চ। উদ্যোক্তাদের কাছে পাবলিক সোর্সের সবচেয়ে কমন একটি ধাপ হচ্ছে সরকারি পরিসংখ্যান। আমেরিকার পাবলিক মার্কেট ডাটার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ২ টি সোর্স হলো, U.S Census Bureau এবং Bureau of labour & statistics.

কমার্শিয়াল সোর্স

এই উৎসগুলো প্রায় বাজার প্রতিবেদনের আকারে আসে, যা Pew , Gartner বা Forrester এর মতো গবেষণা সংস্থা দ্বারা গঠিত হয়।

যেহেতু এই তথ্যগুলো বিতরণযোগ্য, তাই অর্থ খরচ করে ডাউনলোড করতে হয়। 

ইন্টার্নাল/অভ্যন্তরীণ সোর্স

ইন্টার্নাল বা অভ্যন্তরীণ সোর্সের আরো বেশী ক্রেডিট পাওয়া দরকার কারণ এটি মার্কেট রিসার্চে অনেক ভূমিকা রাখে। কারণ এই মার্কেট ডাটাগুলো আপনার কোম্পানির ইতোমধ্যেই রয়েছে। 

গড় বিক্রয় লাভ, রিপিট কাস্টমারের হার এবং অন্যান্য নতুন ও পুরাতন একাউন্টসের ডাটা আপনাকে একটি সিদ্ধান্তে উপনীত করবে যে এই মুহুর্তে আপনার কাস্টমাররা কি চায়?

৩। কোয়ালিটেটিভ রিসার্চ
প্রাইমারি এবং সেকেন্ডারি রিসার্চ এর ডাটা সমন্বিত করে এই ধাপের রিসার্চ করা হয়। এই ডাটাগুলো মূলত সংখ্যা আকারে থাকে না তাই সেটা পরিমাপ করে সিদ্ধান্তে আসা বেশ কঠিন কাজ। এই ধাপে মূলত প্রাপ্ত ডাটাগুলো বিশ্লেষণ করা হয় 
উদাহরণ স্বরূপ – আপনি নতুন ফ্লেভারের জুস বাজারে আনবেন। বাজারে আনার পরে অডিয়েন্সের কি প্রতিক্রিয়া ও নতুন কোন টার্গেট মার্কেট থেকে মানুষ আগ্রহী হচ্ছে কিনা তা দেখা হয়।

৪। কোয়ানটিটেটিভ রিসার্চ  

প্রাইমারি এবং সেকেন্ডারি রিসার্চ এর ডাটা সমন্বিত করে এই ধাপের রিসার্চ করা হয় কিন্ত প্রাপ্ত ডাটাগুলো সংখ্যা আকারে থাকে। এই ডাটাগুলো দেখে মার্কেট সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা পাওয়া যায় এবং রিসার্চে আরও অগ্রসর হওয়া যায়। 

৫। ব্র‍্যান্ড রিসার্চ
ব্র্যান্ড নিয়ে কাস্টমারদের মনোভাব কিরকম তা এখানে দেখা হয়। আপনার ব্রান্ডের কথা কেন মাথায় আসে, ব্রান্ডের লোগো দেখলেই কেন নামটা মনে পড়ে যায় ওগুলো নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। ব্র্যান্ড অ্যাওয়ারনেস, পজিশনিং, ভ্যালু , ব্র্যান্ড কোন টোনে কথা বলে এগুলো নিয়ে জানা হয়। ওয়ান টু ওয়ান ইন্টারভিউ, ফোকাস গ্রুপ ডিসকাশন এবং, সার্ভের মাধ্যমে এটা করা হয়।

উদাহরণ স্বরুপ – গ্রামীনফোন এর কথা চিন্তায় আসলেই সবার প্রথমে মনে হয় ‘সেরা নেটওয়ার্ক’ – এটা তাদের ব্র্যান্ড পজিশনিং।
আবার যদি বলি ব্র্যান্ড কোন টোনে কথা বলে তাহলে হবে ‘চলো বহুদূর’ – এটা তাদের ব্র্যান্ডিং টোন। তারা এই টোনে সবার সাথে কথা বলে। আপনি খেয়াল করলে দেখবেন তাদের প্রতিটি অ্যাডভার্টাইজমেন্টে তারা দেখায় পুরো জাতিকে তারা কানেক্ট করে বহুদূর নিয়ে যাচ্ছে।
বর্তমানে তারা বলছে ‘ইন্টারনেটের দুনিয়া সবার’ – ইন্টারনেটের সহজলভ্যতা ও কল্যাণে আজ অজপাড়াগাঁ এর একজন মানুষ তার ব্যবসার প্রোডাক্ট ছড়িয়ে দিয়েছে দেশজুড়ে।  

৬। কাস্টমার রিসার্চ

কাস্টমার সন্তুষ্টি এর মাধ্যমে কিভাবে আপনার বর্তমান কাস্টমারকে রিপিট কাস্টমারে রূপান্তর করা যায়, কোন বিষয়টি তাদেরকে রিপিট ক্রেতা হতে সহায়তা করবে সে বিষয়ে ধারণা নেয়া হয়।  

৭। কম্পিটিটর রিসার্চ

কম্পিটিটিভ এনালাইসিস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি রিসার্চ কারণ এর মাধ্যমে আপনি মার্কেটের কম্পিটিশন বুঝতে সক্ষম হবেন।
কম্পিটিটর কিভাবে মার্কেটে অপারেট করে বেশি রেসপন্স পাচ্ছে, তারা কি কি ট্যাকটিক অনুসরণ করে ম্যাক্সিমাম আউটপুট নিয়ে আসছে, কেন কাস্টমার তাদের থেকে বেশি কিনছে ইত্যাদি নিয়ে কাজ করা হয়। আপনি বুঝতে পারবেন আপনার ইন্ডাস্ট্রিতে কোন বিষয়টি ভালো কাজ করছে, আপনার টার্গেট অডিয়েন্স কি চাচ্ছে। এগুলোর উপর ভিত্তি করে আপনি স্ট্র্যাটেজিতে পরিবর্তন আনবেন।

৮। প্রোডাক্ট রিসার্চ
প্রোডাক্ট মার্কেট রিসার্চে মূলত দেখা হয় প্রোডাক্টের কোয়ালিটি ঠিক থাকার পরে কাস্টমার কি বলছে। প্রাপ্ত তথ্য ফিউচার প্রোডাক্ট ডেভলপমেন্টের জন্য নথিকরণ করা হয়। যে বিষয়গুলো উপরে গুরুত্ব দেয়া হয় – প্রোডাক্ট ডিজাইন ঠিক আছে কিনা, প্রোডাক্টটি কি কাস্টমারের কোন সমস্যা সমাধান করছে, প্রোডাক্টটি না থাকলে কি কোন কাস্টমারের অসুবিধা হবে, প্রোডাক্টের মার্কেটিং কি কাস্টমারকে কিনতে উদবুদ্ধ করে। 

কিভাবে মার্কেট রিসার্চ করতে হয়?

 ক্রেতার পার্সোনা খুঁজে বের করুন – 

প্রথমেই আপনার ক্রেতা কিভাবে কেনাকাটার সিদ্ধান্ত নিবে এটি বোঝার আগে “আপনার ক্রেতা কারা” এটি বোঝার চেষ্টা করুন। ক্রেতার পার্সোনা বোঝার ক্ষেত্রে এই বিষয় গুলো মাথায় রাখা প্রয়োজন –

বয়স, লিঙ্গ, লোকেশন, জব টাইটেল, ইনকাম – ইত্যাদি। এই বিষয়গুলোর মাধ্যমে আপনি কিভাবে আপনার আসল টার্গেট অডিয়েন্স খুঁজে পাবেন তা বুঝতে পারবেন।

এংগেজমেন্ট এর জন্য একটি নির্দিষ্ট গ্রুপ খুঁজে বের করুন –

এবার যখন আপনি বুঝে গেছেন কারা আপনার ক্রেতা বা টার্গেট অডিয়েন্স তাহলে এখন একটি গ্রুপ গঠন করুন যাদের মধ্যে আপনি রিসার্চটি করবেন। এটি একটি স্যাম্পল টেস্ট হবে আপনার ক্রেতাদের যার মাধ্যমে আপনি তাদের আসল আচরণ এবং চরিত্র সম্পর্কে ধারণা পাবেন, চ্যালেঞ্জ এবং কেনাকাটার অভ্যাস সম্পর্কে বুঝতে পারবেন।
উদাহরণ স্বরুপ – আপনি সিদ্ধান্ত নিলেন নতুন প্রোডাক্টে ডিসকাউন্ট দিলে কাস্টমারের এক্সপেরিমেন্টের হার বেশি। ৪০ জনের উপরে একটি স্যাম্পল বানালেন। রিসার্চের ধাপগুলো অনুসরণ করে কাস্টমার কি আসলেই ডিসকাউন্টে নতুন প্রোডাক্ট কিনে সেটার সংখ্যাগত সত্যতা যাচাই করতে পারবেন।

আপনার মার্কেট রিসার্চের জন্য প্রশ্ন তৈরী করুন – 

মার্কেট রিসার্চের ক্ষেত্রে কি প্রশ্ন করবেন এটা আগে থেকে ঠিক করে রাখলে মার্কেট রিসার্চটি আরো রিসোর্সফুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। মার্কেট সার্ভে করার সময় বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে প্রশ্ন করে মূল উত্তর খুঁজে বের করা হয়। যেমন – মাল্টিপল চয়েস, রেটিং স্কেল, লাইকার্ট স্কেল, ড্রপডাউন, ওপেন এন্ডেড এবং ক্লোজ এন্ডেড। খেয়াল রাখতে হবে প্রশ্নের ক্ষেত্রে কখনোই যেনো উত্তর হ্যাঁ বা না বোধক না হয় এক্ষেত্রে ক্রেতার মনে হতে পারে এটি জোরপূর্বক নেওয়া কোনো সার্ভে। প্রশ্নের ধরণ এমন হতে হবে যাতে টার্গেট অডিয়েন্স নিজে স্বাধীন ভাবে উত্তর দিতে সক্ষম হয়।


                                                         
লাইকার্ট স্কেল

আপনার প্রাথমিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের লিস্ট করুন –

প্রতিদ্বন্দ্বীদের লিস্ট করার ক্ষেত্রে বেশ গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন কারণ তাদের ফোকাস করে আপনার রিসার্চের গুরুত্বপূর্ণ অংশ গঠিত হয়। 

আপনার অনুসন্ধানের সারমর্ম করুন –

আপনার কাছে এবার আপনার রিসার্চের মোটামুটি সকল তথ্য রয়েছে, এবার কাজ হচ্ছে সেটার সারমর্ম তৈরী করে নেওয়া। এই প্রসেসটি সহজ কর‍তে একটি প্রেজেন্টেশন সফটওয়্যার এর মাধ্যমে আপনার প্রতিটা রিসার্চের একটি প্রেজেন্টেশন তৈরী করুন। প্রেজেন্টেশন তৈরীর ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবে – ব্যাকগ্রাউন্ড, অংশগ্রহনকারী, এক্সিকিউটিভ সামারি, সচেতনতা/সতর্কতা, কনসিডারেশন, সিদ্ধান্ত এবং অ্যাকশন প্ল্যান

৪। মার্কেট রিসার্চ টুলস

মনে হচ্ছে না এই পুরো মার্কেট রিসার্চটি যদি একটি টেমপ্লেট আকারে সাজানো থাকতো তাহলে কাজ অনেকটা সহজ হতো? চিন্তা নেই, আপনাদের কাজগুলোকে সহজ করতে মার্কেট রিসার্চের বিভিন্ন টুলস রয়েছে এবং এগুলো একেবারেই ফ্রি! 

Hubpost’s Free Market Research Kit –  

এখানে আপনি একটি এডিটেবল মার্কেট রিসার্চ টেমপ্লেট পাবেন তাও আবার বিনামূল্যে। একই সাথে কিছু দিকনির্দেশনা ও পেয়ে যাবে কিভাবে টেমপ্লেট টি ব্যবহার করতে হবে সেটার।

SWOT Analysis Template
এর মাধ্যমে আপনার কোম্পানির সরাসরি সুযোগ সমূহ, কোন বিষয়গুলো দূর্বলতা হিসেবে কাজ করছে, কোনগুলো পজিটিভ দিক এই বিষয়গুলো বুঝতে পারবেন।

Market Survey Template –  

এর মাধ্যমে আপনি মার্কেট সার্ভের ক্ষেত্রে যে প্রশ্ন গুলো সাজাতে পারেন সেটির একটি ধারণা পাবেন।

৫। মার্কেট রিসার্চের উদাহরণসমূহ

KFC – 

KFC মার্কেটে তাদের মাংসছাড়া প্রোডাক্ট গুলো লঞ্চ করার পূর্বে কিছু সিলেক্টিভ মার্কেটে সেগুলো লঞ্চ করে কাস্টমার চাহিদা বোঝার জন্য। এর জন্য তারা Atlanta ও Georgia এরিয়ার কিছু স্টোর সিলেক্ট করে। এটি খুব সহজ ও ফলপ্রসূ উপায় একটি নতুন প্রোডাক্ট কতটা চাহিদাসম্পন্ন হবে সেটা বোঝার জন্য।

The  Body Shop – 

The Body Shop একটি কসমেটিক ও স্কিন কেয়ার ব্র‍্যান্ড। যারা তাদের রিফিল প্রোগ্রাম শুরুর আগে অনলাইনে একটি ক্যাম্পেইন রিসার্চ করেন যে তাদের এই প্রোগ্রাম অডিয়েন্স পছন্দ করবে কি না। পরবর্তীতে রিসার্চের রেজাল্টে দেখা যায় অডিয়েন্স রিফিল প্রোগ্রাম আইডিয়াটি অনেক পছন্দ করে এবং এই রিসার্চের রেজাল্টের উপর ভিত্তি করে তারা তাদের ৪০০ স্টোরে রিফিল প্রোগ্রাম চালু করে ২০২১ সালে এবং ২০২২ সালে বাকি ৪০০ স্টোরে চালু করে।

মার্কেট রিসার্চ প্রোগ্রাম আপনার কোম্পানির অগ্রগতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রক্রিয়া। যদিও আপনি আপনার অডিয়েন্স সম্পর্কে ধারণা রাখেন তবে মার্কেট রিসার্চ আপনাকে আপনার অডিয়েন্স, মার্কেট, প্রোডাক্ট ও প্রতিদ্বন্দ্বী সম্পর্কে অনেক গভীর ধারণা দিবে যা আপনার বিজনেস স্ট্র‍্যাটেজি সাজাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।